Posts

উপন্যাস

তোমার জন্য....(পর্ব - ৮৫)

July 19, 2025

Boros Marika

53
View

রোদ্দুরে ঝিম ধরা দুপুরের আবছা আলোয় আরিয়ান ধীরে ধীরে বাংলো বাড়ির ভেতরে ঢুকলো।
হাত ধরে হেনাকে নিয়ে এল সে—
চোখেমুখে ক্লান্তি, দুশ্চিন্তা,
আর ভেতরভরা অজস্র না বলা কথা।

ঘরজুড়ে যেন নেমে এলো এক চেপে রাখা নীরবতা।
তৃষা দাঁড়িয়ে, একদৃষ্টিতে তাকিয়ে—
আর হেনা তার পাশ ঘেঁষে ঢুকতেই
তৃষার বুকের গভীর থেকে উঠলো এক গোপন ব্যথার ঢেউ।

হেনার মুখে আতঙ্ক, চোখে কষ্ট।
শরীর কাঁপছে দুর্বলতায়।
মাটির দিকে তাকিয়ে সে দাঁড়িয়ে,
আর কারও চোখে তাকাতে পারছে না।

মিস্টার আমান কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলেন দু’জনের দিকে,
তারপর নরম গলায় বললেন—
“সার্ভেন্টকে বলো পানি আর শরবত আনতে।”

একজন মহিলা কর্মচারী দ্রুত পানি আর শরবত নিয়ে এলো।
হেনা কাপা হাতে গ্লাসটা ধরতেই
প্রায় পড়েই যাচ্ছিল।

ঠিক তখনই আরিয়ান ঝুঁকে পড়ে ধরে ফেললো তাকে।
হেনার চোখে চমক,
আরিয়ানের চোখে একটা সান্ত্বনার স্পর্শ।

তৃষা দাঁড়িয়ে, চুপচাপ।
কিন্তু তার হৃদয়ের গভীরে যেন এক টুকরো ছুরি ধীরে ধীরে ঢুকে যাচ্ছে।
“এই যত্ন, এই স্পর্শ, এই দৃষ্টি—এতো দিন আমি পেতাম…”
চোখেমুখে কিছু না জানালেও ভেতরে অসহনীয় এক কষ্ট জমতে লাগলো।

মিস্টার আমান এবার সংযত গলায় প্রশ্ন করলেন—
“কে এই মেয়েটা, আর তোমার সঙ্গে ওর সম্পর্কটা কী?”

আরিয়ান কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো।
তারপর গভীর নিশ্বাস ফেলে বলল—
“ওর নাম হেনা। আমি যখন আসছিলাম, তখন রাস্তায় একটা এক্সিডেন্ট দেখি।
গাড়ি ভেঙে গিয়েছিল, পুরো পরিবার মারা যায়—
মেয়েটা বেঁচে ছিল, একা, ভীত, কাঁপছিল।
আমি চিনি ওকে। ওর বাবার সঙ্গে আগেই ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল।”

তৃষা চমকে তাকাল।
গলা কাঁপতে কাঁপতে বলল—
“আমাকে তো কখনও এসব বলোনি।
তোমার পরিচিত এমন কাউকে তুমি এতদিন লুকিয়ে রাখলে?”

আরিয়ান চুপ।
তৃষার চোখের দিকে তাকিয়েই থাকতে পারছিল না।

একটু থেমে বলল—
“হেনা আর আমি কখনো খুব ঘনিষ্ঠ ছিলাম না।
ওর বাবার সঙ্গে এক প্রজেক্টে কাজ করেছি।
তখন একবার পরিচয় হয়।
আজ ওকে রাস্তায় এমন অবস্থায় দেখে আমি…”

হেনা তখনও কিছু বলছে না।
চোখে অনুরোধ—
“আমাকে বোঝার চেষ্টা করো…”

এমন সময় একটা ছোট ফ্ল্যাশব্যাকে ফিরে যায় হেনা।
গাড়িতে বসে হেনা চুপচাপ আরিয়ানের পাশে।
আরিয়ান ড্রাইভ করতে করতে বলছে—
“হেনা, আমি তোকে একটা নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাচ্ছি।
তুই এখন কিছু ভাবিস না।
কিছুদিন থাকবি।
আমি যা বলবো, তুই শুধু হ্যাঁ বলবি।
আমি তোর পাশে আছি।”

হেনা কিছু না বলে শুধু মাথা নেড়েছিলো।
তার চোখে তখন নির্ভরতা আর ভয় একসাথে।

বর্তমানে ফিরে আসে হেনা।
চুপচাপ গ্লাসটা আবার ঠোঁটে নিয়ে যায়।

আরিয়ান একটু পিছিয়ে দাঁড়ায়, কিন্তু নজর সরাতে পারে না হেনা থেকে।
তৃষা, দূর থেকে দাঁড়িয়ে, হৃদয়ের এক কোণে ফাটল টের পায়—
এই ছেলেটাকে কি আমি এখনও ভালোবাসি?
নাকি আমি শুধু তাকে ফিরে পেতে চেয়েছিলাম?

ঘরে একটা অস্বস্তিকর নিস্তব্ধতা…
চারটা হৃদয় ভিন্ন ভিন্ন রক্তক্ষরণে ভিজে আছে—
তবে কার ব্যথা সত্যি?
এখনই সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় নয়।

চলবে......
 


 

Comments

    Please login to post comment. Login