পর্ব ১:~~
কলেজ জীবনের সমাপ্তি ঘটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পন করার ইচ্ছে সকলেরই থাকে।সকাল ৮ টা চারিদিকে থমথমে পরিবেশ নিরবতা বিরাজ করছে চারিপাশ জুরে।গ্রীষ্মকাল হালকা গরম বাতাস বইছে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্য বিভাগের ক্লাসরুমে হুলস্থুল কাণ্ড। ক্লাস শুরুর মাত্র দশ মিনিট আগে সবাই নিজেদের জায়গা গুছিয়ে নিচ্ছে। মৃদু গুঞ্জন, খসখসে পাতার শব্দ, আর দরজার ফাঁক দিয়ে আসা রোদ — সব মিলে একরকম স্বস্তির পরিবেশ।মাহিরা জানালার পাশে বসে বই খুলে বসেছে। শহরের মেয়ে না হলেও শহরের জীবন ওর চোখে বিস্ময়ের কিছু নয় — বরং ও এসেছে নিজের স্বপ্ন নিয়ে। সাহিত্য পড়ে নিজেকে গড়ার জন্য।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ঢাকায় অবস্থিত বাংলাদেশের সর্বপ্রথম সরকারি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯২১ সালে তদানীন্তন ব্রিটিশ ভারতে অক্সব্রিজ শিক্ষা ব্যবস্থা অনুসরণে এটি স্থাপিত হয়। এর শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় ১৯২১ সালের ১ জুলাই।সূচনালগ্নে ছাত্র-শিক্ষকদের প্রচেষ্টায় কঠোরভাবে মান নিয়ন্ত্রিত হবার প্রেক্ষাপটে এটি "প্রাচ্যের অক্সফোর্ড" নামে খ্যাতি লাভ করে।মাহিরার সপ্ন ছিলো ঢাবিতে পরার এবং তা সে বাস্তবে পরিণত করেছে।কত শত শিক্ষার্থীরাই না স্বপ্ন দেখে ঢাবির ক্যাম্পাসে পর্দাপন করার জন্য।ভাবনার মাঝেই কারো উপস্থিতি ক্লাসরুমে ঢোকে একটা ঝড় — নাম তার রাফিদ, পড়নে সাদা পাঞ্জাবি,কালো জিন্স,ফরসা গায়ের রংয়ের অধিকারী,লম্বা কতটুকু হবে এই পাঁচ ফুট দশ কী এগারো ইঞ্চি। গাড়ো ভ্রুর নিচে লালচে চোখ রাগ যেন ওর চোখেমুখে আগুন হয়ে জ্বলছে।যেন ভস্ম করে দিবে সবকিছু চোখ দিয়েই।ক্লাসে শিক্ষক ক্লাস করাচ্ছে আর হাসছে।আর শিক্ষার্থীরা ও একে অপরের সাথে হাসি ঠাট্টায় ব্যাস্ত।
— “এই ক্লাসটা কী কোনো ডিবেটিং ক্লাব? সবাই নিজের মতো কথা বলবে আর শিক্ষক বসে বসে হাসবে”?
— “Excuse me?” হঠাৎই বলে ওঠে কর্ণারে বসে থাকা একটি মেয়ে।রাফিদ চমকে তাকায়।
--- “আপনার সমস্যা কী, আপনি ক্লাসে ঢুকেই চিল্লাচিল্লি শুরু করেছেন কেন"?
— “তুমি আবার কে? শিক্ষক না হলে প্রশ্ন করার অধিকার নেই তোমার”?
— “ছাত্রীরাও কথা বলতে পারে, মিস্টার"!ততক্ষণাত উত্তর করে বসে মাহিরা।
সেই মুহূর্তে ক্লাস থমকে যায়। শিক্ষক বেড়িয়ে পড়েন। কিন্তু রাফিদ এর চোখে তখনও আগুন জ্বলছে,সামান্য এক মেয়ে তার মুখের উপর প্রতিউত্তর করছে।তীব্র আওয়াজেঁর সাথে দরজা লাথি মেরে চলে যায় রাফিদ,রাগে শরীর রিরি করছে।এটাই ছিল তাদের প্রথম দেখা।আর সেই প্রথম দেখায়ই শুরু হয়ে যায়। এক রাগী বিপ্লবী ছেলের সঙ্গে এক নরম অথচ জেদি মেয়ের ভালোবাসার যুদ্ধ।
__ক্লাস শেষে মাহিরা ব্যাগ গুছিয়ে বেরোতেই দেখে,রাফিদ দাঁড়িয়ে আছে কলা ভবনের নিচে। মুখে সেই আগের রাগী ভঙ্গিটা নেই, বরং একটু চিন্তিত মনে হলো।মাহিরা পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিয়েও রাফিদের ডাক শুনে দাড়িঁয়ে যায়।
– “এক মিনিট,” বলে এগিয়ে এলো রাফিদ।
মাহিরা থমকে দাঁড়াল।
– “কি হয়েছে?”
– “হায়,আমি রাফিদ বায়োলজি ডিপার্টমেন্ট এর ছাত্র। তোমার আজকের কথাটা খারাপ লাগেনি। আসলে আমার মাথা গরম হয়ে যায় মাঝে মাঝে"।
– “আমি মাহিরা।আমি বুঝি,তবে একটু সংযত থাকলে ভালো হয় মি.রাফিদ"।
– “তুমি সাহিত্যের মেয়ে, তাই না"?
– “হ্যাঁ। সাহিত্য পড়ি, কিন্তু চুপচাপ না। যা ঠিক মনে হয়, বলি"।রাফিদ হেসে ফেলে।
– “আমিও তাই করি। শুধু একটু জোরে করি"।
__তারপর দুজন হাঁটতে হাঁটতে চলে আসে রাজু ভাস্কর্যের দিকে। দেয়ালে আঁকা পোস্টারে লেখা:"তোমার লাল রক্তে হবে এই দেশ সত্যিকারের স্বাধীন"।
মাহিরা তাকিয়ে থাকে, আর রাফিদ বলে ওঠে,– --“এই দেয়ালের রংগুলোই আমাদের ভবিষ্যৎ। তুমি জানো"?
– “আপনি কী রাজনীতিবিদ?
--না,তবে রাজনীতি ভালো লাগে।__ঠোটে লাগা ক্রুর হাসি।
তাদের কথার ভেতর সেই প্রথম সেতু গড়ে ওঠে — দ্বন্দ্বের ওপার থেকে বোঝাপড়ার দিকে,হয়তো ভালোবাসার দিকেও।কে জানে এটি কোথায় মোর নিবে।সব ভালোবাসার পিছনে ধ্বংসলীলা না থাকলেও,কিছু ভালোবাসায় ধ্বংসলীলা ও থাকে আর হয়তো এভাবেই ধ্বংসে মেতে উঠে।
চলবে~~~