Posts

উপন্যাস

তোমার জন্য....(পর্ব - ৮২)

July 19, 2025

Boros Marika

49
View

আরিয়ান ধীরে ধীরে সামনে এগিয়ে গেলো। চোখের কোণে অস্থিরতা, মনের ভেতরে প্রবল ঘূর্ণি।
আমজাদ তখন ঠোঁটে অদ্ভুত এক ঠাণ্ডা হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। সে কিছুই বলেনি, শুধু একবার চোখ ইশারা করলো তার একজন দেহরক্ষীর দিকে।

কিছু মুহূর্তের মধ্যেই, পেছনের একটি দরজা খুলে গেলো। দুজন লোক হেনাকে ধরে নিয়ে এলো।

হেনার চেহারা দেখে আরিয়ান স্তব্ধ হয়ে গেলো।

তার চুল এলোমেলো, মুখে নিস্তেজ ভাব, গায়ের কাপড়গুলো ছেঁড়া-ভাঙা আর চোখের নিচে কালো দাগ। সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন, যেন একেকটা ক্ষত কথা বলছে—নির্যাতনের, লাঞ্ছনার।

হেনা একবার আরিয়ানের দিকে তাকালো। এক মুহূর্তের নীরবতা।

আরিয়ান আর নিজেকে সামলাতে পারলো না। দৌড়ে গিয়ে হেনার কাছে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো। কাঁপা কাঁপা হাতে হেনার হাত ধরলো।
তারপর ভাঙা কণ্ঠে বললো,
"তুই ঠিক আছিস?"

"আমি তোকে ঠিক করে তুলবো... আমি তোকে এখান থেকে নিয়ে যাবো, আমি তোকে কিছুতেই ওদের কাছে হারাতে দেবো না।"

হেনা খুব আস্তে মলিন একটা হাসি দিলো। ঠোঁটে যেন রক্তের ছাপ।
"আমি আছি, সাহেব... আজ ওরা আমাকে বিদেশ পাচার করে দিবে। ভাবছিলাম, আর কোনোদিন দেখা হবে না। শেষবার তোমাকে দেখতে চাইছিলাম শুধু…"

তার চোখে জল ভেসে উঠলো।
আরিয়ান কেঁপে উঠলো এই কথায়।

সে ধীরে ধীরে হেনার কানের কাছে চুলগুলো সরিয়ে মুখ নিয়ে গেলো। কাঁপা কণ্ঠে, কিন্তু দৃঢ় গলায় বললো,
"আমি আছি তোর সাথে… কিছুই হবে না তোর।

তারপর ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালো আর ধাপ গুনে গুনে চলে গেলো আমজাদের সামনে।

চোখে জ্বলন্ত আগুন।

আরিয়ানের চেহারায় ছিল এক অদ্ভুত রকমের শান্ত রাগ, যেমন একটা ঝড় থেমে যাওয়ার আগমুহূর্তে থাকে।

"তুমি বলেছিলে, আমাকে জানো বলে হেনার দেখা করাচ্ছো। এখন আমি বলছি—আমি হেনাকে এখান থেকে নিয়ে যাবো। এখন তুমি আমাকে বলো, তোর লেনদেন কত, সব মিটিয়ে দেবো। কিন্তু হেনা যাবে না কোথাও।"

আমজাদ একটু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো, কিন্তু তার ঠোঁটের কোণে তখনও সেই ঠাণ্ডা একখানা হাসি।


আমজাদ গভীরভাবে আরিয়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলো। এক মুহূর্ত... তারপর ধীরে ধীরে তার ঠোঁটের কোণে সেই চেনা ঠান্ডা হাসিটা ফিরে এল।
সে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বললো:

"ওরে বাবু, তুমি তো আস্তে আস্তে মজে যাচ্ছো হেনার প্রেমে... সাবধান, এই পথে প্রেমে পড়লে শেষ—একেবারে শেষ।"

আরিয়ান দৃঢ় কণ্ঠে বললো:

"আমি শেষ হতে রাজি, কিন্তু হেনাকে শেষ হতে দেবো না।"

আমজাদ একটু হাসলো—এইবার একটু ভিন্ন রকমের হাসি। তারপর বললো:

"ভালো কথা, তুমি তিরিশ লাখ টাকা এখনই দাও, হেনা এখন থেকে তোমার জিম্মায়। কিন্তু এক কোটি টাকার ব্যাপারটা আমি ভুলে যাচ্ছি না, সময় লাগলে লাগুক—কিন্তু ভুলে যেও না, আমি ব্যবসা করি, প্রেম না।"

আরিয়ান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো:

"তুমি ব্যবসা করো ঠিকই, কিন্তু আজকের এই সিদ্ধান্ত তোমার সবচেয়ে বড় ভুল হবে, যদি হেনাকে আবার স্পর্শ করতে যাও।"

এই কথা শুনে আমজাদ প্রথমবারের মতো চুপ হয়ে গেল। তার চোখে এক ধরনের সতর্কতা।

এরপর সে হঠাৎ করেই বললো:

"নাও, হেনা তোমার। কিন্তু মনে রেখো, আমি যা বলি তা রাখি।"

আর শোনো আরিয়ান বাবু তোমার  কোনো টাকা দিতে হবে না, আজ থেকে হেনা তোমার।
আরিয়ান অবাক হলো, কিছু বলার আগেই - আমজাদ বলে উঠলো আমারও মন আছে এই বলে জোরে হেসে দিল.......

হেনার চোখে তখন জল—কিন্তু সেই জলে ভেসে উঠছিল মুক্তির আলোর ছায়া।

আরিয়ান তার গাড়ির দিকে হাঁটতে থাকলো হেনাকে নিয়ে। মনে তখন ঝড়, কিন্তু একটা শান্তি ও বুকে গাঁথা—"আজ আমি ওকে বাঁচিয়েছি।"

অন্যদিকে আমজাদ জানালার পাশে দাঁড়িয়ে সিগারেটের ধোঁয়ায় মিশিয়ে দিলো নিজের আসন্ন হেরে যাওয়ার ছায়া।
নিজেকে বললো,
"এই ছেলেটা প্রেমে পড়েছে... আর প্রেমে পড়া পুরুষ ভয়ংকর হয়, আমি জানি।"

চলবে......

Comments

    Please login to post comment. Login