রাত প্রায় শেষ। ঘড়ির কাঁটা ৪:৩০-এ এসে ঠেকেছে।
একটা অচেনা ঘরের ভেতর… ঘন ধোঁয়ায় ঢেকে আছে চারপাশ। কিছুই স্পষ্ট দেখা যায় না। যেন কেউ আগুন ধরিয়েছে, অথবা অজানা কিছু জ্বলছে ধীরে ধীরে…
সেই কুয়াশা আর ধোঁয়ার ভেতর কাঁপা কাঁপা গলায় একটা আর্তনাদ শোনা গেল—
“আরিয়ান বাবু… আমাকে বাঁচান… আমাকে বাঁচান…”
হেনার গলা।
আরিয়ান ধাক্কা মেরে সামনে এগোতে চাইলো… কিন্তু টের পেলো, তার হাত শক্ত করে বাঁধা! সে কিছু করতে পারছে না। তার চিৎকার শোনে না কেউ।
হেনা আবার কাঁদতে কাঁদতে বলছে—
“ওরা আমাকে নিয়ে যাবে… আমাকে বাঁচান…”
আরিয়ান চোখে জল, ঘামে ভিজে গেছে তার কপাল। সে পাগলের মতো চেঁচিয়ে উঠলো—
“হেনা! না! কেউ ওকে কিছু করতে পারবে না! হেনা!!”
সেই চিৎকারের মধ্যেই হঠাৎ… ঘুম ভেঙে গেল।
তীব্র দমবন্ধ অবস্থা নিয়ে আরিয়ান উঠে বসল বিছানায়। পুরো শরীর ঘামে ভিজে গেছে। গলার ভেতর শুকনো, নিঃশ্বাস দ্রুত চলছে।
এক মুহূর্ত যেন নিজেকে কোথায় আছে তা বুঝতেই পারছে না।
তারপর মোবাইলের স্ক্রিনে তাকালো—
৪:৪০ বাজে।
চারপাশ নিস্তব্ধ।
তবু আরিয়ান জানে, এই নিস্তব্ধতার নিচে লুকিয়ে আছে এক অজানা অশান্তি।
আজ সকালেই সে যাবে মিস্টার আমানের বাংলোতে। তৃষা থাকবে। কিন্তু এখন… এখন তার মাথার ভেতর শুধু ঘুরপাক খাচ্ছে হেনার কণ্ঠস্বর… “আমাকে বাঁচান…”
আরিয়ান বিছানায় বসে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো অন্ধকার দেয়ালের দিকে। ঘাম ভেজা শার্টটা একটু টেনে তুলে মুখ মুছে নিলো। বুকের ভেতর ধুকপুকানি এখনো থামেনি।
নিজেকেই প্রশ্ন করলো—
"কি দেখলাম আমি? হেনা কি সত্যিই কোনো ঝামেলায় আছে?"
মনের ভেতর একটা অজানা ভয় ছড়িয়ে পড়তে লাগলো। তার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে উঠলো। সে জানে, এই স্বপ্ন এমনি এমনি আসে না… বিশেষ করে হেনার মুখ থেকে যখন সে শুনেছে—
“আমাকে বাঁচান…”
একটুক্ষণ চুপ করে বসে থাকলো।
তারপর ঠোঁট কামড়ে বললো,
"ওর যা হোক তাতে আমার কি? ওটাই তো ওর জীবন…"
একটা চাপা কষ্ট গলার মধ্যে আটকে রইলো, কিন্তু আরিয়ান সেটা গিলে ফেললো।
সে উঠে পানি খেল এক চুমুকে, ঠান্ডা জল যেন মুহূর্তের জন্য সব কিছু নিস্তব্ধ করে দিল।
তারপর ধীরে ধীরে উঠে গিয়ে আবার শুয়ে পড়লো।
চোখের পাতাগুলো ভারী, কিন্তু মনের ভেতর একটা অস্থিরতা এখনো রয়ে গেছে।
তবু ক্লান্ত দেহে চোখ ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে এলো।
আজকের সকালে আবার নতুন কিছু অপেক্ষা করছে—তৃষা, মিস্টার আমান, আর হয়তো হেনার ছায়াও।
সকালের মিষ্টি রোদে কি অপেক্ষা করছে টা কেও জানে না। চারটা জীবন চারটা স্বপ্ন.........
চলবে.........