Posts

উপন্যাস

তোমার জন্য....(পর্ব - ৭৪)

July 16, 2025

Boros Marika

55
View

কিছুক্ষণ দু’জনে চুপচাপ তাকিয়ে থাকলো একে অপরের চোখে, যেন শব্দের চেয়ে অনেক বেশি কিছু বলতে পারছে ওই দৃষ্টি।

আমজাদ মনে মনে ভাবলো, বেচারা… হয়তো সত্যিই ভিতর থেকে ভেঙে পড়েছে।

আরিয়ান হঠাৎ গলা খুলে বললো,
— “আমি না বুঝে আপনার সাথে ব্যবসা করেছি। কিন্তু তারপর আপনি যা বলেছেন, আমি সব করেছি। এমন কি… আমি বিয়ের রাতেও, আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাতে, আপনার কাজ করতে গিয়ে… আমার ভালোবাসার মানুষটাকে হারিয়ে ফেলেছি।”

এই কথাগুলো শুনে আমজাদের চোখে এক মুহূর্তের জন্য নরম ভাব ফুটে উঠলো। সে ধীরে বললো,
— “আমাদের ব্যবসা কালো, অবৈধ—এই কথা সত্যি। কিন্তু আমি একটা উশুল মেনে চলি। কখনও কাউকে ধোঁকা দিয়ে কাজে নিই না। তুমি নিজে এসেছিলে, আমি ঠকাইনি। এখন তুমি যা চাও, বলো। যদি তোমার পছন্দের মানুষ তৃষা—তাকে তোমার জন্য তুলে আনবো।”

আরিয়ানের চোখ একদম লাল হয়ে উঠলো। চোয়াল শক্ত করে রাগে উঠে দাঁড়াল সে।

— “না! এটা করবে না তুমি। তুমি জানো না আমি কাকে ভালোবাসি! আর তুমি যা বলছো, সেটা ভালোবাসা না—অপমান! ওকে ছুঁতেও পারবে না।”

আর তার কণ্ঠে যে আগুন, সেটা এতটাই সত্য আর জ্বলন্ত ছিল যে আমজাদ কিছুক্ষণ চুপ করে গেলো।

নিশব্দে বাতাসে যেন বিষ মিশে আছে। লেকপাড়ের সেই নির্জন জায়গাটায় আরিয়ান আর আমজাদ বসে আছে, কিন্তু মনে হচ্ছে তাদের চারপাশে দমবন্ধ করা উত্তেজনা ছড়িয়ে আছে।

আরিয়ান একটু থেমে, নিচু গলায় বললো,
— “আপনি হেনার কথা বলেছিলেন কেনো? সে কেমন আছে?”

আমজাদ ঠোঁট বাঁকিয়ে একটু হেসে বললো,
— “হেনার মতো মেয়েরা ভালো থাকে নাকি আরিয়ান বাবু? ওদের কপালে তো শুধুই দুঃখ লেখা থাকে। আর তুমি হেনার কথা জানতে চাইছো কেনো? আমার কাছে অনেক ভালো মেয়ে আছে। চাইলেই পরিচয় করিয়ে দিতে পারি।”

আরিয়ান মুখটা একটু শক্ত করলো। রাগ আর বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট হলেও কিছু বললো না।

আমজাদ তখন হালকা ভঙ্গিতে হেসে বললো,
— “আরিয়ান বাবু, তুমি আমার অনেক কাজে সাহায্য করেছো। আমার সব না হলেও কিছু গোপন কাজের খবর তোমার জানা। এখন তুমি যদি মুখ বন্ধ রাখো, তাহলে আমি কিছুই করবো না। কিন্তু… যদি আমার বিরুদ্ধে যাওয়ার চেষ্টা করো, তাহলে আমিও চুপ থাকবো না।”

এই বলে সে মোবাইল থেকে কিছু ছবি বের করলো।
হেনার সাথে এক ঘরের কিছু ছবি আরিয়ান এর… তার মুখভঙ্গি, অশ্রুভেজা চোখ, আর কিছু অন্তরঙ্গ মুহূর্ত যেগুলো দেখে আরিয়ান শ্বাস বন্ধ করে ফেললো।

আরিয়ান চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো। হাত মুঠো করে ফেললো, কিন্তু কিছুই করার ছিল না। মাথাটা ঝুঁকে পড়লো নিচে।

আমজাদ মোবাইলটা সরিয়ে নিয়ে আবার বললো,
— “শোনো বাবু, এই জগতে রাজা হয়ে থাকতে হলে সব খবর রাখতে হয়। কেউ কারো ওপর ভরসা করে বাঁচে না এখানে।”

সে একটা ঠাণ্ডা, ভয়ানক হাসি দিলো—
— “ভয় পেও না, আমি এই ছবিগুলো কিছুই করবো না… যতক্ষণ তুমি চুপ থাকবে। কিন্তু যদি তুমি আমার বিরুদ্ধে যাও, তাহলে আমিও থেমে থাকবো না। মনে রেখো, তুমি এখনো খেলায় আছো, কিন্তু আমি নিয়ম বানাই।”

আরিয়ানের চোখে যেন আগুন, কিন্তু সেই আগুনকে ঢেকে রাখছে অপার নিরবতা। সে কেবল দম আটকে থাকা এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো।

চলবে......

Comments

    Please login to post comment. Login