Posts

উপন্যাস

তোমার জন্য....( পর্ব -৮১)

July 19, 2025

Boros Marika

60
View

আরিয়ান গাড়ি থেকে বেরিয়েই কোনো কিছু না ভেবেই সোজা ভিতরে ঢুকে পড়লো।
চোখে আগুন, শরীরজুড়ে উত্তেজনার ঝড়।
ভেতরে ঢুকতেই সে দেখলো, আমজাদ এক পাশে চেয়ারে বসে ঠান্ডা মাথায় সিগারেট টানছে।

আরিয়ান গর্জে উঠলো,
"হেনা কোথায়? কোথায় রেখেছো ওকে?"

আমজাদ ধীরভাবে চোখ তুলে তাকাল, সিগারেটের ধোঁয়া নিঃসরণ করে বলল,
"আনছি, আনছি। কিন্তু আগে একটা কথা শোনো।"

আরিয়ান দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
"আমি কথা শুনতে আসিনি। হেনা কে চাই। এখনই।"

আমজাদ একটু হেসে, ঠাণ্ডা গলায় বলল,
"তুমি আরিয়ান, তোমাকে চিনি, তাই আজ দেখা করাচ্ছি।
আর কেউ হলে? হা! হেনা তো এখন আমার সম্পত্তি। আমি চড়া দামে কিনেছি ওকে।"

আরিয়ান এর চোখে রক্ত উঠে এলো।
কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেললো এক মুহূর্তের জন্য।

আমজাদ হালকা গম্ভীর গলায় বললো,
"হেনা এখন আমার জিম্মায় আছে। তুমি ওকে একঝলকে দেখতে পাবে, কিন্তু মনে রাখো—
এই জগতে কিছুই ফ্রি না।"

আরিয়ানের হাত মুঠো হয়ে উঠলো…

মিস্টার আমান আর তৃষা একসাথে বাংলো বাড়ির প্রতিটি কোণ ঘুরে দেখতে লাগলো। বিশাল বারান্দা পেরিয়ে তারা গেলো বাইরের বাগানে, যেখানে ছোট্ট একটা ঝরনা ঝরঝর করে বয়ে চলেছে। বাগানের গোলাপগুলো ভোরের শিশিরে ভেজা, বাতাসে হালকা চন্দনগন্ধ।

তৃষা একসময় বললো,
"জায়গাটা যেন এক রকম শান্তি দেয়... খুব সুন্দর।"

আমান হালকা হেসে বললো,
"হ্যাঁ, এই বাংলোটা দাদীর প্রিয়। উনি চেয়েছেন আমরা এখানে কিছু সময় কাটাই।"

তৃষা একবার চারপাশে তাকিয়ে নিলো, তারপর বললো,
"কত সুন্দর করে সব সাজানো... মনে হচ্ছে কারও অপেক্ষায় আছে সবকিছু।"

আমান এক মুহূর্তের জন্য চুপ করে থেকে তৃষার দিকে তাকিয়ে থাকলো।
তৃষা যখন গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ঝরনার পানিতে হাত ডুবাচ্ছিল, আমানের মনে হলো—সময় গড়াচ্ছে।

আর খুব অল্প সময় পরেই তৃষা আর আরিয়ান এক হয়ে যাবে।

তবুও, মনের গভীরে হালকা একটা না বলা অনুভূতি ছুঁয়ে যাচ্ছিল তাকে।
তৃষার চোখে কিছু একটা ছিল, যেন অজানা কোনো অপেক্ষা, অথবা চাপা দুঃখ।

কিন্তু আমান কিছু বললো না।
সে শুধু হালকা হেসে পাশে দাঁড়িয়ে রইলো,
চোখে এক অদ্ভুত শান্তি আর একটুখানি বিষণ্ণতা।

তৃষা কিছুক্ষণ চুপচাপ ছিল। বাংলোর একটি বড় জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিল সে। পাখির ডাক, হালকা বাতাস—সবই চলছিল নিজের মতো, কিন্তু তৃষার ভেতরে অস্থিরতা ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছিল।

একসময় ধীরে ঘড়ির দিকে তাকালো তৃষা।
১২টা বেজে গেছে।

তারপর এক নিঃশ্বাসে বলে উঠলো,
"এইবারও কি... এইবারও কি আরিয়ান আমাকে ধোঁকা দেবে?"
তার কণ্ঠে রাগের সঙ্গে মিশে ছিল হালকা কষ্ট, হতাশা।

মিস্টার আমান একটু থমকে গেলেন।
তিনি অনুভব করলেন, এই প্রশ্নে শুধু রাগ নয়—ভাঙা বিশ্বাসের একটুকরো কাঁটার মতো কিছু আছে।

তিনি তৃষার দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললেন,
"তৃষা, আমি জানি ও আসবে... নিশ্চয়ই কোনো কারণে দেরি হচ্ছে।"

তৃষা বললো,
"কিন্তু এত দেরি হওয়ার কথা তো নয়!

আমান একটু চুপ করে থেকে বললো,
"হয়তো ও আসার পথেই আছে।"

তবু, তৃষার চোখে সেই পুরোনো দুঃখ, সেই অজানা ভয়—আবার ভেঙে পড়ার, আবার অপেক্ষা করেও কিছু না পাওয়ার আশঙ্কা যেন ছায়ার মতো ভেসে উঠলো।

চলবে.....
 


 

Comments

    Please login to post comment. Login