Posts

উপন্যাস

তোমার জন্য....( পর্ব - ৬০)

July 13, 2025

Boros Marika

56
View

ঠিক সেই মুহূর্তে তৃষার বাসায় যেন উৎসবের আমেজ।
সকালের প্রথম আলোতেই সাজ সাজ রব পড়ে গেছে। আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, কাজের লোক—সবাই ব্যস্ত।

তৃষার মা একদিকে মিষ্টি আর অন্যদিকে শাড়ির প্যাকেট গুছিয়ে নিচ্ছেন, যেন কোথাও কোনো ত্রুটি না হয়।
তৃষার বাবা একটু চিন্তায় আছেন, 
—“মেয়েটা সত্যিই ভালো আছে।

একজন আত্মীয় বলছেন –
“তৃষাকে আজ তো রাজকন্যা লাগবে!”

তৃষার মা রান্নাঘরে বসে হালকা গলায় ফিসফিস করে বলছিলেন,
“মেয়েটার এইভাবে এমন ভালো জায়গায় বিয়ে হবে, সত্যি বলতে কি, আমি নিজেই ভাবিনি কখনো। আল্লাহ্‌ ওর কপালে এমন বর লিখে রেখেছিল… কিন্তু যেদিন বিয়েটা হলো, ওই রাতেই যারা এসে তৃষার চরিত্র নিয়ে বাজে কথা বলছিল—তারাই আজ সকাল সকাল এসে হাজির।”

তিনি থেমে একটু নিঃশ্বাস নিয়ে বললেন,
“আসার পর এমন ভাব দেখাচ্ছে যেন কিচ্ছু হয়নি। বলছে—
‘তৃষার তো এমন বরই হওয়ার কথা ছিল! ও তো এমনিতেই ভালো মেয়ে!’
আরেকজন বলল, ‘কী কপাল তৃষার! এমন বড়লোক ছেলে! কী দামী গয়না, কী রাজকীয় অনুষ্ঠান!’”

তৃষার মা একপাশে মুখ ঘুরিয়ে চোখ মুছলেন।
তৃষার বাবাও তখন পাশ থেকে চুপচাপ শুনছিলেন, কোনো কথা বললেন না।
একটু থেমে তৃষার মা আবার বললেন,
“বুঝলে না? এরা সবাই এমনই। সময়ের সাথে সাথে মুখ পালটে ফেলে। যেদিন খারাপ বলছিল, সেদিনো আমরা চুপ ছিলাম। আজও চুপ। কারণ আমরা জানি, তৃষা কেমন মেয়ে। আমাদের মেয়ের সম্মান, ওর সত্যি—এইটাই সবথেকে বড় প্রমাণ।”
এই সব কথা এক আত্মীয়র সাথে আলোচনা করছিল 
বাইরে তখনও অতিথিরা আসছে, মিষ্টির গন্ধ, ফুলের সৌরভ, সাজের ছটায় ঘরের ভেতর রঙিন উৎসব—
কিন্তু এই দম্পতির মনে একটাই ভাবনা,
“মেয়েটা যেন সুখী হয়… কোনোদিন কেউ আবার তার দিকে আঙুল না তোলে।”

হঠাৎ আওয়াজ.....
তৃষার মা একটু চমকে গেলেন।
সামনে দাঁড়িয়ে পাড়ার সেই মহিলা যিনি বিয়ের রাতে সবচেয়ে বেশি কথা বলেছিলেন, এখন হাসি মুখে বলছেন,
“হ্যাঁ গো, শুনলাম তোমার জামাইয়ের তো অনেক বড় ব্যবসা, নিজের অনেক বড় অফিস।  তা তোমার রিংকুর জন্য একটা চাকরির ব্যবস্থা করতে পারতে না? মানে আমার ছেলে যে তোমারই ছেলের মত।তাই না ? তৃষার মা। তোমার জামাইকে যদি একবার বলে দাও, তোমার মুখের কথা কি ফেলবে?”

তৃষার মা ভেতরে ভেতরে কী যেন একটা রাগ আর অপমান অনুভব করলেন, কিন্তু মুখে কিছু না বলে শান্ত গলায় বললেন,
“আচ্ছা দেখি, তৃষার বাবা বাড়ি এলেই ওর সঙ্গে কথা বলবো।”

মহিলা তখন হেসে বললেন,
“তা দ্যাখো গো, তোমার জামাই তো এখন আমাদের সবার জামাই। চাকরি-বাকরির কথা তো বলতেই পারো। রিংকু তো ভালোই ছেলে, শুধু একটু গা ছাড়া… ওর একটা হেল্প দরকার।”

তৃষার মা মুচকি হেসে মাথা নাড়লেন, কিন্তু ভেতরে ভেতরে ভাবছিলেন—
“বাড়ির সম্মান যখন মাটিতে টানছিলে, তখন তো একটুও ভাবলে না। আর আজ জামাই বড়লোক শুনে চাকরি চাইছো! মানুষ এত বদলায়?”

চুপচাপ তৃষার মা নিজের কাপড় ঠিক করে উঠে দাঁড়ালেন, যেন বিয়ের আনন্দের মধ্যেও এই ভদ্রতার মুখোশের ভিড় তাঁকে দমবন্ধ করে দিচ্ছে।


তৃষার মা ভেতরে ভেতরে সব বুঝলেও মুখে শান্ত ভাব বজায় রেখে বললেন,
“ঠিক আছে, চেষ্টা করব।”

ওই মহিলা তখনও থামলেন না। আবার বললেন,
“আমি বললাম ঠিক পারবে, দেখো কিন্তু! তোমার জামাই তো এক কথায় রাজি হয়ে যাবে, তুমি বললেই হলো। তৃষার মতো মেয়ে তো ওর সৌভাগ্য… তাই না?”

তৃষার মা একবার হাসলেন, মুখে কিছু বললেন না। শুধু মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন।

মহিলা তখন ঘুরে চলে গেলেন, মুখে আবার কিছুক্ষণ নিজের মতো গুনগুন করে বলতে বলতে—
“এই তৃষা তো সব সময় চুপচাপ থাকত, ভাবতেই পারি নাই এমন জায়গায় বিয়ে হবে… আহারে, কপাল!”

তৃষার মা এবার নিঃশ্বাস ফেললেন, চোখে একটুখানি আর্দ্রতা এলেও তাড়াতাড়ি সামলে নিলেন নিজেকে।
“মেয়েটাকে কতভাবে ছোট করেছিল এরা… আজ যখন আমার মেয়েটা সম্মানের আসনে বসেছে, তখন সবাই নিজেদের মতো ফায়দা তুলতে চায়। সময় বদলায়, মানুষ না।” —এই ভেবে তিনি চুপচাপ ভিতরের ঘরে চলে গেলেন।

কিন্তু মহিলা গুলো এইভাবেই ক্ষান্ত হলো না, এরপর যা করলো ......

চলবে.....

Comments

    Please login to post comment. Login