এরপর…
নাস্তা সেরে বেরিয়ে পড়লো দু'জন—তৃষা আর মিস্টার আমান।
তৃষার বুকটা যেন ধুকপুক করে বাজছে।
আসলে শুধু হৃদয়ের আওয়াজ নয়, মনে হচ্ছিল শরীরের প্রতিটা ধমনী যেন প্রশ্ন করছে—আজ কী হবে?
তৃষা বারবার পাশ ফিরে মিস্টার আমানের দিকে তাকাচ্ছে।
তিনি গাড়ি চালাচ্ছেন খুব ধীর, কিন্তু চোখেমুখে যেন কিছু একটা লুকিয়ে আছে।
তাঁরও ভেতরে ধকধক করছে, কারণ আজ যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দিন।
গাড়ির ভেতরে হালকা গান বাজছে, কিন্তু কারও কিছু শোনার মতো মন নেই।
ঘড়ির কাঁটা তখন ৯টা ৪০।
মিস্টার আমান একটু গাড়ির গতি বাড়ালেন।
তারপর মোবাইলটা হাতে নিয়ে আরিয়ানকে ফোন দিলেন।
"হ্যালো?"
আরিয়ানের কণ্ঠস্বর ভেসে এলো।
"আপনি আসছেন তো?" মিস্টার আমান জিজ্ঞেস করলেন।
"হ্যাঁ, আমি পথে আছি। নিজেই গাড়ি চালাচ্ছি, প্রায় ২০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যাবো।"
আরিয়ানের কণ্ঠে ভরসা, কিন্তু গলায় একটা চাপা উত্তেজনা।
"ঠিক আছে, আমরাও পৌঁছে যাচ্ছি,"
এই বলে আমান ফোনটা রেখে দিলেন।
তৃষা তখন গাড়ির জানালার দিকে তাকিয়ে।
তার চোখে কুয়াশার মতো এক আবরণ।
সে জানে না আজ কী হতে চলেছে।
সে শুধু জানে—একটা সম্পর্ক ভাঙবে, না গড়বে—তার উত্তর আজই মিলবে।
রাস্তা প্রায় শেষ পর্যায়ে। সামনেই সেই বাংলো, যেখানে আজ সিদ্ধান্ত হবে এক জীবনের। তৃষা একবার জানালার বাইরে তাকায়, আবার চোখ বন্ধ করে ফেলে।
মনে ভেসে উঠছে পুরনো স্মৃতি, আরিয়ানের হাসি, তার স্পর্শ, তার প্রতিজ্ঞা…
ঠিক সেই মুহূর্তে আরিয়ানের ফোনটা বেজে উঠলো।
ড্যাশবোর্ডে ভেসে উঠলো নাম—"আমজাদ ভাই"।
স্বপ্নের সেই ভয়ংকর দৃশ্যটা মনে পড়ে গেলো আরিয়ানের।
হেনা চিৎকার করছে, ধোঁয়া ভরা ঘর, তার হাত বাঁধা…
এক মুহূর্ত দেরি না করে ফোনটা রিসিভ করলো।
"আরিয়ান বাবু, শোনো… সরাসরি বলছি,"
আমজাদের গলা আজ একটুও খেলো না, বরং কঠোর আর কাঁপানো।
"তুমি আমার অনেক কিছু জানো, আর সেটাই এখন ঝুঁকি। আমি হেনাকে আজই পাচার করে দিচ্ছি—শেষবারের মতো।"
আরিয়ান যেন শ্বাস বন্ধ করে বসে থাকলো।
"কিন্তু…," আমজাদ একটু থেমে বললো,
"হেনা একটা নাম্বার দিয়ে বলছিল অনেক অনুরোধ করে—মাত্র একবার কথা বলতে দিতে। আমি দিয়ে দিলাম। এখন দেখি—এই নাম্বারটা তোমার…"
আরিয়ানের হাত কাঁপতে লাগলো। ফোনটা যেন ভারী হয়ে উঠেছে।
তার কণ্ঠ শুকিয়ে গেছে, কিন্তু সে জোর করেই বললো—
"তুমি এখন কোথায়? আমজাদ, শোনো, আমি না আসা পর্যন্ত… হেনার কিছু যেন না হয়! আমি আসছি। এখনই!"
কথা শেষ না করেই ফোনটা কেটে দিলো।
একটা নিঃশব্দ উত্তেজনা, একটা বিস্ফোরণ হলো তার ভেতরে।
সব পরিকল্পনা, সব আলোচনার আগে—এখন শুধু হেনা।
আর কিছু না।
গাড়িটা এক ঝটকায় ঘুরিয়ে নিলো।
স্পিডোমিটারে কাঁটা বাড়তে লাগলো।
তৃষার নাম, আমানের আশা, বিয়ের সমস্ত প্রস্তুতি—সব পিছনে ফেলে সে ছুটলো…
শুধু একটাই উদ্দেশ্য—হেনাকে বাঁচাতে হবে!
চলবে.....