Posts

উপন্যাস

তোমার জন্য....(পর্ব - ৭৩)

July 16, 2025

Boros Marika

56
View

আমজাদ চুপ করে গেলো। হালকা বাতাসে তার ওভারকোটের প্রান্ত দুলছিল। সামনে বসা আরিয়ানের চোখে ধরা পড়ছিল গভীর একটা কষ্ট আর অপরাধবোধ।

আরিয়ান মুখ নামিয়ে ফিসফিস করে বললো,
“আপনি... আপনি আমাকে বলেছিলেন—আমি কার শরীরে ছিলাম?”

এই কথা বলার পর তার কণ্ঠটা ভার হয়ে এল, মুখ লজ্জায় থমকে গেল। চোখে একটা অদ্ভুত জ্বলজ্বলে দৃষ্টি।

আমজাদ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল আরিয়ানের দিকে। তারপর......

আমজাদ হালকা হাসল।
“তুমি চেয়েছিলে তৃষা হোক, কিন্তু ভাগ্য হেনাকে এনে দিয়েছে তোমার পাশে। আর আজও তুমিই জানো না—কার সাথে মিলনের সেই মুহূর্ত কেটেছে। হয়তো ভুল কারো শরীরকে জড়িয়ে ধরে তুমি ভেবেছো, সে তোমার ভালবাসা…”

আরিয়ান ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল আমজাদের মুখের দিকে।

তখন আমজাদ নিচু গলায় বললো—
“আরিয়ান, এই জায়গাটা এমন… এখানে শরীর মেলে ভালোবাসা নয়, বরং একঘেয়েমি। কিন্তু তোমার চোখে আমি ভালোবাসার খোঁজ দেখেছি। এখন আমি তোমাকে একটা সুযোগ দিতে চাই—তুমি খুঁজে বের করো কার জন্য তোমার বুক ব্যথা করে, কার চোখে তোমার শান্তি, আর কার ছোঁয়ায় তোমার আগুন জ্বলে ওঠে।”

আরিয়ানের চোখ তখন পানিতে ভিজে গেছে। সে বুঝতে পারছিল—নিজেকে ধ্বংস করতে করতে সে কোন ধ্বংসস্তূপে এসে পৌঁছেছে।

চুপচাপ বসে থাকা আরিয়ান কাঁপা গলায় বললো—
“তৃষা… আমি ওকে নিজের করবো। কিন্তু হেনাকে… ওর খবর কিছু জানো?”

আমজাদ তখন একটু চুপ করে গেল। তার মুখে হালকা গম্ভীরতা।
“হেনা… ও এখন এমন এক জায়গায় আছে, যেখানে সময়ের প্রতিটা মুহূর্তেই ওর শরীর ক্ষয়ে যাচ্ছে। তুমি চাইলে আমি ঠিকানাটা দিতে পারি।”

আরিয়ান চমকে উঠলো।
“তুমি জানো কোথায় ও?”

আমজাদ মাথা নাড়লো,
“জানি। কিন্তু তুমি প্রস্তুত তো?”

এই প্রশ্নে আরিয়ানের চোখ স্থির হয়ে গেল।
সে জানতো—এই উত্তরের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।

আমজাদ চোখ সরিয়ে নিল কিছুক্ষণের জন্য। লেকের শান্ত পানিতে চাঁদের আলো পড়ে একটা অদ্ভুত নিষ্পাপ ছায়া তৈরি করছিল, যেন এই অন্ধকার জগতেও কোথাও একটু সত্যি, একটু স্পর্শযোগ্য অনুভূতি রয়ে গেছে। তারপর ধীরে ধীরে আবার তাকাল সে আরিয়ানের দিকে।

আরিয়ান মুখ নামিয়ে ফেলেছিল। তার কণ্ঠ জড়িয়ে আসছিল, চোখে ছিল ঘুম-ভাঙা পাপবোধ আর অপরাধে ডুবে যাওয়া এক পুরুষের অসহায়তা।
সে বললো, কাঁপা গলায়,
— “আমি কার শরীরে ছিলাম, সেই কথা আপনি আমাকে কেন বলেছিলেন...?”

এই প্রশ্নটার ভার যেন পুরো পরিবেশে নেমে এল। বাতাস স্তব্ধ হয়ে গেল, আরিয়ানের কণ্ঠে ছিল অনুশোচনা, সংশয়, আর একটু ভয়। যেন নিজেরই উত্তর জানতে চাইছে না সে।

আমজাদ তখন তাকাল আরিয়ানের চোখে, চুপচাপ। তারপর নিচু গলায় বললো—
— “তুমি কি সত্যি জানতে চাও, আরিয়ান? যদি উত্তরটা তোমার জীবনটাই পাল্টে দেয়? যদি সেই রাতটা শুধু শরীরের ছিল না, যদি সেই শরীরটাতে জড়িয়ে ছিল কারও কান্না, কারও নীরব চিৎকার?”

আরিয়ান শ্বাস বন্ধ করে ফেলেছিল প্রায়। তার চোখে জল এসে গিয়েছিল, কিন্তু সে তাকিয়ে ছিল আমজাদের দিকে—উত্তরের অপেক্ষায়।

আমজাদ একটু হেসে বললো—
— “তুমি যার কথা ভাবছিলে, সে হয়তো তোমার পাশে ছিল না। আর যার শরীরের কাছে তুমি ছিলে, সে হয়তো কাঁদছিল তোমার ছোঁয়ায়… তবু কিছু বলার অধিকার ছিল না ওর।”

আরিয়ান কেঁপে উঠলো। ঠোঁট শুকিয়ে এলো।


আর এই নিঃশব্দতাই বলে দিল সব।
আরিয়ানের বুকের ভেতর এক অজানা ঢেউ উঠল—লজ্জা, আতঙ্ক, দুঃখ আর কোনো এক বিষণ্ণ অনুভব।
হেনা...

আরিয়ান ফিসফিস করে বলল,
— “ও এখন কোথায়… হেনা কেমন আছে…?”

চলবে......

Comments

    Please login to post comment. Login