সোমবার ২১জুলাই২০২৫ এমন একটি দিন যেদিন কত মায়ের বুক খালি হয়েছে । অন্যান্য দিনগুলোর মতো মা বাবারা তাদের আদরের কলিজার টুকরা টাকে সকালে খাবার খাইয়ে স্কুলের পোশাক পরিয়ে নিয়ে এসেছে জীবন কে আলোকিত করার জন্য সমাজকে আলোকিত করার জন্য মাইলস্টোন কলেজে।কোন মা বাবা তো জানতো না তার সন্তানের সাথে তার এটাই শেষ দেখা । কয়েক মিনিটে তাদের সন্তানেরা জ্বলে পুড়ে ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাবে । তখন দুপুর ১:০০ বাচ্চাদের ছুটি অভিভাবকেরা আসছেন বাচ্চাদের বাসায় নিয়ে যেতে।কিছু বাচ্চারা মা বাবার সাথে বাসায় চলে যায়,কিছু বাচ্চা অপেক্ষা করে মা বাবার জন্য আর কয়েক জন মা বাবা গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে সন্তানের অপেক্ষায়। হঠাৎ করে বিমান বাহিনীর এফ -7 বি জে আই প্রশিক্ষণ বিমান এসে পড়ে মাইলস্টোন কলেজের হায়দার আলী ভবনে। চোখের পলকে ই সব জ্বলে পুড়ে যায়। বাচ্চারা পোড়া শরীর নিয়ে ছুটাছুটি করতে থাকে। ক্লাসের ভেতর থেকে বাচ্চারা বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার দিতে থাকে। অভিভাবকেরা পাগলের মত ছুটতে থাকে সন্তানের খোঁজে। ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি ইউনিট আসে আগুন নিভাতে। সেনাবাহিনী রা একের পর এক ক্ষত বাচ্চাদের বের করতে থাকে আর এম্বুলেন্স ও হেলিকপ্টার করে বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যায়। বাচ্চারা যে ভাবে টেবিলে বসে ছিল সেই ভাবেই পড়ে বসে থাকে। এই দৃশ্য দেখবার মত না । মা বাবা বাইরে থেকে দেখছে ভিতরে সন্তানেরা পোড়ে যাচ্ছে তাও কিছু করতে পারছেনা । মা বাবারা অসহায় হয়ে পড়ে কিছুই করার নেই তাদের । কয়েক জন মা সন্তানকে খুঁজতে গিয়ে নিজেই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। দুই জন শিক্ষিকা তাদের জীবনের বাজী রেখে তাদের পোশাক পুড়ে গেছে দেহ জ্বলে যাচ্ছে তাও তারা যে দিক দিয়ে ফাঁকা জায়গা পেয়েছে সে দিক দিয়ে বাচ্চাদের নিচে পেলে দিয়েছে বাচ্চাদের সেনাবাহিনী র হাতে দিচ্ছে ম্যাডাম মেহরীন ও ম্যাডাম মাসুমা ।শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করেছে বাচ্চাদের নিরাপদে রাখতে। মেহরীন ম্যাডাম চাইলে নিজেকে বাঁচাতে পারতেন । কিন্তু তিনি তা না করে নিজের সন্তানের মত বাচ্চাদের নতুন করে জীবন দিলেন ।১ জন ২ জন নয় কম পক্ষে ২০ জন বাচ্চার প্রান বাঁচিয়েছেন তিনি। প্রত্যেক টা দরজা খুলেছেন, প্রত্যেক টা কন্ঠ চেনার চেষ্টা করেছেন আর যখন নিশ্চিত হয়েছেন কেউ আর বাকী নেই , তখনি হয়তো বুঝলেন নিজের শরীরে আগুন লেগে গেছে ।৮০ ভাগ শরীর দগ্ধ অবস্থায় তাকে নেওয়া হলো ঢাকা মেডিকেল বান ইউনিটে । তীব্র যন্ত্রনা কাতর একজন যোদ্ধা। যে যোদ্ধার অস্ত্র ছিলো ভালোবাসা আর দায়িত্ববোধ। রাত দশটায় তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। পুরো বাংলাদেশ শোকে স্তব্ধ হয়ে যায়। পুরো বাংলাদেশের মানুষের একটাই প্রার্থনা আর যেন কোন মা বাবা কোন দেশ এইরকম দৃশ্য না দেখে। হাসপাতালে যে বাচ্চাগুলো আছে তারা যেন সুস্থ হয়ে মায়ের বুকে ফিরে যেতে পারে।