তৃষা ধীরে পেছনের গার্ডেনে হেঁটে এসে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল।
মনের মধ্যে ঘূর্ণায়মান এক অজানা অনুভূতি।
মিস্টার আমান পাশে এসে দাঁড়াতেই তৃষা আস্তে বললো,
— “আমি কি ভুল করছি, মিস্টার আমান?”
মিস্টার আমান একটু চমকে তাকালেন,
— “কেন বলছো এমন কথা?”
তৃষা চোখ নামিয়ে বললো,
— “আরিয়ান আমাকে সব বলেছে। ওর জীবনে কি ঘটেছিল… ও কেনো আমার বিয়ের রাতে আসতে পারেনি।
ও বলছে আমাকে এখনো ভালোবাসে।
কিন্তু আপনি দেখেছেন… হেনার সাথে ওর আচরণ অন্যরকম। ওর চোখে এক ধরণের টান, যেটা আমি আগে কখনও দেখিনি।”
মিস্টার আমান চোখ নামিয়ে বললেন,
— “তৃষা, বিয়ের রাতে আমি তোমাকে কথা দিয়েছিলাম—তোমার ইচ্ছাই আমার কাছে প্রথমে।
তুমি যদি চাও ফিরে যেতে, আমি কোনো বাধা হবো না।
আমি চাই না তুমি কোনো কষ্টে থাকো, কিন্তু এটাও চাই না তুমি আবার ভুল করো।
এই সিদ্ধান্ত শুধুই তোমার।”
তৃষা চুপ রইলো। মনের ভেতর দ্বন্দ্ব।
ভালবাসা, বিশ্বাস আর একরাশ অস্পষ্ট ব্যথা সব মিলে এক জটিল মোচড় যেন বুকের ভেতর।
---
ওদিকে হেনাকে নিয়ে আরিয়ান রুমে ঢুকেছে।
রুমের দরজা বন্ধ হতেই হেনা একটু কুঁকড়ে গেলো, যেন ভয় বা সংকোচে নয়, বরং পুরনো কিছু ফিরে আসার আশঙ্কায়।
আরিয়ান আলতো গলায় বললো,
— “তুই এখানে থাকতে পারবি তো? আমি তোকে নিরাপদ একটা জায়গা খুঁজে দেবো।
কিন্তু এখানেও কোনো সমস্যা হবে না, মিস্টার আমান ভালো মানুষ।
তোর জন্য আমি চিন্তায় থাকি হেনা… জানিস তো?”
হেনা কোনো কথা বললো না।
চোখ নামিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।
আরিয়ান আর চুপ থাকতে পারলো না, হালকা বিরক্তির সাথে বললো,
— “তুই এমন করে চুপ থাকিস কেন হেনা? আমি তোর জন্য ভাবি, ব্যস্ত থাকি, তোকে বাঁচাতে যা করার সব করি—
আর তুই… কিছুই বলিস না।”
হেনার চোখে পানি চলে এলো।
মন চাচ্ছিল এই মানুষটার বুকে মুখ লুকিয়ে অঝোরে কাঁদতে।
কিন্তু ঠোঁট নড়লো না।
আরিয়ান বললো,
— “এই ফোনটা রাখ, তোর তো নিজের কিছু নেই।
এখানে শুধু আমার নাম্বার সেভ করা আছে।
যদি কিছু হয়… একটু কষ্টেও যদি পড়িস… আমাকে কল দিবি।
আমি আসবো, তুই জানিস।”
হেনা আস্তে মাথা নাড়ালো।
আরিয়ান হেসে বললো,
— “আজ আমি অনেক খুশি। তৃষা সব বুঝে নিয়েছে।
আমরা এক হবো… আমি নতুন করে সব শুরু করবো।”
আর শোন আমি চাই না তোর সত্যিটা কখনও তৃষা জানুক। তাই সাবধানে থাকবি, কথাও বলবি বুঝে শুনে। আর ওই সব এক দিনের কথা ভুলে যাবি।জানিস তো একটা ভুল ছিল।
হেনা যেনো স্থির হয়ে গেলো।
আরিয়ানের কণ্ঠে উচ্ছ্বাস, ভবিষ্যতের স্বপ্ন—
কিন্তু হেনার বুকে সে এক চেপে রাখা কান্না।
যে সত্যটা আরিয়ান “ভুল” বলে মুছে ফেলতে চায়,
সেই রাতটা, সেই প্রথম ছোঁয়া, সেই নিরাশ্রয় অথচ গভীর অনুভব—
সব কিছু এখন “গোপন”।
আরিয়ান আস্তে পা বাড়িয়ে দরজার দিকে যেতে লাগলো।
ঠিক তখনই হেনা ঠোঁট ভিজিয়ে ডেকে উঠলো,
— “আরিয়ান বাবু!”
আরিয়ান থেমে পেছন ফিরে তাকালো।
হেনার চোখ দুটো জলের ভেতরেও স্থির।
হেনা বললো,
— “আমি এখন থেকে ভালোভাবে বাঁচতে চাই।
নিজের মতো করে… নিজের অস্তিত্ব নিয়ে।
আপনার কাছে কৃতজ্ঞ আমি…
কিন্তু এবার নিজেকে গড়ে তুলতে চাই।”
আরিয়ান কিছু বললো না।
চুপ করে তাকিয়ে থাকলো শুধু।
তার চোখে যেনো এক অজানা হাহাকার—
একদিকে তৃষার কাছে ফিরে যাওয়ার খুশি,
অন্যদিকে হেনার চোখে এক গভীর ভালোবাসার আভা—
যেটা সে বুঝে উঠতে পারেনি, কিংবা বুঝেও উপেক্ষা করেছে।
রুমে নেমে এলো নিঃশব্দতা।
একটুও বাতাস নড়ল না যেনো।
তবে হেনার চোখে প্রথমবারের মতো এক দৃঢ়তা…
একটা নিজস্ব সিদ্ধান্তের আগুন।
চলবে......