Posts

উপন্যাস

তোমার জন্য....( পর্ব - ৫৯)

July 13, 2025

Boros Marika

53
View

ফ্রেশ হয়ে একসাথে বের হলো তৃষা আর আমান। দুজনেই ভেতরে ভেতরে একটু অস্বস্তিতে থাকলেও বাইরে থেকে সেটা কেউ টের পাবে না এমন ভাব নিয়ে হাঁটছিল।

দাদি তখন ডাইনিং এর দিক থেকে বললেন,
“তোমরা এদিকে এসো। গেস্টদের সবাইকে আমি ব্রেকফাস্ট করে নিতে বলেছি সবার আগে। এখন তোমরাও করে নাও। তারপর শুরু হবে তোমাদের রেডি হওয়ার পালা।”

তৃষা শান্তভাবে মাথা নাড়লো,
“জি দাদি, আসছি।”

আমান একটু এগিয়ে এসে বলল,
“চলো, একসাথে করি।”

তৃষা কিছু না বলে আমানের পাশে হাঁটতে লাগলো।
ডাইনিং টেবিলজুড়ে সাজানো ছিল রাজকীয় খাবার—কাচ্চি, পোলাও, ফ্রেশ জুস, ফলমূল, বিভিন্ন ধরণের পেস্ট্রি, এবং আরও অনেক কিছু। গেস্টরা একটু দূরে বসে গল্প করছিল, কেউ কেউ তৃষা আর আমানকে দেখে মুচকি হাসছিল।

তৃষা আর আমান পাশাপাশি বসে খেতে লাগলো। কেউ কিছু না বললেও মাঝেমধ্যে চুপচাপ চোখাচোখি হচ্ছিল।
এই নীরবতা যেন অদ্ভুত এক অনুভব ছড়াচ্ছিল—একদম শান্ত, কিন্তু তলদেশে ঢেউ তোলা।

দাদি দূর থেকে দেখে একটু হেসে বললেন,
“এই রকম দেখতে ভালো লাগছে—একসাথে, পাশে পাশে।”
তার চোখে আনন্দ, কিন্তু মনের কোণে একরাশ প্রত্যাশা।

রান্নাঘর থেকে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে আরিয়ানের মা গিয়ে দাঁড়ালেন আরিয়ানের বাবার সামনে। মুখটা ফ্যাকাসে, কপালে ঘাম, আর চোখে একটা আতঙ্ক।

আরিয়ানের মা বললেন কাঁপা গলায়,
“শুনছো? এখন কি হবে বলো! আমি কি করবো বলো! আমার ছেলেটা যদি কিছু করে বসে…  দেখো না, কেমন জেদি! আমি আর পারছি না!”
এই বলে কান্নায় ভেঙে পড়লেন।

আরিয়ানের বাবা একটু রাগান্বিত গলায় বললেন,
“তখনই তো বলছিলাম—সবকিছু লুকিয়ে রাখা ঠিক না। আজ বললে কি হবে?”

আরিয়ানের মা কাঁদতে কাঁদতে বললেন,
“কার্ড নাই… ছেলেটা পেয়ে গেছে মনে হয়… চালে যেটা লুকিয়ে রেখেছিলাম… ওর চোখে ধরা পড়ে গেছে…”

এক মুহূর্তের জন্য দুজনেই চুপ।
বাড়িতে যেন নিঃশব্দ একটা ঝড় বয়ে যাচ্ছে।
আর ঘরের ভেতরে, আরিয়ান ক্লান্ত চোখে ঘুমিয়ে পড়লেও, বালিশের পাশে পড়ে থাকা রিসেপশনের কার্ডটা যেন নিঃশব্দে আরেকটা যুদ্ধ ঘোষণা করে রেখেছে।

হ্যাঁ, তুমি একদম ঠিক ধরেছো—আরিয়ান পুরোটা জেনে গেছে।

আরিয়ানের মা–বাবা যেন বোঝার আগেই যা হবার হয়ে গেছে।
তারা ধীরে ধীরে আরিয়ানের রুমের দরজায় গিয়ে দাঁড়াল। একটু ঢুঁ মারার পর দরজা খুলে দেখে আরিয়ান ঘুমিয়ে আছে। তবে ঘরের পরিবেশ অস্বাভাবিক নীরব। বিছানার ঠিক পাশে খোলা একটি রিসেপশনের কার্ড—যা অনেক কিছু বলে দেয়।

আরিয়ানের বাবা ফিসফিস করে বললেন,
“দেখেছো? বলেছিলাম না… ও সব বুঝে গেছে। কার্ডটা খুলেই রেখেছে। হয়ত সারারাত জেগে থেকেছে।”

আরিয়ানের মা চোখ মুছে বললেন,
“কি করবো বলো? ছেলেটার চোখে এখন কী আছে কে জানে… কত কষ্ট পাচ্ছে… আমি জানি ও তৃষাকে এখনও ভুলতে পারেনি।”

তারা কার্ডটা আর স্পর্শও করল না।
এক নিঃশ্বাসে ছেলেকে দেখে চলে এলো ঘর ছেড়ে।

আরিয়ান তখন ঘুমিয়ে থাকলেও ওর চোখের কোণ ভিজে।
মনের ভেতরে তৃষার প্রতি অজস্র প্রশ্ন, রাগ, অভিমান, প্রেম—সবকিছু একসাথে কুন্ডলী পাকিয়ে আছে।

চলবে.....
 


 

Comments

    Please login to post comment. Login