সকালের পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো মিস্টার আমানের। চোখ ডলতে ডলতে উঠে বসলো।
ফ্রেশ হয়ে জন্য ওয়াশরুমে যাবে, তখনই বিছানায় তৃষার দিকে চোখ পড়লো। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তৃষা।
মিস্টার আমান দাঁড়িয়ে ছিলেন বিছানার পাশে। সকালের কোমল আলো পর্দার ফাঁক গলে ঘরে ঢুকছে। পাখিরা জানালার ধারে ডেকে চলেছে টানা—তবু ঘরের ভেতর যেন একধরনের থমথমে নীরবতা।
তৃষা গভীর ঘুমে। তার মুখটা শান্ত, এক শিশুর মতো নিষ্পাপ। কপালে কিছু চুল এসে পড়েছে—হয়তো হাওয়ায়, হয়তো ঘুমের উল্টোপাল্টা ভঙ্গিতে।
মিস্টার আমান এগিয়ে গেলেন। হাত বাড়ালেন চুলগুলো সরাতে… কিন্তু কিছু একটা আটকে দিলো তাঁকে।
“আমি কী করছি?”
মনে মনে বললেন তিনি।
এভাবে এগিয়ে যাওয়া কি ঠিক?
তৃষা তাঁর স্ত্রী ঠিকই, কিন্তু কাগজে-কলমে, চুক্তির এক সীমার ভেতর।
তবু… তৃষার দিকে চেয়ে থাকতে পারছিলেন না। চোখ ফিরিয়ে নিতে চাইছিলেন, কিন্তু পারেননি।
হাত বাড়িয়ে আবার থেমে গেলেন। এক পা পিছিয়ে এসে চুপচাপ সোফায় বসে পড়লেন।
চোখে হাত রাখলেন। হৃদয়ে যেন এক অজানা যুদ্ধ চলছে—চাওয়ার ও না চাওয়ার মাঝখানে।
তৃষা তখনও ঘুমিয়ে, কিন্তু যেন মিস্টার আমান এর মধ্যে এক ঝড় তুলে দিয়ে গেছে।
তৃষা একটু নড়ে উঠতেই মিস্টার আমান যেন হঠাৎ বাস্তবতায় ফিরে এলেন।
তৃষার নিঃশ্বাসের গতি একটু বদলাল, কপালের চুলগুলো এখনও তেমনি ছিল, কিন্তু মিস্টার আমান আর এগোলেন না। তার চোখে-মুখে হঠাৎ এক ধরণের অস্বস্তি, অস্থিরতা।
তিনি তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়ালেন, যেন নিজেকেই সামলাতে চেষ্টা করছেন। এরপর এক মুহূর্তের জন্য তৃষার দিকে তাকিয়ে চুপচাপ পেছনে ঘুরে গেলেন।
তৃষা তখনও পুরোপুরি জেগে ওঠেনি, চোখ আধো খোলা, ঘুম-ঘুম ভাব।
তবু তার মন যেন কিছু একটা বুঝে ফেলে।
তৃষা ধীরে বলল,
“আপনি এখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন?”
মিস্টার আমান থেমে গেলেন, কিন্তু মুখ ফিরিয়ে বললেন না কিছু। এক মুহূর্ত নীরবতা—তারপর ধীরে বললেন,
“পাখির ডাকে ঘুম ভেঙে গেল… জানালাটা খোলা ছিল, তাই বন্ধ করতে এসেছিলাম।”
তৃষা কেবল “হুম…” বলে চোখ বন্ধ করলো আবার। কিন্তু তার মুখে এক অদ্ভুত রকমের শান্ত, নরম হাসি খেলে গেলো—যেটা সে নিজেও বুঝে উঠতে পারলো না।
মিস্টার আমান তখন জানালার দিকে তাকিয়ে ছিলেন, কিন্তু তাঁর হৃদয়জোড়া যে এখন ঘরের মাঝখানে ঘুমিয়ে থাকা তৃষার চারপাশে বন্দী হয়ে গেছে, সেটা তিনি স্বীকার করতে পারছিলেন না।
আমান ফ্রেশ হয়ে বের হলো, গা থেকে এখনো হালকা আতরের গন্ধ আসছে। সে রুমে ঢুকেই দেখলো, তৃষা উঠে বিছানায় বসে আছে। চুল এলোমেলো, চোখে এখনো ঘুমের ছাপ—তবুও ওর মুখে এক ধরনের প্রশান্তি।
আমান হালকা গলায় বলল,
“আজ সন্ধ্যায় রিসেপশন, মনে আছে তো?”
তৃষা আস্তে মাথা নেড়ে বললো,
“হ্যাঁ, মনে আছে।”
এই কথোপকথনের মাঝেই দরজায় কড়া নাড়ল কেউ।
আমান দরজা খুলতেই দেখেন দাদি দাঁড়িয়ে, মুখে রাজকীয় হাসি।
“দাদুভাই, উঠে পড়েছ?”
আমান সম্মান দেখিয়ে বললো,
“জি দাদি।”
দাদি হাসতে হাসতে তৃষার দিকে তাকিয়ে বললেন,
“তৃষা মা, এখনই ফ্রেশ হয়ে এসো। মেকআপ আর্টিস্টরা চলে আসছে—তোমাকে পুরোপুরি রেডি করতে অনেক সময় লাগবে। তুমি আজকে যেন চোখে ধাঁধা লাগিয়ে দাও সবার।”
তারপর আমানের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“আর তুমি দাদুভাই, তোমার ডিজাইনাররাও চলে আসছে, ওরা অনেক গাউন আর শেরওয়ানি এনেছে। তুমি তোমার পছন্দমতো সব সিলেক্ট করে নাও। আজকে কিন্তু একদম রাজপুত্র আর রাজকন্যার মতো লাগা উচিত তোমাদের।”
দাদি শেষ কথাটা বলেই সরে গেলেন, কিন্তু তার চোখে একরাশ সন্তুষ্টি আর ভবিষ্যতের স্বপ্ন।
চলবে......