Posts

উপন্যাস

তোমার জন্য....(পর্ব - ৭১)

July 15, 2025

Boros Marika

51
View

আরিয়ান পানির দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলল,
— “হেনা… তুই এখন কেমন আছিস?”
— “তুই তো একমাত্র বুঝেছিলিস আমার অন্ধকারটাকে…”

হঠাৎ মনে এক পাগলামো এল,
যাই… হেনার কাছে যাই।

যদি কিছু সময় তার বুকের ভেতরে মাথা রাখি,
সব ভুলে যাই…

কিন্তু ঠিক তখনই নিজের শরীরের উত্তেজনা, মনের অস্থিরতা টের পেলো।

“না… না! এখন গেলে… আমার যা অবস্থা…
আবার ভুল করে ওর সাথে… সহবাস হয়ে যাবে…”

আর তখন…
এইবার আর ফিরতে পারবে না।

কিন্তু নেশায় যেভাবে ঘিরে আছে আরিয়ানকে, ওর কোনো হুশ নেই তৃষাকে কিছুক্ষণ এর জন্যে ভুলে হেনার কথা ভাবছে।

আবার বলা শুরু করলো,,,,,,
তার মন একবার আবার বললো—
"যাই হেনার কাছে… দেখি কেমন আছে ও।"

পরক্ষণেই  আবার থেমে গেল।

— "না... আমি এখন যদি যাই... যদি ওর সামনে যাই এই দুর্বল অবস্থায়... আমি আবার ভুল করে ফেলবো।
আমি আবার ওকে দেহ দিয়ে ভালবাসা খুঁজবো। আর সেটা হবে পাপ... তৃষার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা।"

আরিয়ান তখন দুই হাতে মুখ ঢেকে একটা অজানা আর্তনাদ করল।
চোখে পানি...
আর ঠোঁটে একটুকরো ফিসফিস কণ্ঠ...

— "হেনা... তুই কি এখনও আমার মতোই পোড়া মানুষ হয়ে গেছিস...? নাকি... নাকি এখনও তুই নিজেকে আগলে রাখতে পেরেছিস...?"

এভাবে বরবরাতে থাকলো। খুব করুন অবস্থার ভিতর দিয়ে যাচ্ছিল আরিয়ান।

ওই দিকে হেনা...

একটা অন্ধকার ঘরের ভেতরে কাঁপতে কাঁপতে বসে আছে।
চোখ মুখ ফুলে গেছে, ঠোঁট ফেটে রক্ত বেরিয়েছে। শরীরজুড়ে নীলচে দাগ, মারের ছাপ।
ওর পরনের কাপড়টাও ছেঁড়া—লজ্জায় আর কষ্টে ও নিজেকেই দেখতে পারে না।

হঠাৎ...

“ঠাস্!”
একটা দরজার লক খুলে যাওয়ার শব্দে পুরো শরীরটা সিঁটকে উঠল।
হেনার চোখ বড় হয়ে গেলো ভয়ে।
“না… আবার না…”

ধীরে ধীরে রতন ঢুকলো ঘরে।
চোখে অন্ধকার রাগ, মুখে হিংস্র হাসি।

সে হেনার সামনে এসে হঠাৎ করেই ওর চুলের মুঠি ধরে টেনে তুলল—
"বল! আরিয়ান বাবুর ঠিকানা জানিস তো? বল!"

হেনা কাঁদতে কাঁদতে বললো,
"আমি জানি না! সত্যি বলছি… ও তো আমায় মেরে ফেলে চলে গেছে… তুমি তো দেখেছো!"

রতন হুংকার দিলো,
"মিথ্যে! সব মিথ্যে! তুই আরিয়ানের জন্যই আমার টাকার ডিম নষ্ট করছিস, ভাগাইতেছিস!"
এই বলে পিটাতে লাগলো ওকে,
পিঠে, গালে, হাতে… হেনা আর শব্দ করতে পারছিল না—শুধু শরীরটা একবার এদিক একবার ওদিক গড়িয়ে পড়ছিল।

এরপর হঠাৎ থেমে গিয়ে বলে,
"চিন্তা করিস না… তোকে দিয়ে উশুল করমু। এক বড় স্যারের খোঁজ লাগাইছি—তোর বয়স কম, মাত্র বিশ বছর… অনেক দাম পাব!"
চোখে লোভ, গলায় বিষ।

"এইখানে তোকে আর রাখমু না—তোরে বিক্রি করমু…"
এই বলে দরজা বন্ধ করে বেরিয়ে গেলো।

হেনা চুপ…
একটু পরে যেন প্রাণ খুলে কাঁদতে শুরু করল।
নিজের বুকের ওপর মাথা রেখে গড়িয়ে পড়ল মাটিতে।

"স্যার… তুমি আমায় ভালো না-বাসলেও… এইখান থেকে মুক্তি দিও… আমি কী করবো… কোথায় যাবো… আমি তো হারায়ে গেছি…"

আকাশ ফুঁপিয়ে কাঁদছিল সেদিন—
কিন্তু নিচে হেনার কান্না শোনার মতো কেউ ছিল না।
শুধু দেয়ালের ছায়াগুলো চুপচাপ তাকিয়ে ছিল,
একটা মেয়ে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে… অথচ কেউ জানে না, সে ছিল একদিন একটা হৃদয়ের পূর্ণ অধিকারী।

আরিয়ান হঠাৎ মোবাইলের স্ক্রিনে এক অচেনা নাম দেখে একটু থমকে গেলো।

"আমজাদ?"

পালটা ভাবল, “এখন আবার এই লোক কী চায়?”

ফোনটা কানে নিতেই
ওই পাশ থেকে এক কর্কশ গলা—
"আমি আমজাদ বলছি আরিয়ান বাবু... কী খবর?!"

আরিয়ান চোখ কুঁচকে গেল।
মাথাটা গরম হয়ে উঠলো, কিন্তু গলার স্বর ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করল।
"তুমি আবার ফোন করছো কেন?"
সাথে একটা চাপা ভয়ও ঢুকে পড়ল গলার মধ্যে।
"আমি তো… আমি তো তোমার সব কথা শুনেছি… এখন আর কী করবো বলো?"

ওই পাশে কিছুক্ষণ নীরবতা…
তারপর হঠাৎ বিকট এক হাসি—
"হাহাহাহা… আর কী করবা জানি না, কিন্তু এখন সব আমার হাতে, আরিয়ান বাবু। কারে ভালোবাসো, কারে ফেলে এসেছো, কার কাছে গিয়েছিলে, কার শরীরে ছিলে—সব আমি জানি।"

আরিয়ানের বুক ধক করে উঠলো।
দাঁতে দাঁত চেপে ফোন ধরে থাকলো।
"তুমি কী বলতে চাও আমজাদ?"

আমজাদের গলাটা তখন ঠান্ডা হয়ে গেলো,
"তোমার মত পাপী ছেলে প্রেম করে না… খেলাধুলা করে। এবার খেলার পালা আমার… খুব শীঘ্রই দেখা হবে।"

“টুক”
কল কেটে গেল।

আরিয়ান দাঁড়িয়ে থাকলো একদম নিশ্চুপ।

তার বুকের ভিতর যেন ধ্বসে পড়ছে সব।
মনে পড়ছে হেনা… মনে পড়ছে তৃষা… আর মনে পড়ছে সেই রাত, যেখানে সব নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিল।
আর এখন? এখন এই আমজাদ কে?

কোনো কথা নেই,
শুধু একটা ভয়, একটা গ্লানি আর একটা গোপন সত্য—
যা হয়তো তার সবকিছু শেষ করে দিতে চলেছে।

চলবে......
 


 

Comments

    Please login to post comment. Login