তৃষা একটা খুব পুরোনো, দামী শোপিস দেখছিলো। সেটার গায়ে ছিলো সূক্ষ্ম নকশা—সম্ভবত বহু বছর আগের রাজকীয় কোনো ঘরের স্মৃতি বহন করে। একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিলো সে, যেন কিছু খুঁজছিলো সেই নিস্তব্ধ জিনিসটার ভিতর।
ঠিক সেই সময়ে মিস্টার আমান ধীরে এসে দাঁড়ালেন তার পাশে। গলা পরিষ্কার করে হালকা একটা শব্দ করতেই তৃষা হঠাৎ কেঁপে উঠলো। ফিরে তাকিয়ে দেখলো—আমান।
– “সরি!” বললো আমান ধীর স্বরে।
তৃষা একটু চমকে উঠলেও নিজেকে সামলে বললো, “ইট’স ওকে।”
একটু নীরবতা… তারপর হঠাৎ তৃষা নিচু গলায় বললো:
“দুপুর একটা বিশ মিনিট হয়ে গেছে... এখনও আরিয়ান আসলো না।”
আমান কিছু একটা বলার জন্য মুখ খুলছিলেন—শান্তভাবে বোঝাতে চেয়েছিলেন হয়তো কিছু। কিন্তু তৃষা হাত তুলে থামিয়ে দিলেন।
চোখে জমে থাকা কষ্ট চেপে রেখে বললেন:
“ওর হয়ে কিছু বলবেন না, প্লিজ। আপনি এমনিতেই অনেক করেছেন… আর না।”
তৃষার গলায় ছিল না অভিমান—ছিল কষ্ট আর নিজেকে বোকার মতো বিশ্বাস করায় এক ধরণের গোপন লজ্জা। আমান কিছু বললেন না—শুধু তৃষার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলেন কিছু সময়। তাঁর চোখে এক অদ্ভুত সংযম, এক গভীর অনুভব… যেন বলে দিচ্ছিল, “তোমার যা ভালো, আমি তাই চাই।”
তৃষা একটুখানি চুপ করে রইলো। মিষ্টি রঙের শাড়ির আঁচলটা ধরা ছিল তার আঙুলে, শক্ত করে। চোখের কোণটা লাল হয়ে উঠছিল ধীরে ধীরে।
তারপর একটু ফিসফিস গলায়, যেন নিজের কাছেই স্বীকার করছিল—
“আমারই ভুল... যে আমি আরিয়ানকে বিশ্বাস করে এখানে আসলাম।”
একটু থেমে, দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার বলল—
“যে ছেলে বিয়ের দিন আমাকে ফেলে চলে যেতে পারে, তাকে আবার বিশ্বাস করা যায়?”
তার গলার স্বর খানিকটা কাঁপছিল, কিন্তু তবুও নিজেকে দৃঢ় রাখার চেষ্টা করছিল। আমান চুপচাপ তাকিয়ে ছিলেন তার দিকে।
তৃষা আর ধরে রাখতে পারলো না নিজেকে।
“আমি ওর সাথে আর কখনও দেখা করতে চাই না।”
এই বলে, তৃষার চোখের কোনা বেয়ে চুপচাপ গড়িয়ে পড়ল এক ফোঁটা অশ্রু। সে সেই পুরোনো শোপিসটার দিকে তাকিয়ে রইলো, যেন নিজের প্রতিচ্ছবি দেখছিল সেখানে—ভেঙে যাওয়া, অথচ এখনো গাঁথা।
চলবে.......