পর্ব ৩: শেষ অধ্যায়: চিরঘুমের আগন্তুক
সূর্যহীন সকাল গ্রামের মানুষ সকালে উঠে দেখে — সূর্য উঠেনি। ঘড়ি বলছে সকাল আটটা, কিন্তু চারপাশে ঘন অন্ধকার। গাছের পাতাগুলো কালো হয়ে গেছে, বাতাসে জ্বলন্ত মোমবাতির গন্ধ।
আগন্তুক হঠাৎ গ্রামের মোড়ের দোকানে দেখা যায় এক আগন্তুক — মাথায় লাল চাদর, চোখ ঢাকা কালো চশমা দিয়ে, আর তার কণ্ঠ যেন ভেসে আসে মাটি ভেদ করে। সে বলে, “আমি এসেছি ওদের ঘুম পাড়াতে…”
ইতিহাসের পাতা খুলে যায় আগন্তুক জানায়, এই কবরস্থান একসময় ছিল এক যজ্ঞস্থল, যেখানে মানুষ বলি দেওয়া হতো। যারা বলি হত, তারা ঘুমায়নি — বরং অপেক্ষা করে এক নির্দিষ্ট সময়ের। আর সেই সময় এখন।
সাদের আত্মার ডাক আগন্তুক হঠাৎ ঘাড় ঘুরিয়ে বলে, “সে এখানে… সাদ এখনও আটকানো…” গ্রামের মাঝখানে একটা কুয়া আছে — সেখান থেকে উঠে আসে সাদ। কিন্তু সে বদলে গেছে — চোখে আলো নেই, পা ছুঁয়ে থাকে না মাটিতে। সে শুধু বলে, “আমার নাম কে নিল?” কবরস্থানের জানালা আগন্তুক গ্রামবাসীকে নিয়ে কবরস্থানের মাঝে পৌঁছে যায়। তারা দেখে, প্রতিটি কবর এখন জানালার মতো — যার ভিতর দিয়ে দেখা যায় আগুন, মৃত্যু, আর নিজস্ব ভয়। এক বৃদ্ধ বলে, “ওটা তো আমার স্ত্রী… মৃত, কিন্তু বেঁচে…”
শেষ শর্ত আগন্তুক বলে, “এটা থামাতে হলে, কারও নাম ফিরিয়ে দিতে হবে। যে নাম নিয়েছে, সে যদি ফেরত না দেয় — পুরো গ্রাম ধ্বংস হয়ে যাবে।”
জুনায়েদের প্রত্যাবর্তন তখনই ছায়া ফুঁড়ে বের হয় জুনায়েদ। তার গলা ছেঁড়া, শরীর অর্ধেক পচা, কিন্তু হাতে সে ধরে আছে সেই পুরনো ক্যামেরা। সে বলে, “আমি দিয়েছিলাম… এখন তুমি দাও…”
নাম ফেরত সাদ ফুঁপিয়ে কাঁদে। সে বলে, “আমি শুধু দেখতে চেয়েছিলাম… বুঝতে পারিনি…” আগন্তুক বলে, “তুমি এখনো মানুষ নও। কিন্তু সিদ্ধান্ত তোমার।” সাদ তার নিজের নাম কবরের ওপর লিখে ফেলে — আর মুহূর্তে চারপাশ ঘুরে যায়। হাওয়া ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় সবাইকে।
কবর ফেটে যায় চারপাশে কবর ফেটে যায় — কিন্তু এবার ছায়া বের হয় না। বের হয় আলো। ভেতর থেকে দেখা যায় মায়াবী দৃশ্য — যেন মৃতেরা শেষবার বিদায় জানাচ্ছে। আগন্তুক হালকা হাসে।
সূর্যের প্রত্যাবর্তন ভোরের প্রথম আলো পড়ে কবরের ওপর। ছায়ারা মিলিয়ে যায়। সাদ জ্ঞান ফিরে পায়। জুনায়েদ আর আগন্তুক দুজনেই অদৃশ্য — কেবল ক্যামেরাটা পড়ে থাকে। স্ক্রিনে শুধু একটি লাইন লেখা — “তোমরা পাশ করেছো।”
শেষ ছায়া সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে গেলেও, এক রাতে একটি ছোট্ট মেয়ে গ্রামের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যায়। তার হাতে একটি পুতুল — যার চোখ নেই। সে থেমে বলে, “আমার জন্য ফুল এনেছো…?”
গ্রাম নিঃশব্দ হয়ে যায়। আর দূরে কবরস্থানে একটা মোমবাতি হঠাৎ জ্বলে ওঠে।
শেষ।