আমরা তো সবাই সুখ খুঁজি তাই না?
এখানে সবাই বলতে আমি বুঝিয়েছি মানুষ।বিজ্ঞানের ভাষায় বর্তমানে যাদের বলা হয় হোমো সেপিয়েন্স।মানুষ ছাড়া যেহেতু অন্য কোনো প্রাণী বা উদ্ভিদ পড়ালেখা জানে না তাই 'সবাই' এর মাঝে তারা আসে না। প্রাণীদের ভাষা আমরা কেউই বুঝতে পারি না এবং উদ্ভিদের ভাষা আছে কী না সেইটা আমাদের জানা নেই।তাই তারা সুখ খুঁজে কী না সেটা বলাও মুশকিল।উদ্ভিদের বিষয়টা একটু জটিল।কারণ প্রায় শতভাগ উদ্ভিদই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিজের জীবদ্দশায় চলে যেতে পারে না।এখানে আমাদের সুবিধার জন্য ধরে নিতে পারি মানুষ ছাড়া কেউ সুখ খোঁজে না।
এখন বলুন তো;আমরা যারা সুখ খুঁজি,আনন্দ খুঁজি আমরা কি সবসময় পাই?উত্তরটা সবারই হবে না।আনন্দ চাইলেই পাওয়া যায় না।অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে যখন আমরা কোনো কাজ করি তখন সেটা আমাদের জীবনে একটা ভালো ফল বয়ে নিয়ে আসে,নতুবা খারাপ কিছু।
ক্যালেন্ডারে যত দিন যাচ্ছে পৃথিবীর বয়স তত বাড়ছে।এরই সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলছে দুঃখ-কষ্ট ইত্যাদির পরিমাণ।কঠিন হয়ে যাচ্ছে আমাদের বেঁচে থাকা।আমাদের প্রায় সবার জীবনেই এমন অনেক ঘটনা ঘটে চলছে যার ফলে আমরা শারীরিকভাবে এবং মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছি।সবসময় তো আর ডাক্তারের উপদেশ মেনে নিয়ে জীবন যাপন করলে আর ঔষধ খেলেই যে ভালো থাকবো এমন কিন্তু না।আমরা সবসময় আমাদের বিভিন্ন প্রকারের অসুস্থতায় ডাক্তারের সাথে গিয়ে দেখা করে আসি।ডাক্তার যা বলেন তার অনেকটুকুই আমরা শুনি না ফলে আমাদের সুস্থতায় বাধা সৃষ্টি হতে দেখা যায়।
ঠিক এই জায়গাতেই আসে বিভিন্ন প্রকারের গান শোনার উপকারিতা।লিরিক সহ গান আপনি শুনতে পছন্দ না করলেও শুনতে পারেন বিভিন্ন প্রকারের সঙ্গীত।যা আপনার মন ভালো করে দেবে।
কীভাবে বললাম কথাটা,জানতে চান?
আমাদের জীবনে অনেক ঘটনা ঘটে।আমাদের পছন্দের মানুষ আমাদের হয়না,আমরা যে জীবন নিয়ে বাঁচতে চাই তার মাঝে থাকি না,লক্ষ্য যা ঠিক করে রাখি তা পূর্ণ করতে সক্ষম হই না এইরকম শত শত হাজার হাজার উদাহরণ চাইলে বলা যায়।এসব ঘটনার কারণে আমাদের মাঝে অসুস্থতা দেখা দেয়।আমরা যখন অসুস্থ হই(শারীরিকভাবে হোক কিংবা মানসিক ভাবে)তখন আমাদের মাঝে বিভিন্ন প্রকার উপশম দেখা যায়।তখন এই অসুস্থতা কাটিয়ে উঠতে আমাদের মস্তিষ্কের মাঝে এন্ডোরফিন নামক হরমোনের নিঃসরণ ঘটা শুরু হয়।যদিও কোনো ব্যবস্থা না নিলে এই হরমোন নিঃসৃত হতে থাকে ধীর গতিতে এবং অল্প পরিমাণে।তবে কিছু উপায় যদি অবলম্বন করি তবে এই এন্ডোরফিন হরমোনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়া সম্ভব।এরই একটি উপায় হচ্ছে গান শোনা।যখন আমরা গান শুনি,সঙ্গীত শুনি তখন আমাদের মস্তিষ্কের মাঝে এই হরমোন নিঃসৃত হওয়া শুরু করে।ফলে আমাদের মন খারাপ ও শরীর খারাপ অবস্থা কাটিয়ে ওঠা শুরু করে।
যদিও সুখে থাকার হরমোনের অন্যতম এন্ডোরফিন নিঃসৃত হওয়ার আরও উপায় আছে।যেমন;সিনেমা দেখলে,ব্যায়াম করলে,হাঁটাহাঁটি করলে।কিন্তু কেন আমি গান শোনার কথাই বললাম?অন্য কিছু করার কথাও তো বলা যেত।আসলে গানের কথা বলার পেছনে একটি বিশেষ কারণ রয়েছে।
আমরা আমাদের লেখা শুরু করেছিলাম সুখ দিয়ে।আমরা সুখ খুঁজি কি না তা নিয়ে।এখন চলে এলাম অসুস্থ হলে সুখ লাভের উপায় নিয়ে।
অসুস্থ(শারীরিক বা মানসিক যেকোনোটাই হতে পারে) হলে আমাদের কোন কাজ করতে সাধারণত ইচ্ছে করে না।উপরে গান শোনা ছাড়া এন্ডোরফিন নিঃসৃত হওয়ার যে কারণ বলা হয়েছে তা করতে গেলে আমাদের পরিশ্রম করতে হয়।যেমন,সিনেমা দেখতে হলে আমাদের হলে যেতে হয় কিংবা টিভির সামনে বসতে হয়।ব্যায়াম করতে হলে শরীরকে কষ্ট দিতে হয়।হাঁটলেও।কিন্তু এর মাঝে গান শোনা কোন পরিশ্রমের কাজ নয়।যেকোন সময় যেকোন জায়গায় গান শোনা যায়।আগেকার দিনে হয়তো গান শোনাটা সহজ কাজ ছিল না।বিভিন্ন মিউজিক প্লেয়ার,রেডিও ইত্যাদির সাহায্যে শোনা লাগতো।এখন আর এমন কোনো সমস্যা নাই।একটা মোবাইল ফোন থাকলেই শুনতে পারা যায় গান।ইউটিউবে ঢুকে সার্চবারে পছন্দের কোনো গানের নাম লিখে সার্চ করলেই পাওয়া যায় একই গানের অনেক আলাদা আলাদা ভার্সন।একা একা থেকে শুয়ে বসে নয়তো কানে ইয়ারফোন গুঁজে দিলেই হারিয়ে যাওয়া যায় সঙ্গীতের অন্য এক জগতে।যেখানে আমাদের সাথে থাকে না আর কেউ।
আজকের সময়ে এসে গান শোনা কেবল যে উপভোগের বিষয় তা কিন্তু নয়,এটি আমাদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও অনেক উপকারী।
গান শুনলে মানুষের হৃৎপিন্ড সুস্থ থাকতে পারে।তাছাড়া আগে আমাদের মনের সমস্যার কথাও বলা হয়েছে; গান শুনলে এসব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারা যায়।এন্ডোরফিন হরমোনের নিঃসরণ বাড়ানো সম্ভব হয়।আমরা আনন্দে ও সুখে থাকতে পারি।
এখনকার দিনে দেখা যায় আমাদের অনেকেরই ব্যাপক মুড সুইং হয়।কখনো ভালো লাগে আবার একটু পরেই মন খারাও হয়ে যায়।গান শোনা আমাদের খারাপ মুডকে ভালো করে দিতে অনেক সাহায্য করে।সাহায্য করে হাসিখুশি রাখতেও।এমন আরো বহু উপকারিতা আছে গান শোনার।
গান শুনলে কী হয় সেটা নিয়ে তো কথা বলা হলো।এবার চলুন আপনাদের নতুন কিছু তথ্য দিই।আপনারা কী জানেন আমরা যেভাবে গল্প-কবিতা পড়ি,ঠিক তেমন করে অনেক মানুষ আছে যারা গানের লিরিক্স পড়েন।
গান ও সঙ্গীত যে শিল্পের একটা অংশ তা হয়তো আমরা অনেকেই জানি।গান কিন্তু একভাবে সাহিত্যেরও অংশ।১৯০১ সাল থেকে বিশ্বের সবচাইতে বেশি মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার নোবেল প্রাইজে সাহিত্যের উপর পুরস্কার দেওয়া হয় সাহিত্যিকদের।এখনও পর্যন্ত ১১৯ জনকে সাহিত্যে নোবেল প্রাইজ দেওয়া হয়েছে।এর মাঝে দুইজন গান লেখার জন্য নোবেল পেয়েছেন।আপনার কী জানা আছে সেই দুইজন কে?প্রথম জন হচ্ছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।আশ্চর্য হলেন নাকি।আপনারা হয়তো জানতেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নোবেল দেওয়া হয়েছে গীতাঞ্জলি নামক কাব্যগ্রন্থের জন্য।আসলে আপনাদের জানাও ভুল নয়,আবার আমার কথাও ভুল নয়।গীতাঞ্জলি একটি কাব্যগ্রন্থ হলেই এর লেখাগুলো আসলে গান।তাই বলাই যায় যে রবীন্দ্রনাথ গানের জন্যই পেয়েছেন নোবেল পুরস্কার।
এই বিষয়ে হয়তো আপনারা আমার সাথে অমত থাকবেন।বলবেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তো কেবল গীতিকার নন,সাহিত্যের বহু ক্ষেত্রে তার আছে অনেক অবদান। তবে আমি আরেকজনের নাম বলি যিনি গান লেখার কারণেই সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।যার নাম রবার্ট জিমারম্যান।নাম শুনে নিশ্চয়ই চিনতে পারেননি।উনি কিন্তু অনেক বিখ্যাত,তবে অন্য নামে।সেই নাম হলো বব ডিলান।এবার কি চিনতে পারলেন?অনেকেই হয়তো পেরেছেন।সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গায়ক ও গীতিকার হিসাবে সুপরিচিত তিনি।তিনি কিন্তু সাহিত্য বলতে আমরা যা বুঝি সেসবে কিছুই লিখেননি বলা চলে।তারপরেও নোবেলটা জিতেছেন সাহিত্যে।
তাই এমনিতে আপনি গান না শুনলেও যদি শিল্পপ্রেমী হন তবে গান শোনা শুরু করে দিতে পারেন।আর যারা গান শোনেন তারা চালিয়ে যান।
গান শুনুন।সুস্থ থাকুন।ভালো থাকুন।