Posts

উপন্যাস

তোমার জন্য....( পর্ব - ৮০)

July 16, 2025

Boros Marika

77
View

আরিয়ান ঠিকানা অনুযায়ী ছুটে চলেছে।
তার চোখে শুধু একটাই ছবি—হেনার আর্তনাদ।
তার মাথায় এখন আর তৃষা নেই, আমান নেই, এমনকি তার নিজের জীবন নিয়েও কোনো চিন্তা নেই।
গাড়ির গতি যেন তার হৃদয়ের স্পন্দনের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে।

অন্যদিকে…

মিস্টার আমান গাড়ি থামালেন বাংলো বাড়ির গেটের সামনে।
সেই পুরনো বাংলো—শহরের কোলাহল থেকে অনেক দূরে, নিরিবিলি পরিবেশে।

গার্ড দরজা খুলে এগিয়ে এলো।
দাদী আগেই জানিয়ে রেখেছিলেন সব কিছু।
গার্ড নম্র কণ্ঠে বললো,
"স্যার, আপনি আর ম্যাডামকে দাদীজান আগেই জানিয়ে রেখেছেন। ভেতরে আসুন, সকালের চা আর নাশতা রেডি আছে।"

তৃষা চুপচাপ। তার মুখে এক ধরনের দ্বিধা, উৎকণ্ঠা।
মিস্টার আমান শুধু একবার তার দিকে তাকিয়ে বললেন,
"আজ যা হওয়ার, সব হবে তৃষা।"

তারা দু’জন বাংলোর ভিতরে প্রবেশ করলো, আর ঠিক তখনই আরিয়ানের গাড়ি আরও জোরে ছুটে চললো হেনার সেই অজানা গন্তব্যের দিকে…

ভিতরে গিয়ে তৃষা একপলক চারপাশে তাকিয়ে বললো,
"অনেক সুন্দর... সব কিছু যেন গল্পের মতো।"

আমান হালকা হেসে বললেন,
"হ্যাঁ, আমার দাদী সব ঠিকঠাক করে রাখেন। এই বাংলোটা তাঁরই শখ—পুরনো দিনের জমিদারি স্টাইলে গড়া। প্রতিটি কোণা তাঁর স্মৃতির মতো যত্নে রাখা হয়েছে।"

ঠিক তখনই একজন ভদ্রলোকানুভূতির মহিলা হাতে ওয়েলকাম শরবত নিয়ে ঘরে ঢুকলেন।
রূপালী ট্রে'তে রাখা দুটি গ্লাস, কাঁচা পুদিনার গন্ধে মেশানো গোলাপি রঙের শরবত।

তৃষা ট্রেটা হাতে নিয়ে বললো,
"শরবতও যেন অন্যরকম, খুব রিফ্রেশিং গন্ধ।"

আমান তার দিকে তাকিয়ে বললেন,
"এটা আমার দাদীর বিশেষ রেসিপি—শুধু অতিথিদের জন্য।"

চারপাশটা সত্যিই জমিদার প্রথার ঘ্রাণে মোড়া।
উঁচু ছাদ, প্রাচীন কাঠের ফার্নিচার, দেয়ালে সাদা-কালো ছবি, আর মাঝখানে বিশাল একটা ঝাড়বাতি—
সব মিলিয়ে যেন ইতিহাসের পৃষ্ঠায় হেঁটে আসা এক ঐতিহ্যময় প্রাসাদ।

তৃষা চোখ বুলিয়ে নিতে নিতে হালকা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো,
"এমন জায়গায় সবকিছু ঠিক হয়ে যাক—এই কামনাই করি।"

সময় যেন হঠাৎ থমকে গেছে।

তৃষা বারান্দার পাশে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে, আর মিস্টার আমান ঘড়ির কাঁটার দিকে একবার, আবার ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকাচ্ছেন।
ঘড়িতে তখন ১০টা ৩০ বাজে। আরিয়ান এখনো এসে পৌঁছায়নি।

অবশেষে আমান নিজেই কল করলেন।

একবার… দুইবার… তিনবার…
কল যাচ্ছে, কিন্তু আরিয়ান ফোন তুলছে না।

তৃষা একটু উদ্বিগ্ন গলায় বললো,
"ও আসবে তো?"

আমান চোখ বন্ধ করে হালকা মাথা নাড়িয়ে বললেন,
"এসে যাবেন। চিন্তার কিছু নেই। হয়তো কোথাও ট্রাফিক বা… কিছুক্ষণ সময় নেবে।"

এদিকে আরিয়ান—

তার গাড়ি ঠিক হেনার সেই অবস্থানের কাছাকাছি এসে থেমে গেছে।
চোখে আগুন, ভেতরটা যেন আগ্নেয়গিরির মতো ফেটে পড়ছে।
ফোন বাজছে, কিন্তু আরিয়ান খেয়ালই করছে না।
তার মাথায় এখন একটাই কথা ঘুরছে:
"কোনোভাবেই হেনাকে আজ হারাতে দিবো না।"

গাড়ির দরজা খুলে এক লাফে নেমে পড়লো আরিয়ান।

তৃষা এখনো জানে না,
আজকের দিনের পর তার জীবনের সমস্ত সমীকরণ বদলে যেতে পারে…

চলবে.......
 


 

Comments

    Please login to post comment. Login