অনেকেই হয়তো জানেন না, হিন্দি সিনেমার ‘ট্র্যাজেডি কুইন’ হিসেবে পরিচিত মীনা কুমারী একজন প্রতিভাবান উর্দু কবি ছিলেন। তিনি 'নাজ' ছদ্মনামে কবিতা লিখতেন।
মীনা কুমারীর কবিতায় একাকীত্ব, অতৃপ্ত প্রেম এবং মানবিক আবেগের জটিলতাগুলো গভীরভাবে ফুটে উঠেছে, যা তার ব্যক্তিত্বের একটি সংবেদনশীল এবং অন্তর্মুখী দিক প্রকাশ করেছে।
কবিতা ছিল তার সিনেমাটিক ব্যক্তিত্বের আড়ালে লুকিয়ে থাকা দুর্বলতাগুলো প্রকাশ করার একটি মাধ্যম। কিংবদন্তি এই অভিনেত্রীর মৃত্যুর পর তার কবিতাগুলো নিয়ে একটি কাব্য সংকলন প্রকাশ করা হয়। ‘তানহা চাঁদ’ (দ্য সলিটারি মুন) নামের এই কবিতার বইটি ১৯৭২ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।
এই কবিতাগুলো মীনা কুমারীকে তার দুর্বলতা এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা প্রকাশ করার সুযোগ করে দিয়েছিল, যা তার অভিনীত চরিত্রগুলোর মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করা যায়নি।
তিনি কবিতার মাধ্যমে প্রায়ই একাকীত্ব এবং অতৃপ্ত প্রেমের বিষয়গুলো তুলে ধরতেন। ‘জিন্দেগি সির্ফ মোহাব্বত সে নাহি চলতি নাজ...’ (জীবন কেবল ভালোবাসার উপর নির্ভর করে না) এর মতো পংক্তিগুলোতে তার অস্থির দাম্পত্য জীবন এবং ব্যক্তিগত সংগ্রামের অভিজ্ঞতা প্রতিধ্বনিত হয়েছে।
তাকে প্রায় মুশায়রায় (কাব্য সম্মেলন) আমন্ত্রণ জানানো হত। সেখানে বিখ্যাত অনেক উর্দু কবিই তার আবৃত্তির ব্যাপক প্রশংসা করতেন। তার কবিতার সরলতা এবং গভীরতায় মুগ্ধ ছিলেন তারা।
মীনা কুমারীর কাছে লেখালেখি কেবল সৃজনশীল সাধনার চেয়েও বেশি কিছু ছিল। এটি ছিল এক ধরনের সান্ত্বনা। হতাশার মুহূর্তগুলোতে তিনি তার ডায়েরিতে ফিরে যেতেন, সেখানে কবিতার মাধ্যমে হতাশা থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করতেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি যে বিচ্ছিন্নতা অনুভব করতেন, তা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছিল কবিতা।
উল্লেখ্য, মীনা কুমারী ১৯৩৩ সালের আগস্টে ভারতের মুম্বাই শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাকে ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসের সেরা এবং সর্বশ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীদের মধ্যে একজন হিসেবে গণ্য করা হয়। ১৯৭২ সালের মার্চে মাত্র ৩৮ বছর বয়সে মারা যান প্রতিভাবান এই অভিনেত্রী এবং কবি। কামাল আমরোহী পরিচালিত 'পাকিজা' তার জীবনের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র। ছবিটি তার মৃত্যুর তিন সপ্তাহ আগে মুক্তি পায়।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া