শেষ বসন্তঃ
নাম ছিল তার মায়া, ঠিক যেমন তার চোখের গভীরতা — রহস্যময়, শান্ত, অথচ কাঁদাতে জানে। আর ছেলেটির নাম ছিল অয়ন, এক গরিব ছাত্র, যার স্বপ্ন ছিল একদিন নিজের নামে একটা বই লিখবে।
দুজনের প্রথম দেখা হয়েছিল কলেজ লাইব্রেরিতে। মায়া তখন ইংরেজি সাহিত্যের বই খুঁজছিল, অয়ন পাশে দাঁড়িয়ে রবীন্দ্রনাথের কবিতা পড়ছিল। হঠাৎ মায়ার হাত থেকে বই পড়ে গেলে অয়ন তুলে দেয়। একটা হাসি বিনিময় — আর তারপর শুরু হলো হৃদয়ের গল্প।
ধীরে ধীরে তাদের বন্ধুত্ব প্রেমে রূপ নেয়। অয়ন নিজের চিঠিতে লিখত:
"তোমার চোখে যেন বসন্ত নামে মায়া, আমার পৃথিবী জুড়ে শুধু তুমিই।"
মায়া বলত, “আমি যদি হঠাৎ হারিয়ে যাই অয়ন, তুমি কি আমায় ভুলে যাবে?”
অয়ন হাসত, “তুই মরলে আমি লেখালিখি ছেড়ে দেব।”
কিন্তু বিধাতার কলমে যেন ছিল ভিন্ন ছক।
তাদের প্রেম যখন ঠিক পূর্ণতা পেতে চলেছে, মায়ার শরীর হঠাৎ দুর্বল হতে শুরু করে। পরীক্ষা করতে গিয়ে ধরা পড়ে — ব্লাড ক্যান্সার।
অয়ন সব ছেড়ে ওর পাশে থাকে। প্রতিদিন সকালে ফুল নিয়ে যায় হাসপাতালে। একদিন মায়া বলে,
“আমার সময় হয়তো শেষ, কিন্তু তুই তো লিখবি না বলেছিলি! আমি চাই, তুই একটা গল্প লেখ — যেখানে নায়িকা মরে, কিন্তু নায়ক বাঁচে, ভালোবাসা নিয়ে।”
শেষ বসন্তের এক সকালে মায়া চিরনিদ্রায় চলে যায়। চারপাশে পাখির গান, কিন্তু অয়নের জীবনে নিস্তব্ধতা।
কয়েক বছর পর, এক জনপ্রিয় বই প্রকাশ হয় —
"শেষ বসন্ত"
লেখক: অয়ন বিশ্বাস
উৎসর্গ: “মায়ার স্মৃতিতে, যে আমাকে ভালোবাসা শিখিয়েছিল।”