Posts

গল্প

লালসা পর্ব- ১

July 18, 2025

Fijon Qurayish

Original Author ফিজন কোরাইশ

58
View

পর্ব ১: সোনার মায়াজাল

হাশেমের চোখে স্বপ্ন ছিল, কিন্তু পকেটে টাকা ছিল না। সে ছিল দক্ষিণবঙ্গের প্রত্যন্ত এক গ্রামের ছেলে, যেখানে মানুষ এখনো ঘোড়ার গাড়ি করে বাজারে যায়, আর সন্ধ্যা নামলেই কুয়াশার চাদরে ঢেকে যায় পথঘাট। হাশেমের বাবা ছিলেন একজন সৎ কৃষক, যিনি সবসময় বলতেন, “সততা থাকলে মানুষ গরিব হলেও মাথা উঁচু করে থাকতে পারে।” এই কথা হাশেমের মাথায় গেঁথে গিয়েছিল।

স্কুলে সে খুব ভালো ছাত্র ছিল। তবে পড়ালেখা শেষ করে ঢাকায় গিয়ে কাজ খুঁজলেও কিছুতেই চাকরি পায়নি। একদিন, এক পুরনো বন্ধুর মাধ্যমে সে পরিচিত হয় কাসেম ভাইয়ের সঙ্গে। কাসেম ভাই ছিল শহরের এক বড় ব্যবসায়ী, তবে তাকে দেখলেই বোঝা যেত, তার ব্যবসার সব কিছু ঠিকঠাক নয়।

হাশেম প্রথমে দ্বিধায় পড়ে। সে তো সৎ থাকার শপথ নিয়েছিল! কিন্তু কয়েকটা দিনের মধ্যে যখন তার মায়ের চিকিৎসা লাগল আর তার হাতে একটা টাকাও ছিল না—তখন কাসেম ভাইয়ের দেওয়া ‘সহজ পথ’টাই মনে হলো একমাত্র সমাধান।

কাসেম ভাই বললেন,
“দেখ হাশেম, তুই শুধু একটা প্যাকেট একটা জায়গায় পৌঁছাবি। বাকিটা আমি দেখব। প্রতি ডেলিভারিতে পঁচিশ হাজার টাকা পাবি।”

প্রথমবার হাশেম অনেক ভয় পেয়েছিল। কিন্তু টাকা হাতে নিয়েই ভয়টা হাওয়া হয়ে গেল। মায়ের চিকিৎসা হলো, ঘরে চাল উঠল, এমনকি ছোট ভাইয়ের স্কুলের বেতনও জমা হলো।

এরপর শুরু হলো আসল ‘লালসার’ খেলা।

একটা প্যাকেট, দুইটা প্যাকেট... ধীরে ধীরে সে গভীরভাবে জড়িয়ে পড়ল কাসেম ভাইয়ের অবৈধ সোনার ব্যবসায়। বিদেশ থেকে সোনা আসে, হাশেম শহরের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পৌঁছে দেয়। তাকে কেউ সন্দেহও করে না—কারণ তার চেহারায় ছিল ‘ভালো ছেলের’ ছাপ।

হাশেম এখন আর ভাড়া বাসায় থাকে না। সে থাকত এক বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে। মায়ের জন্য চাকরানী রেখেছে, নিজের জন্য গাড়ি কিনেছে। অথচ রাতে ঘুমাতে গেলে বুকের ভেতর কেমন খচখচ করে। যেন ভিতরে কিছু পচে যাচ্ছে।

একদিন হঠাৎ পুলিশ ধরে এক ‘ডেলিভারি বয়’কে। তার কাছ থেকে পাওয়া যায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। সেই সূত্র ধরে একদিন হাশেমের ফ্ল্যাটে হানা দেয় র‍্যাব।

কিন্তু কাসেম ভাই অনেক আগে থেকেই এসব আঁচ করেছিল। সে হাশেমকে আগেই বলে দিয়েছিল কী করতে হবে। হাশেম সেদিন কিছুই বলে না, শুধু বলে—“আমি শুধু কাজ করতাম, কিছু জানি না।”

র‍্যাব তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে, ছেড়ে দেয়, কারণ তার বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া যায় না।

তবে সেইদিন থেকে হাশেমের রাতে ঘুম আসা বন্ধ হয়ে যায়।

সে ভাবে,
“আমি কী হয়ে গেছি? আমি তো কখনো অন্যায় করতাম না... তবে আজ আমি কি সত্যিই একজন দালাল? একজন পাচারকারী?”

তার মনের ভেতরে শুরু হয় লড়াই—ভালো হাশেম আর লোভী হাশেমের।

একদিন, রাতে ঘুমাতে গিয়ে সে তার বাবার স্বপ্ন দেখে।
বাবা বলছেন,
“তোর হাতে সোনা নয় রে হাশেম, তোর হাতে বিষ!”

হাশেম ঘুম ভেঙে উঠে বসে। সে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চোখে তাকিয়ে দেখে—সেখানে আর সৎ হাশেম নেই, আছে কাসেম ভাইয়ের তৈরি এক মুখোশধারী লোক।

তবু সে তখনও লালসার খেলা থেকে বেরিয়ে আসেনি।

Comments

    Please login to post comment. Login