Posts

উপন্যাস

তোমার জন্য....( পর্ব -৬৩)

July 13, 2025

Boros Marika

49
View

সন্ধ্যা ধীরে ধীরে ঘনিয়ে এলো। আলোর ঝলকানিতে গোটা বাড়ি যেন রূপকথার কোনো রাজপ্রাসাদে রূপ নিয়েছে। সাজসজ্জায়, ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে চারপাশ। গেস্টরা আসতে শুরু করেছে, ক্যামেরার ফ্ল্যাশ বারবার ঝলক দিচ্ছে, আর উৎসবের মতো একটা উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে পুরো বাড়িতে।

এই সব কিছুর মাঝেই, মিস্টার আমান একবার চোখের কোণে তৃষাকে দেখার চেষ্টা করলেন। কিন্তু তখনই দাদি এসে বললেন—

"না না, একদম না। এখন না আমান, একবারে অনুষ্ঠানে গিয়ে দেখবে তোমার বউকে। চমকটা নষ্ট করবি না।"

আমান একটু হেসে মাথা নোয়ালেন,
"ঠিক আছে দাদি। যেমন আপনি চান।"

কিন্তু মনে মনে অস্থির হচ্ছেন তিনি। কেমন দেখাবে তৃষা আজ? সাজে কেমন লাগবে? আর তার চোখে কি আমানকে দেখে কোনো বদল আসবে? কোনো অনুভূতির ঝলক?

ওইদিকে তৃষাও মেকআপ শেষ করে আয়নার সামনে বসে আছে। বুকের ভিতর ধুকপুক শব্দ, যেন কিছু একটা বড় মুহূর্ত অপেক্ষা করছে। দাদি ওর কপালে টিপ দিয়ে বললেন,
"তুই তো এমনিতেই রাণীর মতো, আজ সবকিছুকে হার মানিয়ে দিবে।"

অনুষ্ঠানস্থল আলোয় ঝলমল করছে, সবার মুখে আনন্দ আর বিস্ময় মিশে গেছে। অতিথিরা একে একে আসতে থাকছে, অনেকে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছে, কারো হাতে উপহার, কেউ আবার ফিসফিস করে আলোচনা করছে মেয়েটার সৌন্দর্য আর বরকে ঘিরে গুঞ্জন।

এই সময়েই, ধীরে ধীরে মৃদু পায়ে তৃষা মঞ্চের দিকে এগিয়ে আসছে—সবুজ রঙের জমকালো শাড়িতে, যা তার গায়ের রঙের সঙ্গে এক অপার্থিব মিল গড়ে তুলেছে। তার গলায় দাদির উপহার দেওয়া সবুজ ডায়মন্ড সেট যেন আভিজাত্যের ছায়া হয়ে জ্বলছে—সেটা কেবল অলংকার না, যেন এক ইতিহাস, এক আশীর্বাদ।

তৃষার মুখে কোনো অতিরিক্ত সাজ নয়, কিন্তু চেহারায় এমন এক কোমল দীপ্তি যে চোখ ফেরানো কঠিন।

তাকে দেখে মিস্টার আমান কিছুক্ষণের জন্য যেন বাস্তব ভুলে গেলেন।
সব শব্দ থেমে গেল তার কানে।
শুধু তৃষা।
শুধু সেই মুখ, সেই চোখ, যা এক নিঃশ্বাসে তার সমস্ত অতীতকে, বর্তমানকে, এমনকি ভবিষ্যতকেও এক মুহূর্তে ধরে ফেলল।

আমানের ঠোঁটে এক অদ্ভুত কোমল হাসি ফুটে উঠলো—
"আজ আমার জীবনে সত্যিকারের এক নতুন শুরু হলো,"
মনেই বললেন তিনি।

ওদিকে দর্শকদের মধ্যে ফিসফিসানি—
"এই মেয়েটার তো স্বভাবেই রাণীদের মতো গাম্ভীর্য। কেমন চোখে তাকায় দেখেছো?"
"ওর সাথে এমন বর, একদম স্বপ্নের জুটি!"

স্টেজটা সাজানো ছিল ফুলে ফুলে, একপাশে ঝরে পড়ছে নরম আলো, আরেক পাশে মৃদু বাদ্যযন্ত্রের সুর—সবকিছু যেন অপেক্ষা করছিল ঠিক এই মুহূর্তটার জন্য।

তৃষা ধীরে পায়ে উঠে গেল মঞ্চে। কিছুটা লাজুক, কিছুটা গম্ভীর মুখে। তার পেছনে দাদী হেঁটে গেলেন গর্বিত ভঙ্গিতে, যেন বলছেন—"এই আমার নাতবউ, একেবারে রাজকন্যা!"

মিস্টার আমান কিছুক্ষণ আগেই উঠেছেন মঞ্চে। তিনি এখন একদম থমথমে দাঁড়িয়ে, কিন্তু চোখে এক অপার প্রশান্তি। তৃষা তার পাশে এসে বসতেই মুহূর্তটা যেন থেমে গেল।

দুইজনকে একসাথে বসানো হলো এক জায়গায়। আশেপাশে ক্যামেরার ফ্ল্যাশ, মানুষের করতালি আর দাদির খুশির কণ্ঠ:

"এই তো! আমার পোতা আর পোতাবউ একসাথে, একদম রাজকীয় লাগছে!"

তৃষা একটু চুপচাপ, অস্বস্তি তার চোখে ঠায় দাঁড়িয়ে।
মিস্টার আমান আস্তে করে তার দিকে তাকিয়ে বললেন,
"ভয় পাচ্ছো?"

তৃষা চোখ নামিয়ে ফেললো, বললো না কিছু।

আমান আবার বললেন,
"ভয় পেও না… আজ শুধু তোমার জন্য এই রাতটা।"

সেই কথায় তৃষার চোখে এক চিলতে প্রশ্রয় ফুটে উঠলো।

এতক্ষণ যাদের চোখে রাজকীয় দৃশ্য ছিল, এখন তারা দেখলো—স্টেজের আলোয় বসে থাকা দুজন মানুষের মাঝে জমে উঠছে এমন এক অনুভব, যা হয়তো সম্পর্কের শুরু… আবার হয়তো আরও বড় কিছু শুরু হওয়ার অপেক্ষা…

কিন্তু ঠিক তখনই—দূর থেকে একজোড়া চোখ স্থির হয়ে আছে এই দৃশ্যপটের দিকে।
আরিয়ান।

হাজারো ভিড়ে থেকেও সে যেন একা, নিঃশব্দে এই জুটিকে দেখে যাচ্ছে।
চোখে কষ্ট, হিংসা, তৃষ্ণা আর অচেনা এক যন্ত্রণার ঢেউ।

আরিয়ান কিছুটা নেশা করে অনুষ্ঠানে আসছে। নিজেকে সামলানো কঠিন হয়ে পড়ছে, তৃষাকে দেখতে খুবই সুন্দর লাগছে।।যা দেখে নিজেকে সামলাতে পারছে না আরিয়ান। এরপর এমন একটা মুহূর্ত আসলো ,যা দেখে আরিয়ান নিজেকে সামলাতে পারলো না........

চলবে.....

Comments

    Please login to post comment. Login