ব্ল্যাক সাবাথের ফ্রন্টম্যান এবং হেভি মেটাল আইকন ওজি অসবোর্ন মঙ্গলবার (২২ জুলাই) ৭৬ বছর বয়সে মারা গেছেন। তার পরিবার এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
পারিবারিক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাতে হচ্ছে যে আমাদের প্রিয় ওজি অসবোর্ন আজ (মঙ্গলবার) সকালে মারা গেছেন। মৃত্যুর সময় তিনি তার পরিবারের সঙ্গে ছিলেন এবং ভালোবাসায় ঘেরা ছিলেন। আমরা এই দুঃসময়ে সকলকে আমাদের পারিবারিক গোপনীয়তার প্রতি সম্মান জানাতে অনুরোধ করছি।'
চলতি মাসের শুরুতে ব্ল্যাক সাবাথের এই তারকা বার্মিংহামের ভিলা পার্কে তার ব্যান্ডমেটদের সঙ্গে শেষবারের মতো মঞ্চে উঠেছিলেন। এই ঘটনার মাত্র দুই সপ্তাহ পরেই মারা যান তিনি।
'প্রিন্স অব ডার্কনেস' নামে পরিচিত এই তারকা সর্বকালের সবচেয়ে আইকনিক রক ফ্রন্টম্যানদের একজন ছিলেন। ২০০৫ সালের পর চলতি বছরের ৫ জুলাই তিনি প্রথমবারের মতো ব্ল্যাক সাবাথের ব্যান্ডমেট গিজার বাটলার, টনি ইওমি এবং বিল ওয়ার্ডের সঙ্গে পুনরায় মিলিত হন।
'ব্যাক টু দ্য বিগিনিং' নামের ওই কনসার্টটি ছিল তার শেষ লাইভ পারফরম্যান্স। এই অনুষ্ঠানে মেটাল জগতের বড় তারকারাও উপস্থিত ছিলেন। ‘মামা আই এম কামিং হোম’ গানটি গাওয়ার সময় দর্শকদের কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি।
সেই রাতে তিনি তার শারীরিক অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে দর্শকদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, “আমি ছয় বছর ধরে শয্যাশায়ী অবস্থায় আছি। আপনারা জানেন না সে সময় আমার মনের অবস্থা কেমন ছিল। আমার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।"
ওজি অসবর্নের গান মানুষকে হিপটোনাইজ করতে পারে। ফলে তার গান শুনে তরুণরা আত্মহত্যা করতে শুরু করেছিল। এলবাম রিলিজ হতেই দুজন মরে যাওয়ার পর আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। আরেকবার এক তরুণ তার গান শুনে নববর্ষের দিন খোলা ছুরি নিয়ে বের হয়ে একজন নারী ও তার দুই ছেলেকে হত্যা করে। সে সময়েও তার নামে মামলা হয়েছিল। অবশ্য প্রতিটি মামলাতেই আদালতে নির্দোষ সাব্যস্ত হন এই মিউজিশিয়ান।
মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির এই অদ্ভুত প্রতিভা মাত্র ১৭ বছর বয়সে ডাকাতির মামলায় জড়ান, সে সময় তার কাছে জরিমানা দেওয়ার টাকাও ছিল না। অথচ পরে তিনি লাখ লাখ ডলার মূল্যের দুইটি গথিক ভিলার মালিক হন। বেশ কয়েকটা দামি গাড়ি এবং প্রাইভেট জেটও ছিল তার।
অতিমাত্রায় মাদকাসক্তির কারণে তাকে বেশ কয়েকবার তার ব্যান্ড ব্ল্যাক সাবাথ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া মাদকাসক্তির কারণে তিনি তার স্ত্রীকে হত্যার চেষ্টা পর্যন্ত করেছিলেন। তিনি নিয়মিত রিহ্যাবে থাকতেন। আবার মাদক গ্রহণও করতেন। পারকিনসন রোগে আক্রান্ত অসবোর্ন বেঁচে থাকার জন্য দৈনিক আট হাজার ডলার ব্যয় করতেন।
উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালে ইংল্যান্ডের বার্মিংহামের অ্যাস্টনে জন্মগ্রহণ করেন ওজি অসবোর্ন। তার বাবা-মা কারখানা শ্রমিক ছিলেন। চরম দারিদ্র্যের মধ্যে তার শৈশব-কৈশোর কাটে। চুরির অভিযোগে তাকে জেলও খাটতে হয়েছিল। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পার্কিনসন রোগে ভুগছিলেন। এছাড়া তার মেরুদণ্ডে অসংখ্য অস্ত্রোপচারও করা হয়েছে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান