Posts

উপন্যাস

তোমার জন্য....(পর্ব - ৮৭)

July 24, 2025

Boros Marika

52
View

রুমের ভেতরে এক চাপা নীরবতা। জানালার পর্দা হালকা বাতাসে দুলছে। সূর্যের আলো একপাশ থেকে ধীরে ধীরে ঢুকে পড়ছে ঘরের কোণে।
আরিয়ান ধীরে ধীরে তৃষার দিকে এগিয়ে গেলো।

তৃষা জানালার দিকে মুখ ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখ দুটো লাল, কিন্তু চোখের কোণে জল আটকে রেখেছে—ভাঙতে দিচ্ছে না নিজেকে।

আরিয়ান নিচু গলায় বলল,
— “তৃষা… আমি এখনো তোমাকে ভালোবাসি।”

তৃষা কিছু বলল না। দাঁড়িয়ে থাকলো নিশ্চুপ। কিন্তু তার মন যেন কেঁপে উঠলো এই কথায়।

আরিয়ান আবার বলল, গলার স্বরটা এবার আরেকটু ভারী, যেন দীর্ঘদিনের বোঝা নামাতে চাইছে,
— “বিয়ের দিন রাতে আমি… আমি সত্যি ফেঁসে গিয়েছিলাম। আমি আসতে চেয়েছিলাম, তৃষা… বিশ্বাস করো। কিন্তু পারিনি… আমি একা ছিলাম না, আমাকে জোর করে আটকে রাখা হয়েছিল।”

তৃষা আস্তে আস্তে চোখ বন্ধ করলো। ঠোঁট কামড়ে ধরে নিজেকে শান্ত রাখছে। চোখের কোণ থেকে একটা ফোঁটা জল যেন জোর করে আটকানো।

আরিয়ান এবার আরেকটু সামনে গিয়ে বলল,
— “আমি একজনের সাথে একটা ব্যবসা শুরু করেছিলাম… শুরুতে কিছু বুঝিনি। সবকিছু স্বাভাবিক লাগছিল। কিন্তু পরে জানলাম—সে আসলে একজন কালো ব্যবসায়ী। তার ব্যবসার পেছনে ছিল অসৎ, অবৈধ কাজ।”

“আমাকে ধোঁকা দিয়ে কিছু কাজ করিয়ে নেয়। আর আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওদের ফাঁদে পড়ে যাই। আমি যখন বুঝি—সব দেরি হয়ে গেছে।”

আরিয়ান এবার গভীর নিশ্বাস নিয়ে বলল,
— “শেষবার একটা বড় ডেলিভারির কথা ওঠে… সেটা ঠিক হয় আমার বিয়ের রাতে। আমি তখন স্পষ্ট করে বলি—আমি করবো না। বিয়ের রাতে কিছুতেই না। কিন্তু তারা… তারা কৌশলে আমাকে তুলে নিয়ে যায়। চোখ বেঁধে, গাড়িতে… আমি জানতেই পারিনি কিভাবে কোথায় নিয়ে গেলো।”

তৃষা চোখ খুললো। ধীরে ধীরে মুখ ফিরিয়ে তাকালো আরিয়ানের দিকে। চোখে কষ্ট, রাগ, প্রশ্ন—সব একসাথে জমে আছে।

আরিয়ান আবার বললো, এবার চোখে অনুরোধের ছায়া,
— “তারা বলেছিল—আমি যদি কাজটা না করি, তাহলে তোমাকে… আমার পরিবারকে ক্ষতি করবে। আমি… আমি আর কিছু ভাবতে পারিনি তৃষা। তখন আমি শুধু চেয়েছিলাম, তুমি যেন নিরাপদ থাকো।”

তৃষা এবার নিচু গলায় জিজ্ঞেস করলো,
— “তুমি কি পারতে না আমাকে জানাতে? একটাও বার্তা? একটাও ফোন?”

আরিয়ান মাথা নিচু করে বললো,
— “তাদের নজরদারিতে ছিলাম। ফোন আমার কাছে ছিল না। আমি কিছুই করতে পারিনি, তৃষা… আমি বারবার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা ভয় দেখিয়েছে। বলেছে, তুমি যদি জানো, তোমাকেই আগে টার্গেট করবে।”

তৃষা এবার একটু সরে এসে বসলো সোফায়। চোখে অশ্রু ঝলমল করছে। সে কিছু বলছে না, শুধু নিঃশব্দে কাঁপছে।

আরিয়ান আস্তে আস্তে পাশে বসে বললো,
— “আমি আজও সেই রাতে তোমার মুখটা দেখতে না পারার কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছি তৃষা। আমি হারাইনি তোমাকে… হারিয়েছি আমার সবচেয়ে বড় আশ্রয়, আমার ভালোবাসা।”

রুমের বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। সেই নিঃশব্দ কান্নার শব্দ, আর আরিয়ানের তীব্র অনুশোচনা—এই দুইয়ে রুম ভরে উঠলো।

আরিয়ান বললো, আমি তোমাকে আবার পেতে চাই। সারা জীবনের জন্য আমার করে নিতে চাই তোমাকে.......

চলবে......
 


 

Comments

    Please login to post comment. Login