Posts

চিন্তা

ইতিহাসকে নতুন করে পড়ার সময় এসেছে

July 20, 2025

তোফায়েল ইসলাম

Original Author তোফায়েল ইসলাম

62
View

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে "জামায়াতে ইসলামি" নামটি যেন বারবার ফিরে আসে—প্রশ্নবিদ্ধ, বিতর্কিত, কিন্তু এক অস্বীকারযোগ্য বাস্তবতার মতো।

তাদের অনেকেই বলে পাকিস্তানের ‘প্রেতাত্মা’। 

কারণ একটাই—তাদের আদর্শিক শিকড় উপমহাদেশের ভাঙনের পূর্বের সময় থেকে, বিশেষ করে আবুল আলা মওদূদীর গড়া জামায়াত আন্দোলনের ধারায়। তবে প্রশ্ন হচ্ছে—এই দলটি আদর্শগতভাবে পাকিস্তানপন্থী হয়েও শত বাধা-বিপত্তি, মৃত্যুর হুমকি, রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও আজও বাংলাদেশের মাটিতেই থেকে গেছে। **তারা পালায়নি।**

১৯৭১-পরবর্তী বাংলাদেশে এমনকি জামায়াতের শীর্ষ নেতারা মৃত্যুদণ্ড পেয়েছেন, অনেকেই বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন, তবু তাদের কেউ ভারতে পালিয়ে যায়নি, পাকিস্তানে রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়নি। এই দেশের মাটিতে থেকে, আইনি লড়াই করেই তারা তাদের অবস্থান ধরে রেখেছে—ভুল হোক বা শুদ্ধ, তারা এই মাটিকেই নিজেদের ভবিষ্যৎ ভেবেছে।

অন্যদিকে আমরা দেখেছি একাধিক তথাকথিত প্রগতিশীল রাজনৈতিক শক্তি—যারা মুক্তিযুদ্ধের নাম ভাঙিয়ে রাজনীতি করে—সঙ্কটমুহূর্তে বারবার **ভারতের** দিকেই ছুটে গেছে।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হতেই তারা আশ্রয় নেয় কলকাতার **“দমদম হাউসে”**।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর অনেক নেতা **দিল্লির দোরগোড়ায়** আশ্রয় পান।

২০০১ সালে ক্ষমতা হারানোর পরও দেখা যায়—দলের শীর্ষ নেতৃত্ব কেউ কলকাতার নিউটাউনে, কেউবা নয়াদিল্লির চ্যানেল দফতরে।

একটি জাতির জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ তখনই আসে, যখন রাজনীতি করে দেশ নিয়ে, কিন্তু পরিকল্পনা হয় সীমান্তের ওপারে বসে। 

 প্রশ্ন উঠবেই—

> যদি *রাজাকার* বলতে বোঝায়—“যে ব্যক্তি বা দল নিজের দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে বিদেশি স্বার্থে কাজ করে”—

> তাহলে ইতিহাসের আয়নাতে কার মুখে সবচেয়ে বড় রাজাকারের ছাপ ফুটে ওঠে?

যারা মৃত্যুর দণ্ড মাথায় নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে টিকে থাকে?

নাকি যারা রাজনৈতিক হাওয়া উল্টো দেখলেই **কলকাতা-দিল্লির কাঁধ খোঁজে**?

ভারতের সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা **এএস দুলাত** তাঁর বই *"Spy Chronicles"*–এ স্বীকার করেছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঘটনাবলি ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিতে ছিল এবং এখনো আছে। শুধু নজরদারি নয়, তারা ‘কনট্রোল’ করার মতো রাজনৈতিক চ্যানেলও তৈরি করেছে।

এখানেই জামায়াত ও অন্যান্য তথাকথিত স্বাধীনতাকামী দলের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে। জামায়াতের আদর্শের সাথে দ্বিমত থাকতে পারে, অতীতের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করা যায়, কিন্তু তাদের মধ্যে **একটি জিনিস আছে**—তারা সংকটে মাটি ছাড়ে না।

তারা পাকিস্তানে যায় না, ভারতে তো নয়ই।

 তাই ইতিহাসকে নতুন করে পড়ার সময় এসেছে।

যে দল গরিব জনগণের ত্যাগে রাজনীতি করে কিন্তু বিদেশের মাটিতে কারও দরজায় ঘুষি দেয় না, সে কি আদতেই 'প্রেতাত্মা'?

নাকি বড় রাজাকার সেই, যে দেশের পতাকা বুকে লাগিয়ে বিদেশি শক্তির বুটের তলায় নীতি নির্ধারণ করে?

**শত্রুর বন্দুক নয়, বন্ধুর কাঁধই যদি শেষ ভরসা হয়—তাহলে সেই বন্ধুর ছায়া আসলে কতটা স্বাধীনতা দেয়?

লেখক: তোফায়েল ইসলাম

ধর্ম-রাজনীতি বিশ্লেষক | সচেতন নাগরিক

Comments

    Please login to post comment. Login