Posts

চিন্তা

অবর্ণনীয় নৃশংসতা: আলো হাতে চলা কোথাও কেউ নেই!

July 11, 2025

ফারদিন ফেরদৌস

185
View

পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল কম্পাউন্ডে রাজনৈতিক অ্যাক্টিভিস্ট যারা একজন মানুষের সাথে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ নৃশংসতা ও বর্বরতা দেখালো তারা ধরেই নিয়েছে নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় চলে গেছে। তাই ধরাকে সরা জ্ঞান করার একটা মহড়া দিয়ে নিল ওরা। মনে হয় না বিএনপি নেতৃত্ব এসবের সুরাহা সহসা করতে পারবে। এক বছর আমরা অবজার্ভ করলাম। আশাভঙ্গের বেদনাই ভারী হচ্ছে।

ভাঙাড়ি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ একসময় যুবদলের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। সামান্য চাঁদা ও ব্যবসার ভাগ বাটোয়ারাকে কেন্দ্র করে গেল ৯ জুলাই তাকে নিজ দলের অ্যাক্টিভিস্ট মাহমুদুল হাসান মহিন ও সারোয়ার হোসেন টিটু গং কর্তৃক যে কায়দায় মে'রে ফেলা হলো এবং ম'রদেহের ওপর ভয়াবহ বর্বরতা ও উন্মত্ততা দেখানো হলো -তা অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।

পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অপারেশন্স) এস এন নজরুল ইসলাম সমকালকে বলেছেন, ‘এমন বীভৎসতা আগে দেখিনি। মানুষের মধ্যে অস্থিরতা কাজ করছে। তরুণদের একটা অংশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। সমাজে শৃঙ্খলা ও ঐক্য বজায় না থাকলে বিপদ আরও বাড়বে। রক্তাক্ত লাশের ওপর যা হয়েছে, সেটি অবর্ণনীয়। এই আচরণ চিন্তার বাইরে।'

দেশের আনাচেকানাচে আওয়ামী লীগের গড়ে তোলা যতগুলো মানি মেকিং পয়েন্ট আছে -প্রায় সবগুলো এখন বিএনপির দখলে। তো আগামী নির্বাচনে বিএনপি যদি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফেরে -এরা আরেকটা আওয়ামী লীগের বাইরে আর কিছুই হতে পারবে না। বহিষ্কার সাজার বাইরে গিয়ে বিএনপির উচিত হবে দেশব্যাপী দলের সকল কমিটিতে এখনই শুদ্ধি অভিযান চালানো।

আওয়ামী লীগ তাদের কৃতকর্মের জন্য তাড়া খেয়েছে। নির্বাচনে ফেরার সুযোগ তাদের এখনো দেখি না। আওয়ামী লীগের অবর্তমানে এনসিপি ও জামায়াত যদি শক্তপোক্ত আসন নিয়ে বিএনপিকে চ্যালেঞ্জ করতে না পারে তবে এইদেশে ভারসাম্যপূর্ণ সুশাসনের আর আশা করা যায় না।

এদিকে খুলনার দৌলতপুর থানা যুবদলের সাবেক এক নেতা মাহবুবুর রহমানকে গুলি করে ও রগ কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। আজ শুক্রবার বেলা দেড়টার দিকে মহানগরের দৌলতপুর পশ্চিম মহেশ্বরপাশা এলাকার ওই নেতার নিজ বাসার সামনে এ ঘটনা ঘটে।

অপরদিকে চাঁদপুর প্রফেসর পাড়া মোল্লাবাড়ি বাইতুল আমিন মসজিদের ইমাম নুরুল আমিন মাদানী আজ খুতবার সময় জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলায় এক চরমপন্থী চাপাতি দিয়ে তার উপর অতর্কিত হামলা চালায়। ইমাম সাহেব মারাত্মক জখম হয়ে এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এমন ন্যাক্কারজনক তিনটি ঘটনা আমাদেরকে কী মেসেজ দেয়? পুলিশকে এখনো ফাংশন করতে পারেনি ইন্টেরিম গভমেন্ট। সেনাবাহিনী মাঠে থাকলেও তাদের প্রাধিকারের বাইরে গিয়ে সিভিল প্রশাসনে কাজ করতে বাধ্য হওয়ায় ইতোমধ্যে তারাও হাঁপিয়ে উঠেছে। বস্তুত দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নড়বড়ে অবস্থা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। এমন এক বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বজায় রাখা নিশ্চিতই বড় চ্যালেঞ্জ হবে।

এই যে দিনেদুপুরে সবার চোখের সামনে পাথর মেরে গুটিকয়েক অমানুষ একজন মানুষকে মেরে ফেলছে, মারা যাওয়ার পরও বুকের ওপর উঠে উদ্দাম নৃত্য করছে -এমন জিঘাংসা মানুষ একদিনে রপ্ত করেনি। বাংলাদেশের কয়েক দশকের নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র ও অরাজনৈতিক শাসনের যাতাকলে পিষ্ট হয়ে এখানকার সংস্কৃতি বিকৃত হয়ে গেছে। মানুষ তার ন্যূনতম মনুষ্যত্ববোধও হারিয়ে ফেলেছে। স্রেফ ওই বিকৃতিটাই এইসময় পিক আওয়ারে পৌঁছেছে এই যা! এই দেশে না আছে মননশীল লেখাপড়া, না আছে বিশুদ্ধ সংস্কৃতি চর্চা। সাহিত্য, গীত, নৃত্য, চলচ্চিত্র, থিয়েটার, মাঠ, খেলাধুলা, লাইব্রেরি কিছুই নাই। আছে শুধু স্মার্টফোনের নোংরা ন্যুডিটি, ভায়োলেন্সে ভরা কন্টেন্ট আর ধর্মগুরুদের বিভেদপূর্ণ জঘন্য বকোয়াজ।

আমরা অনেক আগেই থেকেই বলছি এই বাংলাদেশ বীভৎস! এই বাংলাদেশ মবেরমুল্লুক! আমরা অতীতে বিশ্বজিৎ, আবরার ও তনুদের ওপর অমানুষিক নিপীড়ন দেখেছি। পুরান ঢাকায় দিনেদুপুরে সবার চোখের সামনে একজন ব্যবসায়ীর সাথে যা হলো তাতে দ্বিধাবোধ ছাড়াই বলা যায় -আপনারা রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রকরা মেবি মব ভায়োলেন্সের কাছে জিম্মি হয়ে গেছেন। এই নৃশংস পরিস্থিতির শিকার আমরা যে কেউ যখন তখন হতে পারি! কাকে দায়ী করব? এই অন্ধকার পরগণায় আলো হাতে চলা কোথাও কাউকে তো দেখছি না!

লেখক: সাংবাদিক 
১১ জুলাই ২০২৫

Comments

    Please login to post comment. Login