Posts

সমালোচনা

বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের পতনের কারণ

July 18, 2025

Ajmain Rashid Enan

66
View

এ দেশের বুদ্ধিজীবীরা বারংবার অসম্মানিত হয় জাতিগতভাবে কারণ এদেশের বুদ্ধিজীবীরা সর্বদাই পক্ষ নির্বাচন করতে চায়। তাদের এক্ষেত্রে যুক্তি হলো বহুবছর বুদ্ধিজীবীদের এক পক্ষ  তার মত প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে এবং সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে এসেছে।  এখন গণতান্ত্রিক নিয়মে আরেক পক্ষকে তার মত প্রতিষ্ঠা এবং সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে দেওয়া উচিত। অর্থাৎ এদেশে পাল্লাকে সর্বদা যেকোন একটি দিকে হেলে পড়তে হয়েছে,পাল্লা কখনই সাম্যবস্থায় আসতে পারে নি। সর্বদাই মুখ্য প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে আমরা কি লিবারেল দেশ চাই নাকি রক্ষণাত্মক দেশ চাই? একটি দেশের ব্যবস্থাপনা প্রণয়ণের ক্ষেত্রে  কি এই প্রশ্ন উঠা যুক্তিযুক্ত? 
আমরা ভারতের বা পাকিস্তানের কথাও যদি বলি কিংবা পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের কথা সেখানেও কখনই এ প্রশ্নটি মুখ্য হয় উঠে নি। সেখানে কখন এ আশঙ্কার সৃষ্টি হয় নি যে আজ যে শাসনব্যবস্থা কায়েম হচ্ছে তাতে আমি আমার ব্যক্তিগত মৌলিক স্বাধীনতা পাবো কিনা কিংবা কখনও এ আশঙ্কাও মনে উদগীরণ হয়নি  যে আমি স্বাধীনভাবে ধর্মীয় চর্চা করতে পারবো কি না? সেসব দেশেও মতপার্থক্যের কারণে একাধিক দলের অবস্থান থাকলেও কিংবা গণতন্ত্র পূর্ণাঙ্গভাবে কায়েম সম্ভব না হলেও সেসব দেশে এসব  আশঙ্কা  মুখ্য হয়ে উঠতে পারেনি। পররাষ্ট্র নীতি, দুর্নীতি দমন,  আধিপত্যবিস্তার, ব্যক্তিগত সুযোগ ভোগের আকাঙ্ক্ষা, অর্থনৈতিক প্রাধান্য লাভ এ সকল বিষয়েই মুখ্য আলোচ্য বিষয় হিসাবে উপস্থাপিত হয়ে এসেছে। তুলনামূলকভাবে এসব দেশ রক্ষণাত্মক ও লিবারেল পটসৃষ্টিকারী দেশসমূহের চেয়ে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন করে এসেছে।
মানবাধিকারগোষ্ঠী ও ধর্মরক্ষকগোষ্ঠীর নিজেদের কার্যক্ষেত্রকে সীমাবদ্ধ করার প্রবণতা লক্ষ্যণীয়। ধর্মীয় গোষ্ঠী মনে করেন মানবাধিকারের ব্যাপারে তাদের কথ বলা ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক আর মানবাধিকার গোষ্ঠীরাও মনে করে ধর্মীয় ব্যাপারের আলোচনায় তাদের আলোচনা সীমাবদ্ধ থাকা দরকার। 
সত্যকে কেন ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক করে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এক পক্ষের মতে কেবল গণতন্ত্রই মানুষের প্রকৃত কল্যাণ করতে পারে, আবার কারো মতে খেলাফত আবার কারো মতে সমাজতন্ত্রই কেবল প্রকৃত কল্যাণ বয়ে আনতে পারে। অথচ আমরা সত্যকে ভাঙ্গতে ভয় পাই।সত্যকে ভাঙ্গলে তার চেয়েও আরো গভীরভাবে সত্যকে পাওয়া যায় তা উপলব্ধি করতে আমরা পারি না। স্রষ্টাকে যারা প্রশ্ন করতে ভয় পায় তারা প্রকৃতপক্ষে স্রষ্টাকে যথার্থ অনুভব করতে ও তার নিকটে পৌঁছাতে পারে না কখনই। যেখানে স্বয়ং খোদা চান তাকে প্রশ্ন করা হোক সেখানে আমরা মানুষেরা এমন বিধান কিভাবে প্রণয়ন করতে পারি যেখানে স্রষ্টাকে প্রশ্ন করলে তাকে স্রষ্টাবিরোধী বলে ঘোষণা করা হয়। কোন দল মতের কোন ব্যক্তি এককের জন্য কেবল সত্তা নন স্রষ্টা। তাকে কেবল নিজেদের স্রষ্টা বলে উপস্থাপন করে এক পক্ষ  অপর পক্ষকে নিচ প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করে ও সহানুভূতি প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে ঘোষণা করে থাকে তোমরা আমাদের ধর্ম ও সৃষ্টাকে অসম্মান করছো। যা বড়ই অমূলক ও সুবিধাবাদী কথা। সৃষ্টা চান তাকে প্রশ্ন করা হোক কেননা তিনি নিজ সত্য ও জগতের সত্য সম্পর্কে সন্ধিহান নন। আমাদের কেবল প্রতিষ্ঠা করতে চাওয়া উচিত সত্য ও স্বচ্ছতা, লোভ লালসা ও চিত্ত সংযতকরণ এবং অপরকে মৌখিক ও শারীরিক আঘাত করার ব্যবস্থপনা থেকে বিরত থেকে নিজেদের কল্যাণকে নিশ্চিত করা তা যেই ইজমের মাধ্যমেই হোক না কেন। নি:সন্দেহে  তিনি তার বিচারের দিন কোন ইজমকেই রেয়াত করবেন না। সুতরাং পেয়ালাকে নয় বরং পেয়ালের ভিতরের খাদ্যটি বিষ না কি পানযোগ্য তা নির্বাচনই জরুরি।

আমাদের বুদ্ধিজীবীদের অবস্থা এমন যে তা হলো একটি চিপ্সভর্তি প্যাকেটের মতো। যেখানে ব্র্যান্ডভেদে চিপ্স ও তার মোড়কের পরিবর্তন হলেও মানুষ চিপ্সটিকেও খেয়ে মোড়কটাকে ফেলে দেয়। তা যদি যতই নতুন ও আকর্ষণীয় মোড়ক হোক না কেন। আর এ অবস্থা সৃষ্টির কারণ বুদ্ধিজীবীদের নিজেদের বুদ্ধি ও চিন্তার নিয়মিত বিক্রয়ের নতুন নতুন কৌশলে পদার্পন করা।

আজকাল  শিক্ষকের প্রতি শিক্ষার্থীদের মনোভাব ও আচরণ নিয়ে আলোচনা দেখা যায়। যেখানে বলা হয়ে থাকে আগেকার যুগে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বেত্রাঘাত করতো এতে শিক্ষার্থীরা মানুষের মতো মানুষ হতো এবং শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের যথাযথ সম্মান দিতেন। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের অসম্মান করে থাকে। এটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও হতাশাজনক। অসম্মানের কথাটি অবশ্য সম্পূর্ণ মিথ্যে নয় তবে এর পাশাপাশি আরেকটি সত্যও রয়েছে আর তা হলো অতীতে শিক্ষকরা বেত্রাঘাত করলেও এখন শিক্ষার্থীর পরিবারকে বর্তমানে যেভাবে আঘাত করে কথা বলে থাকে  কিংবা শিক্ষার্থীদের যেভাবে সম্বোধন করার ও কথা বলার নজির দেখা যায় তা অতীতে ছিল না। শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়কেই উত্তক্ত্যকরভাবে বাক্যবিনিময় থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। তবে এক পাক্ষিকভাবে সমাধান সম্ভব নয়। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীদের মা বাবা ক্যাম্পাসে নেই বলে নিজেদের অভিভাবক বলে থাকেন এবং বাস্তবিকভাবেও তা সত্য এবং শিক্ষার্থীরাও তা গ্রহণ করতে প্রস্তুত। কিন্তু  শিক্ষকরা যখন কোন শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তা বিষয়ে তার নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য তাকেই অনিরাপদভাবে আক্রমণ করেন এবং তার সেই ক্যাম্পাসে উপস্থিত না থাকা, ক্যাম্পাস থেকে হাজার মাইল দূরে থাকা চিন্তিত মা বাবার কাছে অভিযোগ জ্ঞাপন করেন তখন তা সেল্ফ-কনডাক্টরি অবস্থারই জন্ম দেয়। যা অত্যন্ত হতাশজনক। শিক্ষক ও সকলের শক্তি কেবল হওয়া উচিত নিজের জ্ঞানকে অন্যের মধ্যে সংক্রামিত করা, চাপিয়ে দেওয়া নয়। এটা কেবল জাতিগতভাবে আমাদের  জ্ঞানের দীনতাকে প্রকাশ করে। জ্ঞানকে অন্যের মধ্যে সংক্রামিত করতে না পারলে তা কখনই দীর্ঘস্থায়ী হয় না। ফলে একটা সময় পরে এক একটি বুদ্ধিজীবী সমাজের পতন ঘটে।

Comments

    Please login to post comment. Login