আমি তখন সদ্য কলকাতায় চাকরি পেয়ে নিউটাউনের এক ফ্ল্যাটে একা থাকতাম। অফিস থেকে ফিরতে ফিরতে রাত ১০টা বাজত। ফ্ল্যাটটা বড়, আধুনিক, কিন্তু একটা অদ্ভুত ঠান্ডা ভাব সবসময় লেগে থাকত।
প্রথম কিছুদিন ভালোই কাটছিল। কিন্তু একটা সময়ের পর রাতের বেলা ফ্ল্যাটে অদ্ভুত আওয়াজ শুনতাম—জ্যামা ঘষাঘষির মতো, হালকা হাঁটার শব্দ, কেউ যেন ফিসফিস করে ডাকে—“এই...এই…”
একদিন রাতে ঘুমের মধ্যে চোখ খুলে দেখি ঘরের কোণায় একটা ছায়ামানব দাঁড়িয়ে। গা ঢাকা কালো ছায়া, মুখ নেই, কিন্তু দুটো লাল জ্বলজ্বলে চোখ! আমার বুকের মধ্যে কাঁপুনি ধরে গেল। চিৎকার করতে চাইলেও গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোল না। চোখের পলকে সে ছায়াটা সামনে এসে আমার মুখের কাছে মাথা ঝুঁকাল... আমি অজ্ঞান হয়ে গেলাম।
পরদিন সকালে ঘুম ভাঙতেই দেখি, বুকে আচড়ের দাগ। ভেবেছিলাম দুঃস্বপ্ন হবে, কিন্তু তখন থেকেই প্রতি রাতে ওই ছায়াটা আসতে লাগল।
এক রাতে, সাহস করে দরজার নিচে গঙ্গাজলের শিশি রাখলাম। কিন্তু ওই রাতে সে আরও ভয়ঙ্কর রূপে এলো। এবার সে শুধু ছায়া নয়—একটা বিকৃত নারীস্বর ফিসফিস করে বলল, “তুই জল এনেছিস? এবার আমি আসব তোর ভিতর দিয়ে…”
ঘুম ভেঙে দেখি ঘর অন্ধকার, কিন্তু দরজা ভেজা, যেন কেউ জল ঢেলে দিয়েছে। গঙ্গাজলের শিশি ভাঙা, ফ্লোরে একটা তাজা পায়ের ছাপ—কিন্তু উলটো দিকে, দরজা থেকে আমার দিকে আসা!
সেই রাতের পর থেকেই আমি ফ্ল্যাট ছেড়ে দিই।
আজও মাঝেমাঝি রাতে ঘুম ভাঙে, বুক ধড়ফড় করে। আয়নার সামনে দাঁড়ালে মনে হয়, আমার পেছনে কেউ একজন দাঁড়িয়ে... লাল চোখে তাকিয়ে আছে...
ভৌতিক অভিজ্ঞতা নিয়ে যারা দুর্বল চিত্তের, তাদের জন্য এ গল্প নয়। যাদের রাতের নীরবতা একটু বেশিই গভীর লাগে, তারা আয়নার সামনে দাঁড়ানোর আগে দু’বার ভাবুন।
