Posts

চিন্তা

মিল গরমিলের চিরায়ত বয়ান!

July 23, 2025

ফারদিন ফেরদৌস

142
View

ব্যক্তিগতভাবে আমি বিশ্বাস করি না যে, মাইলস্টোন ট্রাজেডিতে শিশুদের লাশের হিসাব কমবেশি করে সরকার বা সরকারি সংস্থাগুলোর কোনো বৈষয়িক বা দাপ্তরিক লাভ আছে। তবে এতদবিষয়ে গুজব ছড়িয়ে কোনো একটি বা একাধিক রাজনৈতিক গোষ্ঠীর নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখা কেন্দ্রিক লাভ থাকতে পারে।

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর- দুই রকম তথ্য দিয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বুধবার দুপুর ১টা পর্যন্ত হালনাগাদ তথ্যে জানিয়েছে, ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৯ জন নিহত হয়েছে।
তবে মঙ্গলবার পর্যন্ত আইএসপিআর যে তথ্য দিয়েছে, সেখানে মৃতের সংখ্যা ৩১ জন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, তারা প্রতিটি মৃত্যুর নাম-পরিচয়সহ যাচাই-বাছাই করে তালিকা প্রকাশ করছেন। ফলে তাদের তথ্যে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে তারা দাবি করেছেন। তাহলে আইএসপিআর কি ভুল? না সেটার বলার সময় আসেনি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হয়ত সর্বশেষ তথ্য হালনাগাদ করে উঠতে পারেনি।

এদিকে কিছুক্ষণ আগে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম তাঁর সোশ্যাল হ্যান্ডেলে লিখেছেন, 'সাংবাদিক হিসেবে আমি ২০০২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত অসংখ্য বড় ধরনের দুর্ঘটনা-দুর্যোগের ঘটনায় রিপোর্ট লিখেছি। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে বাংলাদেশে হতাহতের সংখ্যা গোপন করা কার্যত অসম্ভব। প্রাথমিকভাবে, কেউ নিখোঁজ থাকলে পরিবারগুলো সেটা রিপোর্ট করে। হাসপাতাল ও কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য জানায় এবং সেখান থেকে তারা তাদের প্রিয়জনদের খুঁজে পায়। এই ঘটনায় মাইলস্টোন কলেজ নিখোঁজদের সনাক্ত করার জন্য সেদিনের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির রেকর্ড ক্রস-রেফারেন্স করতে পারে।'

এখানে একটি কথা এখন অবধারিতভাবেই আসে আপনাদের পক্ষীয় লোকেরা এখনো যে বলে বেড়ান ২০১৩ সালের শাপলা চত্বর হামলায় কয়েক হাজার লাশ গোপন করেছিল তৎকালীন সরকার! এখন সেই বয়ানের তাহলে কী গতি হবে? যদিও হালের উপদেষ্টা এবং বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের প্রধান আদিলুর রহমান খান সেসময় ৬১ জন মৃতের তালিকা তৈরি করেছিলেন।

মোদ্দাকথা হলো রাষ্ট্র যারা চালান তাদেরকে কর্মনিষ্ঠা, সততা ও নৈতিকতায় জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। আপনাদের দায়সারা কাজ, ন্যূনতম খামখেয়ালিপনা, দায়িত্বজ্ঞানহীনতা, অদক্ষতা বা সমন্বয়হীনতা যদি আম পাবলিক ধরে ফেলে তাহলেই আপনাদের খেলা শেষ। ক্ষমতার পাদপ্রদীপে থাকবার নৈতিকতা হারিয়ে ফেলবেন।

দেখা গেল আগে রাজনৈতিক কারণে অন্যকে চাপে রাখতে গায়ের জোরে নিজেদের মনগড়া তথ্য ছড়ালেন, আবার ক্ষমতায় গিয়ে ওই একইরকম দুর্বিপাকে পড়ে বলে দিলেন মরদেহ গোপন করা সম্ভবপর না -এই কথাগুলো ঠিক বিশ্বাসযোগ্যতা পায় না। আপনাদের আগের কথা ও পরের কথা তো ঠিক থাকে না। এইজন্যই আমরা বলি তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা খুব জরুরি। অন্যথায় আপনাদের বিপদও কাটবে না।

UNESCO’র শিক্ষক প্রশিক্ষণ পাঠ্যক্রম (Media and Information Literacy Curriculum for Teachers) অনুযায়ী বস্তুনিষ্ঠতা বা Objectivity বলতে বোঝায়- প্রমাণভিত্তিক তথ্য উপস্থাপন, যেখানে ব্যক্তিগত মতামত সন্নিবেশ না করে, পাঠক বা দর্শককে নির্ভরযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতে নিজস্ব মত গঠনের সুযোগ দেওয়া হয়।

মাইলস্টোন ট্রাজেডিকে আর পাঁচটা সাধারণ ঘটনার সাথে মিলিয়ে হ্যান্ডেল করাটা ভুল হবে। এখানকার শত শত বিপদগ্রস্ত মানুষ এখন ইমোশনাল হয়ে পড়বেন -এটাই স্বাভাবিক। আবেগি মানুষে সাথে সামান্য ভুল আচরণও গণবিষ্ফোরণের কারণ হয়ে উঠতে পারে। কাজেই আমরা যেন এতটুকু ভুল কোথাও না করি। সামান্য মিল-অমিলও না দেখাই।

লেখক: সাংবাদিক 
২৩ জুলাই‌ ২০২৫

Comments

    Please login to post comment. Login