জীবন এক সময় জানিয়ে দেয় সে ক্লান্ত। শত বাধা আর ব্যর্থতা উপেক্ষা করে আজ সে সফল কিন্তু এই পথ পারী দিতে গিয়ে সে ক্লান্ত। তাকে কড়া রোদে দাড়িয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে একটা চাকরির জন্য। দ্বারেদ্বারে ঘুরে অল্প মাইনের একটা চাকরি পাওয়ার পর চাহিদা নামক দানব গ্রাস করে নিয়েছে সকল পরিশ্রমের পারিশ্রমিক। নিজেকে কিছু দেয়ার আগেই পরিবার নিয়ে গেছে তাদের টানাটানির সংসারের ছোট ছোট চাহিদা পূরণের জন্য সেই মাইনে। আধপেটা হয়ে কোনো রকম জীবন যাপন করেও পূরণ হয় নি পরিবারের সকল চাহিদা। এতো কষ্ট করেও তার শুনতে হয়েছে পরিবারের জন্য কিছুই করতে পারছে না। চাহিদার বেড়াজালে আটকে গিয়ে আরো ভালো মাইনের চাকরির খোঁজে আবারো কড়া নাড়তে হয়েছে বড় বড় দালান কোঠায়। এক সময় ভালো মাইনের চাকরী হলো। চাকরীর বয়স বেড়ে যাবার কারণে মাইনেও বাড়লো। এর সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে গেলো নিজের বয়স। কিভাবে যে এতো তাড়াতাড়ি চল্লিশ পার করে বেয়াল্লিশ এ পা দিলাম বুঝলাম না। এই কিছুদিন আগেই এম এ পাস করে পড়াশোনা শেষ করলাম। তারপর চাকরি করলাম মাত্র তো তেরো বছর। এর মধ্যেই পার হয়ে গেছে জীবনের বেয়াল্লিশ টি বছর। সময় এতো নিষ্ঠুর আচরণ করলো আমার সাথে। আর একটু দেরীতে গেলে কি এমন ক্ষতি হতো সময়ের..? এখন কেন যেনো আর বন্ধুদের সাথে আড্ডা জমে না। মন যেনো কেমন উদাস হয়ে গেছে। এখন আর সিনেমা দেখতে ইচ্ছে করে না। এখন আর আগের মতো ক্রিকেট খেলতে ইচ্ছে করে না। মন চায় একটু দোলানো চেয়ারে বসে শরীর কে দোল খাওয়াতে। এখন আর সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠতে মন চায় না। সময়ের গহ্বরে পড়ে কখন যে বিয়ের বয়স পার করে ফেলেছি বুঝতে পারি নি। এখন আর বিয়ে-থা করার সময় কই..? এখন যদি নিয়ম ভেঙে বিয়ে করি তাহলে আমার সন্তানের পাঁচ বছর বয়সে আমার বয়স হবে সাতচল্লিশ বছর। বয়সের এই ব্যবধান এই শহরে বড় বেমানান। তাই আর বিয়ে করা হলো না। শরীর আমাকে সাফ জানিয়ে দিয়েছে এখন সে আর চাপ নিতে চায় না। বয়স বলছে তার চলতে কষ্ট হয়। এখন আর পরিবারের মানুষ গুলো তাদের চাহিদা নিয়ে আমার কাছে ঘ্যান ঘ্যান করে না। তাদের সকলের চাহিদা একটা একটা করে পূরণ হয়ে গেছে। তাদের চাহিদায় চাপা পরে মরে গেছে আমার চাহিদা গুলো। আমি এখন আর নতুন পোশাক ক্রয় করতে মার্কেটে যাই না। যেগুলো আছে সেগুলোই ব্যবহার করি। এখন আমার যথেষ্ট টাকা হয়েছে কিন্তু মনের ইচ্ছে আর আশা গুলো চিরতরে মরে গেছে। আমার শরীর এখন বিশ্রাম চায়। আজ সে ক্লান্ত বড় ক্লান্ত। আজ কেবল অপেক্ষা এক প্রহরের। জীবন যেখানে থেমে যাবে। জীবনের রং তুলিতে আঁকা ছবি টা আজ ফিকে হয়ে গেছে। এখন সব সাদাকালো দেখায়। আর ক'দিন ই বা বাকী আছে জীবনের..? হয়তো কোনো ডায়েরির পাতায় রয়ে যাবে এই জীবনের ইতিকথা। তবু ভালো কলম তার বুকের নিংড়ানো কালি টুকু দিয়েছিলো বলে আজ লেখা হলো আমার এই এলোমেলো জীবনের গল্প টা।