আরিয়ান কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকলো। চারপাশে নীরবতা, কিন্তু বুকের ভেতরে যেন বজ্রপাত হচ্ছে বারবার। সে ঠোঁট কামড়ে ফোনটা আবার ডায়াল করলো—আমজাদ।
কলটা কানে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সোজা বললো,
"আমি এখনই দেখা করতে চাই।
ওই পাশে সামান্য একটা নিঃশ্বাস… তারপর ঠান্ডা গলায় আমজাদ বললো,
"আচ্ছা, আমি আসছি।"
আরিয়ান বললো,
"আমি লোকেশন দিচ্ছি, এখানেই আসেন।"
কিন্তু এবার আমজাদের কণ্ঠটা বদলে গেলো… যেন ঠান্ডার মধ্যে লুকিয়ে আছে এক ভয়ঙ্কর আগুন।
"লোকেশন দিতে হবে না আরিয়ান বাবু… আমি জানি তুমি এখন কোথায় আছো।"
আরিয়ান চমকে উঠলো। গলার স্বর শুকিয়ে গেল।
"ড্রাইভার আর গার্ড নিজেদের মধ্যে কথা বলছিল—
—“আর কত দেরি হবে ভাই?”
—“ঘড়ি দেখ, একটা বাজে প্রায়। তোমার স্যার কি…?”
হঠাৎ কাঁপিয়ে দিয়ে একসাথে কয়েকটা কালো গাড়ি গেটের সামনে এসে দাঁড়াল। ব্রেকের শব্দ, ধুলা, আর এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা যেন পুরো এলাকা ঢেকে ফেলল।
গার্ড আর ড্রাইভার দু’জনেই চমকে উঠে দাঁড়িয়ে গেল।
গাড়ির সামনের দরজা খুলে এক লোক বেরিয়ে এলো। তার গায়ে কালো ওভারকোট, চোখে কালো চশমা, মুখে হালকা দাড়ি। পাশে থাকা লোকজন গম্ভীর গলায় বললো—
“গেট খোল।”
আর কোনো প্রশ্ন না করে গার্ডরা দ্রুত গেট খুলে দিল। যেন ওই লোকটির ভয় এবং প্রভাব বাতাসকেও ভারী করে তুলেছে।
কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই গাড়িগুলো ঢুকে পড়লো এবং সোজা লেকের পাড়ের দিকে চলে গেলো—সেই জায়গায় যেখানে আরিয়ান চুপচাপ বসে ছিল, নিজের ভেতরেই ডুবে।
আরিয়ান তখনো জানে না—এই আগমন তার জীবনের আরেকটি মোড় ঘোরাতে চলেছে।
কিভাবে…?"
“খুব তাড়াতাড়ি দেখা হবে…”
—এই বলে ফোনটা কেটে গেল।
আরিয়ান একদম নিশ্চুপ হয়ে গেলো। বুকের ভেতরটা যেন হাহাকার করে উঠলো। সে ধীরে ধীরে চারদিকে তাকালো, জানলার দিকে গেলো… বাইরে কিছুই নেই, কিন্তু সে যেন কারো নজর অনুভব করলো।
নিজের মনে মনে বললো—
"আমি… ফেঁসে গেছি।"
এবার আর কোনো ভুল করার সুযোগ নেই।
তৃষা, হেনা, আমজাদ—সব কিছু যেন এক ভয়ঙ্কর চক্রে জড়িয়ে গেছে।
আরিয়ানের চোখে ধীরে ধীরে একধরনের ভয়, একধরনের প্রতিশোধের আগুন জমে উঠতে থাকলো।
সে জানে—এই খেলা সে নিজে শুরু করেনি,
কিন্তু শেষ তাকে করতেই হবে।
এরপর আমজাদ এর কাছ থেকে যা জানলো, তাতে করে আরিয়ানের পায়ের নিচের মাটি সরে গেলো।
চলবে.......