Posts

নন ফিকশন

ছাত্রজীবনে বিড়ির গুরুত্ব — ওমর ফারুক

July 20, 2025

ওমর ফারুক আশরাফি

117
View

ছাত্রজীবনে বিড়ির গুরুত্ব

— ওমর ফারুক

ছাত্রজীবনের শুরুটা ছিল একদম সাধারণ। সকালবেলা স্কুলে যাওয়া, বিকেলে খেলাধুলা আর সন্ধ্যায় পড়তে বসা—এই ছিল জীবনের রুটিন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রুটিন বদলায়, পরিবেশ বদলায়, আর সেই সঙ্গে বদলে যায় মানুষও।

আমার স্কুল ছিল একেবারে গ্রামীণ পরিবেশে। আমরা যারা বন্ধু ছিলাম, তাদের অনেকেই ছিল দুরন্ত, উৎসাহী আর নানা কিছু ‘প্রথমবার’ করে দেখার আগ্রহে ভরা। নবম শ্রেণিতে উঠেই দেখলাম কয়েকজন সহপাঠী মাঝে মাঝেই ঝোপের আড়ালে গিয়ে কিছু একটা করে। কৌতূহলী হয়ে একদিন পিছু নিলাম। দেখি, ওরা বিড়ি খাচ্ছে।

সেইদিনই জীবনে প্রথম বিড়ির গন্ধ পাই। আশ্চর্যজনকভাবে সেটা তখন আমার কাছে খারাপ কিছু মনে হয়নি। বরং মনে হয়েছিল, ‘বড়’ হয়ে যাওয়ার এক ধাপ যেন! এমনকি সেই বন্ধুরা আমাকে বলল,
— “বিড়ি খাওয়া মানে সাহসী হওয়া, সবাই পারে না।”

প্রথমদিকে আমিও দু–একটা টান দিয়েছিলাম। গলা জ্বালা করত, কাশি উঠত, কিন্তু ভেতরে একটা অহংবোধ কাজ করত—আমি ‘সাধারণ’ ছাত্রদের চেয়ে আলাদা। তখনকার ছোট্ট মানসিকতা দিয়ে বুঝতেই পারিনি, আমি এক ভয়ংকর ফাঁদে পা দিচ্ছি।

আমাদের আড্ডার জায়গা ছিল স্কুলের পাশের বাঁশঝাড়। ওখানেই লুকিয়ে বিড়ির ধোঁয়ার সঙ্গে উড়ত আমাদের কাঁচা স্বপ্ন। কখনো পরীক্ষায় খারাপ করলে হতাশা কাটাতে, কখনো কাউকে ইমপ্রেস করার বাহানা হিসেবে বিড়িই হয়ে উঠেছিল ভরসার মাধ্যম।

একদিন এক শিক্ষক আমাদের ধরে ফেললেন। এরপর স্কুলে অনেক লজ্জা, বাড়িতে বকাঝকা—সব মিলিয়ে ভয়াবহ একটা শিক্ষা হয়ে গেল সে ঘটনা। ওই ঘটনার পর থেকেই আমি সিদ্ধান্ত নিই—এই পথে আর নয়।

পেছনে ফিরে তাকালে বুঝি, বিড়ি তখন আমাদের কাছে একটা ‘ছদ্ম শক্তি’র প্রতীক ছিল। মনে হতো, এটা খেলেই সাহস বাড়ে, আকর্ষণ বাড়ে, মন খুলে কথা বলা যায়। কিন্তু এটা নিছক এক ভ্রান্তি। বিড়ি কোনোদিনও বন্ধুত্ব গাঢ় করে না, মন ভালো করে না, বরং ধীরে ধীরে শরীর, মন, ভবিষ্যৎ—সবকিছু নিঃশেষ করে দেয়।

আজ আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। যখন দেখি কেউ বিড়ি হাতে নিচ্ছে, তখন মনে হয়, ওটা যেন নিজেরই পুরনো ছায়া। চাই না কেউ সেই ভুল পথ বেছে নিক।
বিড়ির আসল সত্যটা হলো—এটা প্রয়োজন নয়, এটা প্রবণতা; আর সময় থাকতে এই প্রবণতা থেকে নিজেকে ফেরানোই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।

Comments

    Please login to post comment. Login