Posts

গল্প

আর হবে কি দেখা

July 20, 2025

Md. Al-Amin Ahmed

58
View

বাহাদুর শাহ পার্কে বিকেলে একা বসে আছে হৃদয়। চট্টগ্রাম থেকে কাল রাতে রওনা দিয়েছিলো। সকালে এসে পৌছেছে। দোকানের জন্য কিছু মালপত্র অর্ডার করেছিলো ইসলামপুর মার্কেটে। সারাদিন কাজ শেষ করে রাতেই আবার রওনা দিবে চট্টগ্রাম এর উদ্দেশ্যে।

যাওয়ার আগেই বিকেলে একটু এদিকসেদিক ঘোরাঘুরি করে বাহাদুর শাহ পার্কে বসছে বাদাম খাওয়ার জন্য। পার্কে শত শত দর্শনার্থী, পথচারী হাটাহাটিতে ব্যস্ত, কেউ বসে আড্ডা দিচ্ছে। একা বসে সবকিছু দারুণ উপভোগ করে সে। ভার্সিটির শিক্ষার্থীরা,  কলেজ এর বন্ধুরা,  প্রেমিক- প্রেমিকা, স্বামী স্ত্রী,  চাকুরী শেষে বিভিন্ন অফিসের কর্মকর্তারা সবাই এসে এখানে আড্ডা জমায়। পার্কের মাঠের চারদিকে বসার জন্য বাউন্ডারি দেয়া আছে। সন্ধ্যা হতেই কানায় কানায় ভরপুর হয়ে যায় বসার জায়গাগুলো। মাঠের দিকে সে আনমনে তাকিয়ে আছে। ভালোই লাগছে তার।

দুইটা মেয়ের ডাকে সম্বিত ফিরে তার।বসার জন্য একটু জায়গা করে দিতে।অন্যদিকে জায়গা হচ্ছিলো না তাই উপায়ান্তর না দেখে ওরা এখানে বসতে চাইছে। সে জায়গা করে দিলো বসার জন্য। দুই বান্ধবী বসে ভালোই গল্প শুরু করলো। একজন এর নাম মিষ্টি অন্যজন তিশা। তিশা তার নতুন প্রেমের গল্প বলছে মিষ্টিকে। অনেক ভালো তার বয়ফ্রেন্ড। ভাল জব করে।ছেলেটার ফ্যামিলি ও অনেক ভালো। মিষ্টি তিশাকে অনেক উপদেশ দেয় সম্পর্কটা পরিণয়ে রুপান্তর করতে। হৃদয় পাশে বসে শুধু তিশার গল্পই শুনছে বাট মিষ্টির কোনো গল্প নেই। কেনো নেই তা জিজ্ঞেস করতে চাইবে কিনা সেটা নিয়ে ইতস্তত করছে যদি ওরা রেগে যায়। সে মাঠের দিকে আনমনে চেয়েই আছে যেনো সে তাদের গল্প কানে নিচ্ছে না।

মাঠের পাশেই ফুচকার ভ্রাম্যমাণ দোকান। দুই বান্ধবী ফুচকা খাচ্ছে। তারা খেয়াল করলো ছেলেটা কিছু না খেয়ে মাঠেই মন দিয়ে আছে। দুষ্টামির ছলে মিষ্টি বলে ফেললো

: ভাইয়া কিছু না খেয়ে মাঠে বসে আছেন যে। মন খারাপ নাকি?

: না, আসলে আমি একটু পর চট্টগ্রাম এর উদ্দেশ্যে রওনা দিবো। ঢাকায় আসছি তাই একটু ঘোরাঘুরি করতেছি।

কথা বলার সুযোগ পেয়ে মনে মনে খুশিই হলো হৃদয়। দুই বান্ধবীর সাথে ভালোই আড্ডা জমালো সে।

কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে সে আড়চোখে মিষ্টির দিকে তাকায়। মোটামুটি সুন্দর আছে মেয়েটি। ফেস কাটিং, মায়াবী চোখ, সিল্কি চুল, কথা বলার ধরণ, ভালোই লাগলো তার। প্রথম দেখাতেই যেন ভালো লেগে গেলো। কিন্তু তার সম্পর্কে তো জানতে হবে, তার বয়ফ্রেন্ড থাকতে পারে হয়তো। আর আসলেই মেয়েটি কতটা ভালো বা খারাপ, সবকিছু তো জেনেই অগ্রসর হওয়া উচিত। হুট করে পছন্দ করে ফেললেই তো সব হয়ে যায় না।

অনেকক্ষণ আড্ডা হয়ে গেলো। ঘড়ির টাইম দেখে রওনা দিতে রেডি হতে হবে। মেয়ে দুটির সাথে ভালোই আড্ডা হয়েছে। তাদের বিদায় দিতে হবে। কিন্তু সে এখন ইতস্তত করছে। মিষ্টিকে তার ভালোই মনে ধরেছে। কিন্তু প্রথম দেখাতেই কিভাবে বলবে। আবার আজ চট্টগ্রাম চলে গেলে ওকে পাবে কিভাবে। তাদের থেকে সে বিদায় নিচ্ছে। মিষ্টিকে কানে কানে আস্তে করে বললো আপনার নাম্বার টা? মিষ্টি বুঝতে পারে, বাট বান্ধবীকে না বুঝতে না দিয়ে নাম্বার টা দেয় হৃদয়কে। নাম্বার নিয়ে মিষ্টিকে কল দেয়। বাট ব্যালেন্স না থাকায় কল যায় না। পরে রিচার্জ করে কল দিবে বলে বিদায় নেয়।

বাসে জানালার পাশের সিটে বসে সে মিষ্টির কথা ভাবছে। কি সুন্দর মেয়েটি। মায়াবী চাহনী দিয়েই তাকে পাগল করে দিয়েছে। বাস ছেড়ে দিলো। বাসা থেকে তার মা কল দিয়েছে। রওনা দিয়েছে কিনা, কতটুকু আসছে, এত দেরি হচ্ছে কেনো। হঠাৎ সজোরে টান দিয়ে তার মোবাইল টা নিয়ে গেল ছিনতাইকারীরা। গাড়ি নেমে চোরকে ধরা তো পরের কথা খুজেই পেলো।

বাসায় পৌঁছে মন খারাপ করে শুযে আছে হৃদয়।  মোবাইলটা মোটামুটি দাম দিয়ে কিনেছিলো। মোবাইল হারানোর এর চেয়ে বেশি কষ্ট পেলো মিষ্টির নাম্বর হারিয়ে। এখন কি উপায়,  মিষ্টিকে সে আর কখো ফিরে পাবে না।

এরপর অনেকবার ঢাকা আসছে গেছে। বাহাদুর শাহ পার্কে মাঠের চারদিকে সে শুধু মিষ্টিকে খুজে বেড়ায় হৃদয়। হয়তো আর পাবে না মিষ্টিকে।হয়তো আর কখনো হবে না দেখা।

Comments

    Please login to post comment. Login