মিথ্যাবাদী রাজা
এক ছিল ছোট্ট রাজ্য, নাম রাজপুর। রাজপুরের রাজা ছিলেন মহাজন। কিন্তু মহাজন ছিল একটু আলাদা—তিনি ছিলেন খুবই মিথ্যাবাদী। রাজপুরের লোকেরা রাজাকে খুব ভালোবাসতো, কারণ তিনি দয়ালু ছিলেন, কিন্তু তার একটা বড় সমস্যা ছিল, রাজা যখন কথা বলতেন, প্রায়ই মিথ্যা বলতেন।
একদিন রাজপুরে একটা বড় উৎসবের আয়োজন ছিল। রাজা মহাজন সবাইকে আমন্ত্রণ জানালেন। রাজ্যবাসী খুশি হয়ে আসতে শুরু করল। রাজা সবাইকে দেখতে পেয়ে বললেন, “আমি আজ এক অদ্ভুত কথা বলব—আমি আজকে একটি রাজকুমারী বিয়ের জন্য বাছাই করব!”
লোকজন উৎসাহিত হলো। সবাই ভাবল, হয়তো রাজা সত্যি সত্যি নতুন কোনো রাজকুমারীর খোঁজ করছেন। কিন্তু রাজা বললেন, “আরেকটা কথা বলি, এই রাজ্যে এতদিনে কেউ রাজ্যের সম্পদ চুরি করেনি। যদি কেউ করে, আমি তাকে ক্ষমা করব না।”
এই কথাটা শুনে সবাই একটু অবাক হলো। কারণ রাজপুরে এমন কথা আগে কেউ বলেনি।
এরপর রাজা বললেন, “আরেক কথা—আমি নিজের মাথার চুল গুটিয়ে ফেলেছি, যেন রাজ্যের সব সমস্যা শেষ হয়ে যায়!”
লোকেরা হাসতে লাগল, কারণ রাজা চুল গুটিয়ে ফেলেননি, বরং তিনি মাথায় একটি বড় শুয়োরের ডালা পড়েছিলেন, যেটা তিনি গোপনে কিনেছিলেন মজার জন্য।
উৎসব চলছিল, আর রাজা তার মিথ্যা কথা দিয়ে সবাইকে বিভ্রান্ত করছিলেন।
এমন সময় রাজপুরের বুদ্ধিমান মন্ত্রী “বাবু হরিরাম” রাজাকে ডেকে বললেন, “মহারাজ, আপনি এত মিথ্যা বললে রাজ্যের মানুষের বিশ্বাস হারাবেন। রাজা হয়েও সত্য বলার মূল্য আছে।”
রাজা মহাজন হেসে বললেন, “হরি, তোমার কথাটা ঠিক, কিন্তু আজ আমি মিথ্যার রাজা। রাজা যদি মিথ্যা না বলে, তাহলে তার রাজত্ব কি মজা?”
মন্ত্রী ভাবলেন, এটা ঠিক নয়। তিনি রাজাকে বোঝানোর জন্য এক পরিকল্পনা করলেন।
পরের দিন রাজা মহাজন রাজপ্রাসাদে জোর জোরে ঘোষণা করলেন, “আজ থেকে সবাই যেনো সৎ হয়, আর কেউ মিথ্যা না বলে।”
তারা শুনেই অবাক হলো। কিন্তু হঠাৎ রাজা বললেন, “আরেক কথা! আজ থেকে রাজ্যের যেকোনো মিথ্যাকে আমি পুরস্কৃত করব!”
এ কথা শুনে সবাই বুঝতে পারল, রাজা আবার মিথ্যা বলছেন।
এদিকে, রাজপুরে এক চোর ছিল, নাম পলাশ। পলাশ রাজ্যের ধনী বাড়ির গয়না চুরি করেছিল। সে খুব সাবধানে কাজ করেছিল, কারো নজর পড়েনি।
কিন্তু রাজা যখন ঘোষণা করলেন, “যদি কেউ চুরি করে, আমি তাকে শাস্তি দেব,” পলাশ ভয় পেয়ে গেল। কারণ রাজা মিথ্যাবাদী হলেও কঠোর ছিলেন শাস্তিতে।
এখন মন্ত্রী হরিরাম ভাবলেন, রাজাকে একটা কঠিন শিক্ষা দিতে হবে।
তাই তিনি রাজাকে একটি ছোট নাটক দেখানোর পরিকল্পনা করলেন।
মন্ত্রী রাজাকে নিয়ে গেলেন রাজ্যের বড় মাঠে, যেখানে কিছু লোক অভিনয় করছিল। নাটক ছিল এক মিথ্যাবাদী রাজা এবং তার মন্ত্রীর গল্প।
রাজা নাটক দেখতে দেখতে হেসে বললেন, “এই গল্পটা তো আমার জীবনের মতো!”
মন্ত্রীর মুখে হাসি এসে গেল। নাটকের শেষে মন্ত্রী বললেন, “মহারাজ, যদি আপনি নিজে মিথ্যা বলতে বন্ধ করেন, তাহলে রাজ্য সুখী হবে।”
রাজা একটু চিন্তা করলেন। তার মনে হলো, হয়তো মিথ্যা বলা সত্যিই ভালো নয়।
পরের দিন থেকে রাজা চেষ্টা করলেন সত্য বলার। আর একটু দিন পর রাজ্যের মানুষ বুঝতে পারল, রাজা সত্য কথা বলছেন।
তাদের বিশ্বাস ফিরে এল।
একদিন পলাশ চোর ধরা পড়ল। রাজা তাকে ডেকে বললেন, “তুমি চুরি করেছো, কিন্তু আমি তোমাকে শাস্তি দেব না, যদি তুমি সত্যি ও ভালো মানুষ হও।”
পলাশ বুঝল রাজা সত্যিকারের বদলেছে। সে কাঁদতে কাঁদতে রাজাকে ক্ষমা চাইল।
রাজা বললেন, “সবাই ভুল করে। তবে ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে।”
এইভাবে রাজপুর শান্তি ফিরল, আর রাজা মহাজন সবাইকে শিখিয়েছিলেন মিথ্যার বদলে সত্যের গুরুত্ব।