ড. রায়হান আদিল, বয়স ৪৮। এক সময় বিদেশে গবেষণা করতেন, কিন্তু শেষ দশ বছর ধরে দেশের এক পরিত্যক্ত পাহাড়ি এলাকায় একাই গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তার মাথায় ঘুরছে এক অসম্ভব স্বপ্ন—কোনো রকম তেল, গ্যাস, কয়লা বা সৌরশক্তি ছাড়াই বিদ্যুৎ তৈরি করার উপায় খুঁজে বের করা।
তার ভাষায়,
“মানবসভ্যতার সবচেয়ে বড় পরাধীনতা হলো শক্তির ওপর নির্ভরতা। আমি চাই মানুষ হোক সম্পূর্ণ স্বাধীন।”
দিনের পর দিন, রাতের পর রাত—তিনি কাজ করেন এক অদ্ভুত যন্ত্র নিয়ে, যেটা সে নাম দিয়েছে “EON CORE”।
একদিন গভীর রাতে, সে যন্ত্র সচল হয়। বাতি জ্বলে ওঠে। কোনো তার, ব্যাটারি, কিছুই নেই—তবু পুরো কক্ষ আলোকিত।
অবিষ্কার সফল।
কিন্তু সেখানেই শুরু হয় বিপদ। ড. রায়হানের ল্যাবের আশপাশে কিছু অচেনা মুখ দেখা যায়।
একদিন তার ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ফোনে হ্যাকিংয়ের চিহ্ন।
পরদিন রাতে, এক অপরিচিত লোক ল্যাবে ঢোকে।
“আপনার আবিষ্কার দেশের জন্য হুমকি হতে পারে, আপনি সরকারকে রিপোর্ট করুন।”
রায়হান বুঝে যান—কেউ চাইছে এই আবিষ্কার চেপে রাখতে।
কিন্তু তিনি বলেন,
“আমি আবিষ্কার করেছি মানুষের জন্য, কোনো সরকারের জন্য নয়।”
তাকে হুমকি দেওয়া হয়।
কিন্তু রায়হান হার মানেন না। একদিন রায়হানের সহকারী ফারুক, যে ছোটবেলা থেকে তার শিষ্য ছিল, সে হঠাৎ ল্যাব থেকে “EON CORE” চুরি করে।
ফারুক আসলে একজন প্রযুক্তি এজেন্ট, যে একটি বিদেশি কোম্পানির হয়ে কাজ করে। তারা চায় এই আবিষ্কার নিজেদের করে নিতে, বিশ্ববাজারে বিক্রি করতে।
ড. রায়হান ভেঙে পড়েন।
তিনি শুধু আবিষ্কার হারাননি, হারিয়েছেন বিশ্বাস, আত্মা। রায়হান পুলিশে যান, কিন্তু কেউ গুরুত্ব দেয় না।
তাকে “পাগল বিজ্ঞানী” বলে হাসাহাসি করে।
তখন সে ঠিক করেন, নিজেই আবার বানাবেন সেই যন্ত্র—আরও উন্নত, আরও শক্তিশালী।
৬ মাসের মধ্যে সে বানায় “EON CORE 2.0”
এবার সেটি শুধু বিদ্যুৎ নয়, পানি বিশুদ্ধ করতে পারে, কৃষিকাজে কাজ করতে পারে, রোগ নির্ণয়েও সাহায্য করে।
রায়হান এবার সিদ্ধান্ত নেন—এই যন্ত্র তিনি ফ্রি দিবেন দুনিয়ার দরিদ্র মানুষের জন্য। ফারুক ও তার কোম্পানি মামলা করে রায়হানের বিরুদ্ধে।
তাকে গ্রেফতার করার আদেশ হয়।
কিন্তু রায়হান পালায় না।
এক সাংবাদিকের মাধ্যমে সে ভিডিও বার্তা ছড়িয়ে দেয়:
“আমি যদি আজ না থাকি, তবু আমার প্রযুক্তি থাকবে। আমি এটা মানুষের হাতে দিয়ে যাব।”
তার বানানো ফ্রি ওপেন-সোর্স নকশা ছড়িয়ে পড়ে ইন্টারনেটে। রায়হান গ্রেফতার হয়।
কিন্তু তার যন্ত্র এখন আফ্রিকার এক ছোট গ্রামে,
বাংলাদেশের এক পাহাড়ি অঞ্চলে,
সিরিয়ার যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকাতেও পৌঁছে যায়।
ফারুক ধরা পড়ে। কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা হয়।
আর ড. রায়হান?
তিনি জেলে বসেও বিজ্ঞান নিয়ে লিখে যান।
তার লেখা বই: “বিজ্ঞান মানুষের জন্য” এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়।
এই বিজ্ঞানী হয়তো ক্ষমতা বা অর্থ অর্জন করতে পারেননি,
কিন্তু তিনি মানুষের হৃদয় জয় করেছেন।
তার আবিষ্কার একদিন বদলে দেবে পৃথিবীকে।