আমার বয়স যখন ১০ বছরের নিচে ছিল তখন আমরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় থাকতাম। তখন মাঝে মাঝেই ঢাকায় ফুপির বাসায় বেড়াতে আসা হতো। আমি খুব অল্পতেই অবাক হতাম। ঢাকা ছিল আমার জন্য এক বিস্ময়ের রাজ্য। উচু উচু দালান, বড় বড় ব্রিজ পায়রা রিকশা এর সব কিছুই আমাকে আনন্দ দিত। বিশেষ করে ওই পায়রা রিকশার ট্রিং ত্রিং শব্দ। ওটা এখনো শুনলে আমি আবেগী হয়ে পরি। আমরা ট্রেনে করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে কমলাপুর আসতাম। তারপর সিএনজি কিংবা রিকশা নেওয়া হতো। আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হতাম রিকশা নিলে। কারণ ওটার ক্রিং ক্রিং শব্দ আর ধীরে ধীরে চলা দেখে আমি খুব মজা পেতাম। পাশাপাশি চলন্ত অবস্থায় সামনে থেকে বড় বড় দালান দেখার মজাতো আছেই। ফুপির বাসার দুটো জায়গা আমার প্রিয়। একটা টিভির রুম আর আরেকটা সোফার রুম। টিভির রুমে টিভি দেখার মজা আছে। অন্যদিকে সোফার রুমের সোফাগুলোর নরম গদি দিত আমাকে বিশেষ আনন্দ। বারান্দাতেও মজা ছিল। সেখানে সবসময় পরে থাকত পুরোনো আমলের খুব সুন্দর একটা জাহাজের মডেল। খুব ভারী ছিল। তাই তুলতে পারতাম না। তাই এমন একটা ভাব করতাম যেনো আমি এই জাহাজের নাবিক। নিজের মনে একটার পর একটা দৃশ্য আঁকতাম। দৃশ্যগুলো মিলিয়ে জাহাজটাকে নিয়ে সুন্দর একটা গল্প হয়ে যেতো যে গল্পের একমাত্র নায়ক হতাম আমি। এগুলো হয়তো খুব ছোট কোনো সাধারণ বিষয়। কিন্তু আমার কাছে এই ছোট বিষয়গুলোই একেকটা আবেগ। ঢাকায় আমার ছোটবেলার স্মৃতি যতটুকুই ছিল পুরোটাই আবেগে ভরা।