
দীর্ঘ একযুগেরও বেশী সময় পড়ে গিয়েছিলাম আমার সেই প্রাক্তনের পাড়ায় যদিও প্রথমে যেতে রাজি হইনি একপর্যায়ে ছোট বেলার বন্ধুর জোরাজুরিতে শেষমেষ যতেই হলো
আমার বন্ধুর কাকার ছেলের মুখে ভাত অনুষ্ঠান বন্ধু বললো ভাই আমারও যাবার ইচ্ছা ছিল না দাদু এত করে বললেন তাই তার মুখ রাখতে যেতে হচ্ছে তা যখন যাচ্ছিই ভাবলাম তোকেও নিয়ে যাই শত হোক তোর প্রাক্তনের এলাকা সেখানে। আমি মুচকি হেসে বললাম ভাই আমি কিন্তু তোর কাকার বাড়িতে যাবো না, আমার বন্ধু বলল সে নাই বা ঢুকলি আমি না হয় কাকার বাড়িতে কথা রক্ষার জন্য কিছু সময় কাটালাম আর তুই না হয় ততক্ষণে তোর প্রাক্তনের এলাকাটা একটিবার ঘুরে এলি,আর তাছাড়া শুনলাম এখন নাকি তোর প্রাক্তন নিজের বাপের বাড়িতেই আছে কপালজোরে যদি দেখা হয়ে যায় তাহলে মন্দ হয় না বল?আর তাছাড়া তুইও তো তাকে অনেকদিন দেখিস না তোরও নিশ্চয়ই তাকে দেখার জন্য মনটা হাসপাস করে?আমি ওর কথা শুনে মুচকি হাসলাম কিছু বললাম না।সেদিন দিনটা ছিল শুক্রবার জুমআর নামাজ পড়ে পাঞ্জাবি পাজামা পরা অবস্থায় রওনা হলাম কিছুক্ষণপর পৌঁছে গেলাম আমার বন্ধু রোডের অপজিটে চলে গেল ওর কাকার বাড়িতে আর আমি হাটতে হাটতে চলে আসলাম আমার সেই প্রাক্তনের পাড়ায় হেটে আসার সময় চোখে পড়লো পথের ধারে সেই উচু মাটির টিলাটি ঠিক সেখানে সেভাবেই পরে আছে ঠিক যেমনটা একযুগ আগে ssc পরীক্ষা দিয়ে ঘুরতে গিয়ে দেখেছিলাম,দেখলাম পথের ধারে সেই তেলবাহী ট্রাক সেভাবেই দাঁড়িয়ে আছে এতবছরে একবারও তেল বহন করার ডাক আসেনি হয়তো তার।দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে অলসতা ভর করেছে তার লোহার কলকব্জায় লতাপাতাও তাকে যাপটে ধরেছে নিজের বেড়ে ওঠার অবলম্বন হিসেবে।এতদিনেও কিছু বদলায় নি জায়গায়টিতে সবকিছুই যেন বলছে এতদিনে মনে পড়লো?দেখ আমরা এখন আগের মতই আছি।
যার যার যায়গায় বদলে গেছে শুধু সময় আর তোর আর তোর প্রাক্তনের পরিস্থিতি।যেতে যেতে চোখে পড়লো সেই হাসপাতালের মাঠ আর সেই পুরোনো মঠ সবকিছু এতবছরে আগের মতই আছে শুধু দেখলাম কিছু ছেলে সেখানে বসে মনের সুখে সিগারেট টানছে,আরেকটু এগিয়ে যেতেই চোখে পড়লো আমার প্রাক্তনের বাড়ির সেই ছোট্ট রাস্তা খানি এতদিনপর সেখানে ঢোকার আর সাহস পেলাম না উকি মেরে দেখে নিলাম দেখলাম বহু বছর আগে যেমনটা দেখে গিয়েছিলাম ঠিক তেমনটাই আছে শুধু ওর বাড়ির সামনের সেই দোকানটা আর নেই সেটা ভেঙে এখন তৈরী হয়েছে একটা টিনসেড বিল্ডিং আর প্রাক্তনের সে সময়ের নতুন রঙচংএ ঝকঝকে বাড়িটি পরিনত হয়েছে এতদিনে রঙচটা এক পৌর বাড়িতে কয়েকবার উকি দিলাম দেখার জন্য দেখলাম সবসময়ের মত বারান্দা ফাকা একটি চেয়ার রাখা এপাশে কেউ নেই তাই আর নিছক উকি না মেরে ওদের বাড়ির রাস্তার আরেকটা দোকানের সামনে গেলাম বিস্কুট কেনার অনিচ্ছাকৃত উদ্দেশ্য গিয়ে দোকানি মহিলাকে ডাকতেই সে যেন ভ্রু কুচকে তাকালো আমার দিকে যেন তার দোকানে এসে আমি কনো অপরাধ করে ফেলেছি সে যাইহোক বিস্কুট কিনে খেতে লাগলাম সবাই আমার দিকে সেই আগের সন্দেহ প্রবন দৃষ্টিতেই তাকাচ্ছে আর আমি ভাবছি এত বছর পরও সন্দেহের তীর আমার উপরেই আছে!তারপর গিয়ে বসলাম চায়ের দোকানে সেখানে সব আগের মতই আছে বলা বাহুল্য চা টা শেষ করে হাটতে হাটতে চলে গেলাম নদীর দিকে দেখলাম নদীর পানি বৃষ্টির কারণে বেড়েছে দেখতে ভালই লাগলো ছবি তুলতে যাবো তখনই ফোন বাজলো কিরে কই তুই,ছবি তুলছিলাম,পরে তুলিস এখন ইমামবাগ স্কুলের কাছে চলে আয়।চলে গেলাম সেখানে গিয়ে দেখলাম আমাদের সেই পিচ্চি মামাটা আমার বন্ধুর সাথে কত্ত পাল্টে গেছে দেখেই বোঝা যায় অনেক ম্যাচিউড হয়ে গেছে সে গফ ও আছে অনেকগুলো হয়তো দেখে মনে হচ্ছে আমাদের চেয়ে এখন সবদিক থেকে সেই ম্যাচিউড বর্তমানে লাভ গুরু খেতাবও অর্জন করেছে সে সবার থেকে তারপর আমারা তিনজন মিলে ঘুরলাম পুরো এলাকাএখানে সেখানে স্টেশানে রেল লাইন ধরে হাটলাম ঝালমুড়ি খেলাম।একটি ফাঁকা জায়গায় গিয়ে দাড়ানোর পর সেখান থেকে আমার বন্ধুকে একটি মেয়ে প্রোপস করলো দেখেই বুঝতে পারলাম মেয়েগুলো আমাদের ফলো করতে করতেই এ পযন্ত এসেছে আমার বন্ধু তার প্রেম প্রত্যাখ্যান করে দিল কি যেন কি ভেবে কে জানে তবে তাদের সাথে এত আনন্দে থাকার পরও যেন আমার মন প্রাক্তনের বাড়ির সেই রাস্তার সামনেই পরে ছিল চিৎকার করে যেন বলতে ইচ্ছে করছিল চল না আরেকবার যাই দেখি দেখা হয় কিনা কিন্তু আত্নসম্মানের খাতিরে বলতে পারি নি।তারপর মামার কলেজ ঘুরে চরের সেই ফাকা রাস্তা সেই সূর্যাস্ত দেখে ফিরলাম দেখে যেন মনে হচ্ছিল আকাশের সাদা মেঘের ভেতর যেন অসংখ্য অগ্নি শিখা গনগন করে জ্বলছে রঙটা ছিল গাড়ো কমলা রঙের কি যে সুন্দর দৃশ্য কি বলবো যেন এমনটা হতে আমি প্রথমবার দেখছি মামার বাসায় সেখানে খাওয়া দাওয়া হলো সবার সাথে দেখা সাক্ষাত করে রাতে ফিরে এলাম বাসায় আর ফেলে এলাম সেখানে মনের কোনায় জমে থাকা একটি অপূর্ণ ইচ্ছেকে তবে কখনো তোমার সাথে দেখা হোক বা না হোক তুমি রবে আমার মনের এককোনায় স্মৃতি হয়ে হে মোর প্রাক্তন।