Posts

গল্প

গল্পঃ ভূতের কান্না#

July 14, 2025

গল্পের সমারোহ

Original Author লেখকের নাম অজানা

Translated by বাংলা

112
View

 পৌলইয়া বাগানবাড়ির কবরস্থান

পৌলইয়া গ্রাম, লাকসাম উপজেলা, কুমিল্লা জেলা। এই গ্রামের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে পুরনো এক মজুমদার বাড়ি—যার নাম “বড় দাদা সোলাইমান মজুমদার এর বাগানবাড়ি”। বাড়ির আশেপাশে সবুজ গাছগাছালিতে ঘেরা বিশাল এক বাগান। আর সেই বাগানের পশ্চিম পাশে রয়েছে একটি পুরোনো কবরস্থান, যেখানে শায়িত আছেন বহু পূর্বপুরুষ। সবচেয়ে পরিচিত সেই কবর—আছিফের দাদার মা, বড় আম্মার।

গ্রামের মানুষেরা বলে, এই কবরটা শুধু একটা কবর না—এটা নাকি এক অভিশপ্ত আত্মার ঘর।

আছিফ, ২৩ বছরের এক তরুণ, মাছের ব্যবসা করে। ঢাকা থেকে কয়েকদিনের ছুটিতে এসেছে গ্রামের বাড়িতে। রাতে গ্রামের নীরবতা, বাতাসে পাতার কাঁপন, দূরে শেয়ালের হাহাকার—সব কিছু মিলিয়ে পরিবেশটা কেমন যেন অশান্ত মনে হচ্ছিল।

এক রাতে, হালকা বৃষ্টি শেষে আচমকা ঘুম ভেঙে যায় আছিফের। সে শুনতে পায় একটা মেয়ের কান্নার আওয়াজ… যেন কবরের দিক থেকে ভেসে আসছে। সে প্রথমে ভয় পায়, কিন্তু কৌতূহল তাকে ঠেলে দেয়।

হাতে একটা টর্চ নিয়ে বের হয় আছিফ। বাগানের ভেজা ঘাস পেরিয়ে পৌঁছায় পশ্চিম প্রান্তে—সেই কবরস্থানের পাশে।

টর্চ জ্বালাতেই তার চোখে পড়ে—একটা সাদা শাড়ি পরা নারী, কবরের পাশে বসে কাঁদছে। তার মুখ নিচু, চুল এলোমেলো… কোনো শব্দ নেই, শুধু কান্না।

“আপনি কে?” সাহস করে জিজ্ঞেস করে আছিফ।

মেয়েটি মুখ তোলে। মুখটা যেন মাটির মতো ধূসর, আর চোখদুটি লাল হয়ে জ্বলছে অন্ধকারে। ঠান্ডা গলায় সে বলে—

“আমার কবর ঠিকমতো হয় নাই… আমি এখানেই বন্দি…”

আছিফ ভয়ে দৌড়ে ফিরে আসে। সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। সকালে বড় দাদাকে সব বললে তিনি চুপ হয়ে যান, তারপর বলেন—

“তোর বড় আম্মারে কবর দেওয়ার সময় মাটিতে পানি জমে ছিল। সেদিন ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছিল। ঠিকমতো চাপা দেওয়া যায় নাই। তখন থেকেই মাঝে মাঝে কান্নার আওয়াজ শোনা যায়…”

পরে পরিবারের লোকজন মিলে কবরটা সংস্কার করে। হুজুর ডেকে দোয়া পড়ানো হয়। তারপর থেকে আর কেউ সেই কান্নার শব্দ শোনে না।

কিন্তু গ্রামের এক বৃদ্ধ এখনও মাঝে মাঝে বলেন,
“মাটি ঠিক হইছে ঠিকই… কিন্তু আত্মার অভিমান কি এত সহজে মাফ করে?”

ভূতের কান্না 

Comments

    Please login to post comment. Login