মিস্টার আমান নিজেকে সামলে নিয়ে একটু কৃত্রিম হাসি এনে বললেন,
— “চলুন সবাই টেবিলে আসুন, খেয়ে নেওয়া যাক।”
আরিয়ান তখনই চেয়ার সরিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো, মুখে দারুণ আনন্দ,
— “অবশ্যই! খুব ক্ষুধা লেগেছে। আপনার দাদির নির্দেশেই নিশ্চয় এত সুন্দর আয়োজন!”
টেবিলে আস্তে আস্তে সবাই জায়গা নিলো।
টেবিলজুড়ে ছিল বিভিন্ন পদ—পোলাও, রোস্ট, গ্রিলড মাছ, কাবাব, দই বড়া, মিষ্টান্ন, আর রকমারি সালাদ।
হেনা একটু লজ্জা ও অস্বস্তি নিয়ে এসে টেবিলের এক কোণে বসলো।
তৃষা ও বসলো তার জায়গায়, তবে মুখে এক অদ্ভুত চিন্তার রেখা স্পষ্ট ছিল।
খাওয়া দাওয়া শুরু হতেই এক মুহূর্তে হেনা ও তৃষা একসাথে কেশে উঠলো।
টেবিলের পরিবেশ এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেলো।
আরিয়ান সঙ্গে সঙ্গে পানির গ্লাস তুলে হেনার দিকে এগিয়ে দিলো।
মিস্টার আমান একইভাবে পানির গ্লাস এগিয়ে দিলেন তৃষার দিকে।
তৃষা চুপচাপ হেনার দিকে তাকিয়ে রইলো।
তার চোখে ধরা পড়লো আরিয়ানের চেহারায় হেনার প্রতি এক ধরণের যত্ন আর মমতা,
যা এতটা স্পষ্ট ছিল যে, অজান্তেই তৃষার বুকটা ধক করে উঠলো।
মিস্টার আমানও তা লক্ষ্য করলেন।
তার চোখের দৃষ্টি একবার তৃষার দিকে, তারপর আরিয়ানের দিকে—
সব কিছু যেন তার অভিজ্ঞ দৃষ্টিতে স্পষ্ট হয়ে উঠছিল।
আরিয়ান তখন হেনার দিকে ফিরে খাবার তুলে দিচ্ছিলো প্লেটে,
— “এইটা খাও, খুব হালকা, তোমার শরীরেও সমস্যা হবে না।”
তার কণ্ঠে ছিল এক ধরণের কোমলতা, যা সবার কানে না গেলেও তৃষা ঠিকই শুনেছিল।
খাওয়া শেষ হলে সবাই বসার ঘরে এসে বসলো।
আলাপচারিতা চলছিল, কিন্তু তৃষা একরকম চুপচাপ।
হেনাও অনেকটা নীরব।
এই সময় মিস্টার আমান মুখ খুললেন,
— “আজই ফিরবো শহরে। অফিসের কিছু কাজ আছে। তবে…”
তিনি একটু থামলেন,
— “মিস হেনা তো এখানেই থাকবেন। বাংলোতে ওর থাকা–খাওয়া সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে।”
আরিয়ান সঙ্গে সঙ্গে বললো,
— “আপনারা কিছু মনে না করলে, আমি হেনার সাথে একটু আলাদা কথা বলতে চাই।”
সবাই চুপ।
তৃষা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো আরিয়ানের মুখের দিকে।
তার চোখে ধরা পড়লো কিছু অচেনা—হয়তো অধিকার, হয়তো সন্দেহ… হয়তো গভীর কষ্ট।
হেনা ধীরে উঠে দাঁড়ালো, মুখ নিচু।
আরিয়ান হালকা মাথা নাড়লো,
— “চলো।”
দুজন রুমের দিকে পা বাড়ালো।
তৃষা কেবল বসে রইলো, চোখে এক অদ্ভুত প্রশ্ন—
এই কী সেই আরিয়ান, যে তার জন্য আজকালও চোখে জল এনেছিল?
মিস্টার আমান আর কিছু বললেন না।
তবে তিনি জানতেন, আজকে এই বাংলোতে কিছু একটা বদলাচ্ছে—
একটা সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে, আর একটা হয়তো চিরতরে বদলে যাচ্ছে।
চলবে......