আরিয়ান একটা নতুন চিন্তায় পড়ে গেলো। আমজাদের কথাগুলো এখনো মাথার ভেতর ঘুরছে, কিন্তু ঠিক তখনই তার ফোনে একটি ম্যাসেজ এল।
মিস্টার আমান।
আরিয়ান দ্রুত মেসেজটা খুলে পড়লো—
> “কাল সকাল ১০টায় আমার বাংলো বাড়িতে চলে আসো। ঠিকানা দিয়েছি। তৃষা থাকবে। ও তোমার সব কথা শুনবে।”
মেসেজটা পড়ে যেন একটু শান্তি ফিরে এলো তার মনে।
একটা আশার আলো… হয়তো তৃষা সত্যিই তার কথা শুনবে।
হয়তো এই অন্ধকার জগতের মাঝে কেউ একজন তাকে বুঝবে।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে উঠে দাঁড়ালো। পার্কের চারপাশে রাতের নীরবতা ছড়িয়ে ছিল, কিন্তু তার ভেতরটা হালকা লাগছিল কিছুটা।
পার্ক থেকে বের হওয়ার সময় সে দারোয়ানটিকে ডাকলো, পকেট থেকে কিছু টাকা বের করে হাতে দিলো।
দারোয়ান কিছু বলার আগেই আরিয়ান হেঁটে চলে গেলো।
বাসায় ফিরে প্রথমেই গোসল করে নিলো সে, যেন শরীরের ক্লান্তির সাথে সাথে মন থেকেও কিছুটা ভার নেমে যায়। তারপর ধীরে ধীরে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।
ঘড়িতে তখন রাত ২:৩০।
শরীরের প্রতিটা রন্ধ্রে ক্লান্তি জমে আছে। চোখ খুলে রাখতে পারছে না।
হয়তো কাল একটা নতুন সকাল শুরু হবে।
হয়তো আবার ভালোবাসা ফিরে আসবে…
অথবা আরও গভীর কিছু হারাতে হবে।
এই ভাবনাগুলোর মাঝেই সে ধীরে ধীরে ঘুমের গভীরে হারিয়ে গেলো।
মিস্টার আমান সোফায় শুয়ে ছিল, ঘর অন্ধকার, বারবার এ পাশ-ওপাশ করছিলেন। ঘুম আসছিল না।
মনে মনে ভাবছিলেন—
“কাল… হয়তো সব কিছুর একটা অবসান হবে। হয়তো একটা নতুন শুরু। অথবা, একটা স্থায়ী বিচ্ছেদ।”
ঠিক সেই সময় খেয়াল করলেন, তৃষা বিছানায় বসে আছে। চুপচাপ। অন্ধকারেও বোঝা যাচ্ছিল—সে ঘুমায়নি।
আমান উঠে বসলেন।
— “ঘুম আসছে না?”
তৃষা ধীরে বলল,
— “না।”
কিছুক্ষণ দু’জনেই চুপ। তারপর আমান ধীরে বলল,
— “আজ একসাথে চার দিন হয়ে গেলো। কাল আমি আরিয়ানকে ডেকেছি আমার বাংলো বাড়িতে। শহর থেকে একটু দূরে—দাদি কিছুই বুঝবে না। আজ রিসেপশনের কাজ শেষ হলো, তাই কাল গেলে কেউ সন্দেহ করবে না।”
তৃষা কিছু বললো না, চোখ নামিয়ে রাখলো।
আমান বললেন,
— “আরিয়ানকে সব বলেছি। তোমার সাথে তার যা কিছু সমস্যা আছে, কাল যেন তোমরা নিজেরা বসে ঠিক করে নাও। আমি চাই, তোমাদের দু’জনের সিদ্ধান্ত তোমরাই নাও। আমি কোনো বাধা হবো না।”
তৃষা তাকালো আমানের দিকে—একটা মিশ্র অনুভূতি চোখে।
আমান আবার বললেন,
— “আমি কথা দিয়েছি—বিয়ের আগেই, তুমি যা বলবে আমি তাই করবো। যদি তোমার মনে হয়, আরিয়ানের কাছে ফিরে যেতে চাও… আমি আমার পথ থেকে সরে যাবো। আমার পক্ষ থেকে কোনো বাধা থাকবে না।”
তৃষার ঠোঁট কাঁপছিল, চোখে পানি এসে গিয়েছিল কিনা, বোঝা যাচ্ছিল না অন্ধকারে।
তবু সে কিছু বললো না।
ঘরটা আবার নীরব হয়ে গেলো।
তৃষার বুক ধক ধক করে উঠল, একটু খুশি হলো। কালকের জন্য অপেক্ষা। তৃষা ভাবছে সময় যেনো থেমে আছে, আর আমান ভাবছে সময় তাড়াতাড়ি চলে যাচ্ছে। আর আরিয়ান এর শান্তির ঘুম অনেক দিন পর।
আসলে কি কাল সব ঠিক হয়ে যাবে........
চলবে.....