Posts

উপন্যাস

তোমার জন্য....(পর্ব - ৬২)

July 13, 2025

Boros Marika

56
View

ওই দিকে হঠাৎ করেই যেন খুশির এক ঢেউ বয়ে গেলো গোটা বাড়িতে। সবার ব্রেকফাস্ট শেষ করে। ডিজাইনার টিম, মেকআপ আর্টিস্ট, স্টাইলিস্ট, হেয়ার এক্সপার্ট—সবাই ব্যস্ত হয়ে উঠেছে নিজেদের কাজে।

এরপর মিস্টার আমান আর তৃষাকে আলাদা দুটি রুমে নিয়ে যাওয়া হলো।
তৃষাকে মেহগনি কাঠের এক অপূর্ব সাজানো ঘরে বসানো হলো। চারপাশে বড় বড় আয়না, ঝুলন্ত আলো, আর সিল্কের পর্দা—সবকিছু যেন একটা রাজকীয় পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে।

তৃষা চুপচাপ বসে আছে, চোখে একটা অজানা চিন্তা। কিন্তু তবুও তার চোখে আজ এক আলাদা আলো। তার চারপাশে ডিজাইনাররা ব্যস্ত—কে গয়না দেখাচ্ছে, কে শাড়ির ভাঁজ ঠিক করছে, আবার কেউ চুলে ফুল গুজে দিচ্ছে।

"ম্যাডাম, এই জুয়েলারি ট্রাই করে দেখুন তো, আপনার গায়ে একেবারে অপূর্ব লাগবে!"
তৃষা আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবি দেখে একটু থমকে গেলো—এই সে? এতোটা রূপে সে কখনও নিজেকে দেখেনি।

অন্যদিকে মিস্টার আমানকেও নিয়ে যাওয়া হয়েছে আরেক ঘরে। তার সামনে তিনজন ডিজাইনার দাঁড়িয়ে, রকমারি শেরওয়ানি, কোট, টাই আর বাটন ধরে ধরে দেখাচ্ছে। একজন এসে সোনালি বর্ডারওয়ালা কালো শেরওয়ানি সামনে ধরতেই দাদি এসে বললেন,
"এইটাই পরো, আমার দাদুভাইকে রাজপুত্র লাগবে!"

মিস্টার আমান হালকা হেসে বললেন,
"ঠিক আছে দাদি, আপনার পছন্দই আমার পছন্দ।"

দুই রুমেই এখন সাজগোজ চলছে পুরোদমে। তৃষা আর আমান—দুজনের ভিতরেই অজানা চাপা অনুভূতি। রিসিপশনের রাতটা শুধু সামাজিক অনুষ্ঠান নয়, এটা যেন নতুন এক ধাপ, নতুন এক গল্পের শুরু।

তৃষা তখন মেকআপ চেয়ারে বসে, চোখে হালকা ভয় ও কৌতূহল। এমন রাজকীয় পরিবেশে, এত মানুষের মাঝখানে সে যেন একটু অস্বস্তিতে। ঠিক তখনই দাদি হাত ধরে তাকে নিয়ে আরেকটা শান্ত, নরম আলোয় ভরা রুমে নিয়ে গেলেন।

রুমটা ছিল তুলোর মতো সাদা, হালকা গোলাপি পর্দা আর কাঠের শেলফে সাজানো কিছু পুরনো ছবি—দাদুর ছোটবেলার, আমানের শৈশবের। যেন এক পুরোনো গল্পের পাতা।

দাদি তৃষার মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন,
"শোনো মা তৃষা, আজ সন্ধ্যায় সবাই তোমাকে দেখবে। আমি চাই, আমার পোতার বউ যেন আলাদা করে মনে থাকে সবার। তোকে দেখে যেন চোখ ফেরাতে না পারে কেউ।"

তৃষা একটু লাজুকভাবে হেসে চোখ নিচু করে ফেললো।

দাদি তখন মেকআপ আর্টিস্টদের দিকে ঘুরে দৃঢ় গলায় বললেন,
"তোমরা শুনে রাখো—এই মেয়েটা এমনিতেই অসাধারণ সুন্দর। খুব বেশি মেকআপ দিয়ে ওর সৌন্দর্য ঢেকে ফেলো না। ওর মুখে যেন ন্যাচারাল এক নরম আলো থাকে, চোখে যেন মাধুর্য থাকে। আজ সে শুধু আমার পোতার বউ নয়, সে আমার পরিবারের গর্ব—তা যেন সবাই দেখতে পায়।"

মেকআপ আর্টিস্ট মাথা নাড়লেন সম্মতির ভঙ্গিতে,
"দাদি, আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন। আমরা শুধু তার সৌন্দর্যটা একটু ছুঁয়ে দেব, ওকে বদলে দেবো না।"

তৃষা অবাক হয়ে দাদির দিকে তাকালো। এত যত্ন, এত ভালোবাসা কেউ তার জন্য রাখে—এই প্রথম সে উপলব্ধি করলো।

দাদি কাছে এসে তার মাথায় হাত রাখলেন,
"তুমি আমার মনের মতো। তুমি ভালো থাকলেই আমার আমান ভালো থাকবে।"

এই মূহূর্তটা তৃষার মনে গেঁথে গেল চিরতরে।

দাদির কথা শুনে একটু থমকে গিয়েছিল সবাই। মেকআপ আর্টিস্ট, হেয়ার স্টাইলিস্ট, ডিজাইনার—সবাই পরস্পরের দিকে তাকালো। তারপর একসাথে মাথা নেড়ে বললো,

"না ম্যাডাম, এমন হবে না। ম্যাম এমনিতেই খুব সুন্দর। আমরা ওনাকে এমনভাবে সাজাবো যেন ওনার স্বাভাবিক সৌন্দর্যটাই আরও বেশি ফুটে ওঠে।"

একজন মেকআপ আর্টিস্ট এগিয়ে এসে বললো,
"দাদি, আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন। আজকের দিনটা ম্যামের জীবনের সবচেয়ে সুন্দর দিন হবে, ওনার মতোই।"

তৃষা একটু হেসে ফেললো, দাদির দিকে চেয়ে মৃদু স্বরে বললো,
"আমি ঠিক আছি দাদি, আপনি পাশে আছেন না?"

দাদি আদর করে বললেন,
"আমি তো আছিই মা, আজ তুমি শুধু রাণীর মতো থাকবে।"

রুমটা যেন মুহূর্তেই আরও উষ্ণ হয়ে উঠলো। আর বাইরে তখন ভরে উঠছে রিসেপশনের আয়োজনের শব্দে। চারপাশে আলো, সাজ, ব্যস্ততা।

কিন্তু সত্যি কথাটা হলো তৃষার মনের ভিতর একটা ঝড় বয়ে যাচ্ছে, আরিয়ান কে অনেক ভালোবাসি কিন্তু তুমি এমন কেনো করলে আরিয়ান।

বিয়ের রাতে আমাকে ছেড়ে কোথায় চলে গেলে.....

চলবে.........
 


 

Comments

    Please login to post comment. Login