আমজাদ ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালো। কোটের পকেট থেকে একটা সিগার বের করলো, ঠোঁটে চেপে ধরলো, কিন্তু আগুন জ্বালালো না। তারপর ঘাড় ঘুরিয়ে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,
— “আচ্ছা, আসি তাহলে। আরিয়ান বাবু, ভালো থাকো। তবে একটা কথা মনে রেখো… হেনাকে নিয়ে আমার কোনো ইচ্ছা নেই।”
আরিয়ান একটু ভ্রু কুঁচকে বললো,
— “বুঝলাম না…”
আমজাদ হালকা হেসে কাঁচা গলায় বললো,
— “তুমি তো তৃষাকে ভালোবাসো। হেনা তো নয়, তাই তো?”
আরিয়ান কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। চোখের ভেতর ঝড় বইছিল, কিন্তু মুখ শান্ত। তারপর ধীরে বললো,
— “হ্যাঁ… আমি তৃষাকে ভালোবাসি। হেনাকে কেন ভালোবাসবো?”
কথাটা বেরিয়ে গেলো, কিন্তু শেষ শব্দগুলোতে যেন কণ্ঠ কেঁপে উঠলো। মুখের মধ্যে কষ্টের একটা অদ্ভুত ছায়া পড়ে রইলো। নিজের অজান্তেই বুকটা ভারী হয়ে উঠলো।
একটু থেমে আরিয়ান চোখ নামিয়ে বললো,
— “হেনার সাথে… যা হয়েছিল… সেটা একটা ভুল ছিল। একটা বড় ভুল।”
এক মুহূর্তের নীরবতা। শুধু লেকের ওপার থেকে হালকা বাতাস আসছিল, পানির ঢেউয়ে ছলাৎ ছলাৎ শব্দ।
আমজাদ আর কিছু বললো না। চোখে একটা বিজয়ী চাহনি নিয়ে গাড়ির দিকে হাঁটা দিলো।
আরিয়ান নিঃশ্বাস ছাড়লো, কিন্তু সেটা যেন বুকের সব কষ্ট গিলে ফেলার চেষ্টা করছিল।
আমজাদ গাড়ির দিকে যেতে লাগলেন, তারপর পিছনে ফিরে তাকালেন।চোখে এক রহস্যময় ঠান্ডা ঝলক। তারপর কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললেন,
— “আচ্ছা তাহলে… হেনাকে নিয়ে কোনো লেনাদেনা নেই তোমার?”
আরিয়ান এক মুহূর্ত থেমে বললো,
— “না।”
আমজাদ হালকা মাথা নাড়লেন, যেন এটাই শোনার ছিল তার। তারপর ঠোঁটের কোণে এক চাপা হাসি নিয়ে বললেন,
— “আচ্ছা, তাহলে জেনে ভালো লাগলো। আমি তাহলে... কাজ শুরু করি।”
এই বলে পেছন না ফিরে ধীর পায়ে হেঁটে গাড়ির দিকে চলে গেলেন। কালো ওভারকোট বাতাসে উড়ছিল একটু একটু করে। লোকজন তাকে ঘিরে ধরলো, দরজা খুলে দিল। তিনি গাড়িতে উঠে পড়লেন।
আরিয়ান কিছু বলতে যাবে… কিন্তু ঠোঁট কাঁপলো শুধু। কোনো শব্দ বের হলো না। যেন বুকের ভেতর কোনো তীব্র অস্থিরতা আটকে গেছে।
তার কপাল কুঁচকে উঠলো, মনে মনে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো—
"কাজ শুরু করি" বললো কেনো?
কোন কাজ? হেনার সঙ্গে কোনো লেনাদেনা না থাকলে… তাহলে কীসের কাজ?"
হঠাৎ বুকটা ধক করে উঠলো।
না…
এই লোকটা কিছু একটা শুরু করতে যাচ্ছে।
আর সেটার সঙ্গে হেনারই সম্পর্ক।
অথবা… হেনাকে ঘিরে একটা ভয়ংকর ফাঁদ।
আরিয়ান দাঁড়িয়ে রইলো লেকের পাশে, কিন্তু মনটা যেন হঠাৎই শূন্য হয়ে গেল।
নাকি সে ভুল করছে? নাকি দেরি হয়ে যাচ্ছে?
চলবে......