গার্ডদের খোঁজা-খুঁজির আওয়াজ একটু দূরে সরে গেছে, কিন্তু রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে গাছের পাতার খসখস আর হালকা বাতাসে তৃষার নিঃশ্বাসের শব্দ স্পষ্ট।
ভয়ে, আবেগে, আর অজানা এক শিহরণে—
তৃষা জড়িয়ে ধরে আরিয়ানকে শক্ত করে।
আরিয়ান তখন ফিসফিস করে বলে,
— “তৃষা… আমি আর পারছি না…
তুমি এতটা কাছে…
আমার নিজের ওপর কোনো কন্ট্রোল নেই আর…”
তৃষা লজ্জায় চোখ নিচু করে ফেলে, কিন্তু হাত সরায় না।
তার বুকের স্পন্দন যেন আরিয়ান শুনতে পাচ্ছে।
ওইদিকে দুইটা গার্ড একে অপরকে বললো,
— “হারে, কেউ নেই বোধহয়…”
— “চল, বন্ধ করে দিই।”
পার্কের মূল গেট চ্যাঁচ করে বন্ধ হয়ে গেল।
একটু পর আরিয়ান ফিসফিস করে বলে,
— “চলে গেছে… কিন্তু আমাদের এখন এভাবে না, একটু আড়াল করে, সতর্ক হয়ে বের হতে হবে, ঠিক আছে?”
তৃষা আস্তে করে ওর বুক থেকে নিজেকে আলগা করলো।
কিন্তু আরিয়ান ঠিকই বুঝে ফেলল,
তৃষার চোখে সেই চাপা আগুন,
চাহনিতে লুকানো কিছু একটা।
আরিয়ান কিছু একটা বলতে যাবে,
তার আগেই—
তৃষা জড়িয়ে ধরে আরিয়ানের ঠোঁটে গভীর এক কিস…
এতটা হঠাৎ, এতটা তীব্র…
দুজনেই আর নিজেদের সামলাতে পারলো না।
তৃষা নিজেই বেসামাল, তার শরীর কাঁপছে।
আরিয়ানের গলা শুকিয়ে আসছে—
মন বলছে "চাই",
বিবেক বলছে "এখন নয়"।
আরিয়ান ভাবছে,
— “তৃষার ভিতরে আগুন… এই আগুন আমি না থামালে সবকিছু ছাড়িয়ে যাবে…”
কিন্তু হঠাৎ, তৃষা নিজেই আরিয়ানকে ধরে, চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,
— “আর কয়েকটা দিন… কষ্ট করো… বিয়ের আগে না… আজ এই পর্যন্ত…”
আরিয়ান চোখ বন্ধ করে মাথা নিচু করে—
ভিতরের আগুন ধীরে ধীরে শান্ত করে,
তৃষাকে জড়িয়ে ধরে।
এই কষ্টের মাঝেও মনে একটা শান্তি…
তৃষা ওকে সত্যিই ভালোবাসে।
ওই রাতটা আরিয়ানের মনে হাজার বার ফিরে আসে।
তৃষার স্পর্শ, আবেগ, কাঁপা কণ্ঠ…
আর সেই ইচ্ছা, যা থামানো কঠিন।
ফ্ল্যাশব্যাক শেষ।
আরিয়ান এখন লেকের ধারে বসে,
পা ডুবিয়ে রেখেছে ঠান্ডা কাদামাটির জলে।
চোখে এক ধরনের হাসি…
কিন্তু সেই হাসি দ্রুত মিলিয়ে যায়।
বাস্তবতায় ফিরতেই—
সে দেখে, হাতে ধরা মদের বোতল—
আর হঠাৎ এক চুমুকে সেটা মুখে পুরে দিলো।
চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল কষ্টের পানি।
ফিসফিস করে বলতে লাগলো,
— “তৃষা… আমি তোমাকে পাগলের মতো ভালোবাসি…
আজ তুমি অন্য কারো…
তুমি নিজেকে…
তার কাছে… ধরতে দিলে?
কীভাবে পারলে?”
আর নিজেকে বলতে লাগলো,
— “আমি তো এখনো একা…
আমি তো কাউকে…
স্পর্শ করিনি…
আমি তো যাইনি…
আমি তো যাইনি…”
তার দৃষ্টি তখন ধীরে ধীরে পানির দিকে যায়।
সেই অন্ধকার জলের মাঝে,
একটা মুখ ভেসে ওঠে…
হেনা।
সেই রাতের সেই মুহূর্ত,
পানিতে ধীরে ধীরে তলিয়ে গেলো মদের বোতলটা।
আর তার চোখে—
ফিরে এলো সেই রাত।
হেনার ঘরে…
হালকা আলো, পর্দা দুলছে,
হেনার চোখে একধরনের প্রলোভন…
আরিয়ান তখনও দ্বিধায় ভুগছিল।
কিন্তু হেনা এগিয়ে আসে,
নিজেই আরিয়ানের হাত ধরে তার বুকের কাছে রাখে।
আর তখন—
আরিয়ান বুঝতে পারে, ওটা ভালোবাসা না…
ওটা একধরনের দাবি।
একটা শরীরের দাবি।
হেনা হাসতে হাসতে বলেছিল,
— “তুমি তো বলেছিলে, শুধু মন নয়, শরীরও তোমার চাই। এখন তুমি যদি থেমে যাও, তাহলে দায় কার?”
আর ঠিক তখন—
আরিয়ানের হাত ঢুকে পড়েছিল হেনার বুকের ভেতরে।
ধীরে ধীরে যা হবার তাই হয়ে গেলো, যা আরিয়ান চায় নি।
এরপর বাস্তবে ফিরে এলো আরিয়ান, আর ভাবতে লাগলো কি ভুল করলাম আমি। সব আমার দোষ।
এরপর মনে পড়ল, হেনা কিভাবে সাহায্য করলো পালাতে। হেনার বুকের ভিতর হাত দিয়ে চুরি বের করা, মোবাইল থেকে হেনা সব ডিলেট করে দিলো, তারপর আবার হেনা নিজেকে জখম করে আমাকে পালাতে সাহায্য করলো।
আরিয়ান গভীর এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উঠল—
“ওহফ…”
চোখ দুটো লাল হয়ে উঠেছে,
মাথাটা ভার হয়ে আছে যেন অসংখ্য স্মৃতির বোঝা নিয়ে।
সে জানে না—তার শরীরটা কষ্টে না পাপে ভারী হয়ে গেছে।
হঠাৎ হেনার মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠল।
সেই শান্ত মুখ,
যেখানে লুকিয়ে ছিল হাজারটা না বলা কথা…
আর ছিল একধরনের বোবা সম্মতি—
যা তাকে সেদিন কিছু না বলেই সব দিয়ে দিল।
আরিয়ান মনে মনে ফিসফিস করে উঠল—
“হেনা… তুই কেমন আছিস এখন?”
তার বুকের ভেতর ধক করে কেঁপে উঠল।
সেই পতিতালয়ের ঘর,
সেই নীরব দৃষ্টি,
সেই অস্পষ্ট আলোয় ভেসে ওঠা হেনার চোখ… সব মনে পড়তে লাগল।
আরিয়ান জানে না,
হেনা এখন কেমন আছে,
সে কাঁদছে, নাকি সেই রাতের পর সবকিছু চুপচাপ ভুলে গিয়ে আবার আগের মতো হয়ে গেছে।
কিন্তু সে এটুকু জানে—
সেই রাতে শুধু সে একা ছিল না। হেনাও ছিল ভেতরে ভাঙা, নীরব, অথচ সহনশীল।
আর এখন…
হঠাৎ বুকের ভেতর একটা টান পড়ল।
“হেনা… সত্যিই তুই কেমন আছিস?”
চলবে........