Posts

উপন্যাস

তোমার জন্য....( পর্ব -৬৫)

July 13, 2025

Boros Marika

47
View

মিস্টার আমান বুঝে গেলেন, আরিয়ান শুধু দেখতেই আসেনি—সে কিছু বলতে চায়।
তৃষার সেই চাহনি, সেই রাগ আর ব্যাকুলতা… সব মিলিয়ে আমান বুঝতে পারলেন এই গল্প এখানেই থেমে যাবে না।

সবার চোখ এড়িয়ে তিনি ধীরে ধীরে একপাশে সরে গেলেন।
আর একসময় ইশারায় নিরাপত্তাকে দূরে যেতে বললেন।

আরিয়ানও বুঝলো, সুযোগ এসেছে।

সে এগিয়ে এল।
দুজনে মুখোমুখি দাঁড়াল—একটা ফুলের স্ট্যান্ড আর ডেকোরেশনের ছায়ায়, অনুষ্ঠানস্থলের একটু আড়ালে।

একটু নীরবতা… তারপর আমানই বললেন ধীরে,
“তোমার চোখে অনেক কথা। বলতে এসেছো, বলো।”

আরিয়ানের কণ্ঠ চাপা, কিন্তু বিষাক্ত অভিমানে জর্জরিত—
“আপনাকে আমি একবারও বলিনি, তৃষার পাশে থেকেন না। কিন্তু আজ… ওর হাতটা এভাবে ধরার মানে জানেন?”

মিস্টার আমান ঠান্ডা চোখে তাকালেন, তারপর শান্ত গলায় বললেন—
“হ্যাঁ, জানি। ওর হাত ধরা মানে শুধু স্বামী হওয়া নয়… বরং ওর পাশে দাঁড়ানো। তুমি কীভাবে দাঁড়িয়েছিলে, সেটা ও জানে।”

আরিয়ান থমকে গেল। তার চোখ কাঁপছিল।
“তুমি জানো না আমি কী হারিয়েছি…”

“তবে খুঁজে পাওয়ার জন্যই তো আজ এসেছো, তাই তো?”
মিস্টার আমানের চোখে সেই ধীর জ্যোতি, যে জ্যোতির ভেতরে শক্তিও আছে, জয় করার তৃষ্ণাও।

“তোমাদের মধ্যে যদি কিছু অবশিষ্ট থাকে, আমি বাধা হবো না।”
“তবে একবার শুধু বলো, তৃষা এখন কার পাশে দাঁড়াতে চায়।”

আরিয়ানের মুখ শুকিয়ে গেল।

এদিকে তৃষা সবার মাঝে থেকেও চুপচাপ চোখে খুঁজছে—মিস্টার আমান আর আরিয়ান কোথায় গেলেন? কেন দুজনেই উধাও?

তখনই কেউ এসে জানালো, মিস্টার আমান একটু বাইরে গেছেন… আর সাথে ছিলেন এক অপরিচিত যুবক।

তৃষার বুকটা ধক করে উঠলো।

মিস্টার আমান কিছুটা কড়া গলায় বললেন,
— "আমি তৃষাকে বিয়ে করেছি, সেটা কোন পরিস্থিতিতে হয়েছে—সেটা এখন আর লুকোনোর কিছু নেই। সবাই জানে। কিন্তু তুমি, আরিয়ান, তুমিই বলো... তৃষার মতো একটা মেয়ের বিয়ের দিনে তুমি হঠাৎ করে উধাও হয়ে গেলে, কাউকে কিছু না জানিয়ে! কেন? এত গুরুত্বপূর্ণ দিনে তুমি এমন করলে কেন?"

আরিয়ান কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। চোখ দুটো নীচু, কণ্ঠে গাম্ভীর্য। ধীরে ধীরে বলল,
— "আমি… আমি ভুল করেছিলাম। আসলে কিছু সাইড বিজনেসে জড়িয়ে পড়েছিলাম। তখন বুঝিনি যে যাদের সাথে হাত মেলাচ্ছি তারা ঠিক মানুষ নয়। কাগজে-কলমে সব ঠিক ছিল, কিন্তু আসলেই তারা অপরাধ জগতে জড়িত। আর যখন বুঝলাম, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। এখন তারা আমাকে ব্ল্যাকমেইল করছে… আমার কিছু দুর্বলতা ধরে ফেলেছে।"

মিস্টার আমান গম্ভীর মুখে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। তারপর একটু নিচু গলায় বললেন,
— "তুমি এসব তৃষাকে বলোনি কেন? সে জানার অধিকার রাখে। তুমি হয়তো ওকে কষ্ট দিতে চাওনি, কিন্তু তুমি যেটা করছো, সেটা ওকে আরও কষ্ট দিচ্ছে।"

আরিয়ানের মুখ নিচু হয়ে গেল। তার চোখে ছিল দুঃখ, অপরাধবোধ আর অনুশোচনা।
— "আমি শুধু চাইছিলাম ও সুখে থাকুক… ও যেন আমার জন্য কখনো অপমানিত না হয়। তাই সব একা সামলাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি, একা থাকা মানেই দুর্বল হয়ে পড়া…"

মিস্টার আমান আর কিছু বললেন না। কিন্তু তার চোখে একধরনের দায়িত্ববোধ জেগে উঠল—তৃষার এই নতুন জীবনের পথে, পুরনো সম্পর্কের ছায়া মুছে না দিয়ে, বরং সত্যের আলো এনে সবকিছু স্পষ্ট করা দরকার।

মিস্টার আমান তখন একটু সামনে এগিয়ে এসে শান্ত গলায় বললেন—
— “আপনি এখনও আমার কোম্পানির সাথে তিন বছরের চুক্তিতে আছেন, আরিয়ান। আমি সেই চুক্তি এখনো বহাল রাখছি।"

আরিয়ান কিছুটা অবাক হয়ে বললো,
— “মানে আপনি এখনও…?”

মিস্টার আমান মাথা নাড়লেন,
— “হ্যাঁ, আপনি যে ভুল করেছেন, তার মূল্য আপনি ইতিমধ্যেই অনেকটা দিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, আপনি নিজেকে শুধরে নিতে পারবেন। তাছাড়া, আমার কিছু গুরুত্বপূর্ন কথা আছে—তৃষাকে নিয়েও… কাল আমি আপনাকে মেসেজে জানিয়ে দেব কখন কথা হবে। তৃষাও থাকবে সেই আলোচনায়।”

এক মুহূর্ত নীরবতা।
তারপর মিস্টার আমান দৃঢ় গলায় বললেন—
— “আপনি ভরসা রাখতে পারেন আমার ওপর, আরিয়ান। এই সম্পর্কগুলো যতই জটিল হোক, আমি ন্যায়ের পাশে থাকব।”

আরিয়ান এক গভীর নিঃশ্বাস ফেলে মাথা ঝুঁকিয়ে সম্মান জানালেন। তার মনে প্রথমবারের মতো একটা আশার আলো জ্বলল—হয়তো সব কিছু এখনও শেষ হয়ে যায়নি।

চলবে......
 


 

Comments

    Please login to post comment. Login