কে এই ভদ্র মহিলা?
রাতুল তাকিয়ে আছে সেই ভদ্র মহিলার পথপানে, ভদ্র মহিলা একটি দামি গাড়িতে উঠলেন, গাড়িটি ধানমন্ডির দিকে যেতে লাগলো, রাতুল গাড়িটির পিছন পিছন যেতে লাগল একি!গাড়িটি তিন্নিদের বাড়ির দিকে যাচ্ছেই, হ্যাঁ গাড়িটি তিন্নিদের বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করল, রাতুল নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না এটা কি করে সম্ভব? তিন্নি কি করে আসবে? তিন্নির চলে যাওয়া নিজের চোখে দেখেছে সে,নিজের মনটাকে শান্ত করতে পারছে না রাতুল, মনের মধ্যে হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তিন্নি কি তাহলে বেঁচে আছে ? নাকি তিন্নির কোন জমজ বোন আছে আর বেঁচেই যদি থাকবে তাহলে এতদিন কেন রাতুলের কোন খোঁজ নিলো না,
না আর নিজেকে সামলাতে পারছেন না রাতুল, মনে হচ্ছে তার সামনে দাঁড়িয়ে সব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আসতে, কিন্তু ভয়াবহ অতীত তাকে আটকে দিল, না সামনে যাবে না সে আবার যদি কোন ক্ষতি হয়!
তাই নিজেকে সামলে নিয়ে বাড়ি ফিরলেন রাতুল, বাড়িতে এসেই ঘর অন্ধকার করে শুয়ে পড়ল রাতুল, নিশ্চুপ চারপাশ শুধু অঝোর ধারার বৃষ্টির শব্দ কানে এসে বাজছে,
এমনই এক শ্রাবণ ধারার মতো অনাবিল সুখ নিয়ে এসেছিল তিনি রাতুলের জীবনে,
হ্যাঁ তিন্নি, এবার আসি তিন্নির পরিচয়ে, তিন্নি কোটিপতি বাবার একমাত্র আদরের মেয়ে, বড় দুই ভাই আছে তারা বাবার ব্যবসা দেখাশোনা করে তিন্নি তাদের ভীষণ আদরের,
এদিকে পিতৃহীন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে রাতুল মা ছাড়া এই পৃথিবীতে তার আপন কেউ নেই বাবার রেখে যাওয়া কিছু জমানো টাকা আর টিউশনি টাকায় তাদের সংসার এবং পড়াশোনার খরচ চলে, তবে রাতুল খুব মেধাবী ছাত্র, দেখতেও খুব সুন্দর লম্বা ফর্সা,এক কথায় প্রথম দেখাতেই যে কোনো মেয়ে প্রেমে পড়তে বাধ্য, তিন্নির বেলায়ও তাই হয়েছিল, তিন্নির মামার বাসায় টিউশনি করাতো রাতুল, সেখানেই তিন্নি দেখে রাতুলকে, মনে মনে পছন্দ ও করে ফেলে,
শুধু সময়ের অপেক্ষায় ছিলো তিন্নি,কবে রাতুলকে তার মনের কথা বলতে পারে, অবশেষে সেই দিনটা চলে ও এলো এক ঘোর বর্ষার সন্ধ্যায় দেখা হয় দুজনের, তারপর ফোনে কথাবলা,এক পর্যায়ে তিন্নিই প্রথম প্রেম নিবেদন করে,
কিন্তু রাতুল তিন্নির ডাকে সাড়া দেয় না, কারন রাতুল সবেমাত্র অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সারাদিন ভার্সিটি আর টিউশন নিয়ে ব্যস্ত সে, তাকে যে একাই লড়াই করে যেতে হয় জীবনের সাথে, আর তিন্নি তো পরিবারের অতি আদরের রাজকন্যা, সারাদিন শুধু বন্ধুদের সাথে আড্ডা, নামমাত্র ভার্সিটিতে আসে সে পড়াশোনায় তেমন কোন মন নেই,দুজন দু পথের পথিক, এক হবে কি করে? তবুও এক হয়েছিল তারা, তিন্নির ভালোবাসা রাতুলকে বেশিদিন দূরে সরে থাকতে দেয়নি, একঘেয়ে রাতুলের জীবনে এবার পরিবর্তন আসে, ছেলেটা এখন সব সময় হাসিখুশি আর প্রাণবন্ত থাকে টিউশনের মাঝেও প্রতিদিন একটা ঘন্টা তিন্নির জন্য বরাদ্দ রাখে সে, কখনো নদীর ধারে কখনো পার্কে ঘুরে বেড়ায় দুজনে, এভাবেই কেটে যায় একটা বছর,বেশ হাসিখুশি কাটছিল দিনগুলো, কিন্তু এই খুশি বেশি দিন রইলো না, একদিন তিন্নি বাড়ি ফিরতেই দেখে ঘর ভর্তি লোকজন ঘটা করে তিন্নিকে দেখানো হয়, ছেলে কানাডায় থাকে ছেলের বাবা নাকি ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট তিন্নির আর বুঝতে বাকি থাকে না যে তার জীবনে কি ঘটতে চলেছে, তিন্নি কোন উপায় না দেখে রাতুলের কথা বাড়ির সবাইকে জানিয়ে দেয়, কিন্তু তিন্নির মা ছাড়া বাড়ির কাউকে মানাতে পারলো না কারণ রাতুল একজন বেকার মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে, তিন্নি এবার নিরুপায় হয়ে পড়ল, তিন্নি জানে তার বাবা ভীষণ রাগী ও একরোখা প্রকৃতির লোক, তিন্নির অমত দেখে ১৫ দিনের মধ্যে বিয়ের দিন ধার্য করল তিন্নির বাবা,
তিন্নি এবার কোন উপায় না দেখে পালানোর সিদ্ধান্ত নিল কিন্তু রাতুল কে রাজি করাতে পারছিল না, তিন্নি এবার এক কাপড়ের বাড়ি থেকে বের হয়ে রাতুলের কাছে চলে এলো, রাতুল কোনমতেই তিন্নিকে আর ফিরিয়ে দিতে পারল না, ফিরিয়ে দিলে তিন্নি নিজেকে শেষ করে দেয়? এই ভয়ে,,
অবশেষে ওরা দুজনে কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে বিয়েটা সেরে রাতুলের বাড়ির দিকে রওনা দেয় শুভ কাজ সম্পন্ন হলেও ওদের ভাগ্য শুভ ছিল না , তিন্নির বাড়ির লোকজন তিন্নিকে খোঁজাখুঁজি শুরু করে দেয় একপর্যায়ে একটি গাড়ি তিনদিনের রিক্সা আটকে দাঁড়িয়ে পড়ে, ওদের আর বুঝতে বাকি থাকে না যে গাড়ির মধ্যে কে আছে তিন্নি এবার রাতুলের হাত শক্ত করে ধরে এবং প্রাণপণে ছোটার চেষ্টা করে কিন্তু অপরদিক থেকে আশা একটি গাড়ি ওদের ধাক্কা দিয়ে চলে যায় দুজনেই লুটিয়ে পড়ে মাটিতে রাতুল একটু কম আহত হয় , কিন্তু তিন্নির মাথা থেকে রক্ত কপাল বেয়ে অঝোরে ঝরতে থাকে রক্তে ভেজে যায় পুরো শরীর রাতুলের বুকের উপর মাথা রেখে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সে, সে ই দৃষ্টি কত কিছুই না বলতে চায়, কিন্তু সে মুখে কিছুই আনতে পারে না শুধু দুটো শব্দ মুখে আনতে পারে ভালোবসি তোমায়, তারপর মাটিতে লুটিয়ে পড়ে, রাতুল এর ও চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসে আর কিছুই বলতে পারে না সে,
কি করে ভুলবে সেইদিন এর কথা?
রাতুল এর দু চোখ বেয়ে শ্রাবণ ধারার মতো জল গড়িয়ে পড়ছে, এভাবে কতক্ষণ কেটেছে কে জানে?
তারপর কখন যে ঘুমিয়ে পরেছে সে,