হঠাৎ করে চোখ খুলে গেলো আরিয়ানের। ঘুম ভেঙে প্রথমেই মোবাইলের দিকে তাকালো—
সকাল ৯টা বাজে!
এক ঝটকায় উঠে বসল সে।
"ওহ না! ১০টার মধ্যে পৌঁছাতে হবে!"
—বলে উঠে দাঁড়িয়ে দরজার দিকে দৌড়ালো।
চোখ ডলতে ডলতে মুখে একটা আত্মবিশ্বাসী হাসি খেলে গেলো।
নিজের মনেই বললো,
"আজ সব বলবো তৃষাকে। আমাদের ভেতর যা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে সব মিটে যাবে। আজ থেকে নতুন করে শুরু করবো আমরা…"
এই কথা ভাবতে ভাবতেই সে ফ্রেশ হতে ঢুকলো বাথরুমে।
গোসল করে বেরিয়ে এসে দ্রুত জামাকাপড় পরলো। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের দিকে তাকালো একবার, চুলটা হাত দিয়ে ঠিক করে নিলো।
চোখে ছিল আত্মবিশ্বাসের ঝিলিক, যেন আজকের দিনটা তার ভালোবাসার নতুন সূচনা।
এরপর নাস্তার টেবিলে গিয়ে বসল। মা আজ রুটি আর ডিমভাজি দিয়েছেন।
খেতে খেতেই হালকা গুনগুন করছিল সে। মুখে হাসি, চোখে স্বপ্ন।
বাবা মাকে চুপচাপ তাকিয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন,
"এই ছেলে আজ এত খুশি খুশি লাগছে কেনো?"
মা হেসে বললেন,
"কোনো ভালো খবর আছে মনে হয়! কিরে আরিয়ান, আমাদের কিছু বলবি না?"
আরিয়ান শুধু হেসে বললো,
"আজ একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। ফিরেই বলবো। আপনারা শুধু দোয়া করবেন যেন সব ঠিকঠাক হয়।"
মা-বাবা একে অন্যের দিকে তাকিয়ে একটু আশ্বস্ত হলেন। অনেক দিন পর ছেলেকে এমন প্রাণবন্ত দেখছেন।
আরিয়ান এবার ঘড়ির দিকে একবার তাকালো, তারপর ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।
আজকের এই সকাল যেন তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সকাল—তৃষার সঙ্গে শেষবারের মতো সত্যি কথা বলার দিন।
এরপর…
ঐদিকে সকালটা শুরু হলো একদম অন্যরকমভাবে। মিস্টার আমানের দাদি আজ অদ্ভুত রকম খুশি।
তাঁর চোখে মুখে যেন এক অদৃশ্য আনন্দের ঝিলিক।
সবার উদ্দেশে বলে উঠলেন—
"সবাই শুনো, সব কিছু তাড়াতাড়ি টেবিলে দাও! আমার পোতা আর পোতার বউ আজ বেড়াতে যাবে। এমন দিন তো রোজ আসে না!"
তাদের বাড়ির বড় ডাইনিং টেবিলে সাজানো হয়েছে বাহারি সব খাবার।
গরম গরম পরোটা, সাদা ভাত, মাটন কারি, রোস্ট, দই, ফল, পায়েশ—একদম রাজকীয় আয়োজন।
এই সাজসজ্জার মাঝে হঠাৎ করেই সিঁড়ির দিক থেকে ভেসে এলো মৃদু চুড়ির শব্দ।
সবাই তাকিয়ে দেখলো—
তৃষা আসছে…
আজ তৃষা পরেছে হালকা পিচ রঙের একটা শাড়ি।এই মুহূর্তে তার চোখেমুখে এক অপূর্ব কোমলতা।
গায়ের ফর্সা রঙের সাথে মিশে শাড়িটার রঙ যেন আলো ছড়াচ্ছে।
তার কাঁধে পড়ে থাকা শাড়ির আঁচলটা হালকা হাওয়ায় দুলে উঠছে।
সোনালি সূচিকর্ম করা বর্ডার আর কানে ছোট্ট মুকুট ডিজাইনের দুল যেন তাকে আরো রাজকন্যার মতো করে তুলেছে।
দাদি তাকিয়ে রইলেন।
তৃষার দিকে চোখ সরাতেই পারলেন না।
নরম গলায় বললেন—
"আল্লাহ তোকে সব সুখ দিক মা… তুই তো সত্যি রূপকথার রাণী!"
তৃষা একটু হেসে দাদির পায়ে হাত দিলো।
দাদি আশীর্বাদে ভরিয়ে দিলেন তাকে।
এই মুহূর্তেই মিস্টার আমানও বের হলেন।
আজ তার পোশাকেও একটা অন্যরকম গাম্ভীর্য।
কিন্তু চোখে একটা অদ্ভুত দ্বন্দ্ব লুকানো, কারণ আজ যে দিনটি শুধু আনন্দের নয়… আজই আরিয়ানের সাথে তৃষার সাথে বিয়ের পর প্রথমবারের মতো দেখা—সিদ্ধান্ত নেওয়ার দিন।
চলবে........