Posts

গল্প

লালসা পর্ব- ২

July 26, 2025

Fijon Qurayish

Original Author ফিজন কোরাইশ

64
View

পর্ব ২: পাপের পালা

ঢাকার ব্যস্ত জীবন, গাড়ির শব্দ আর শহরের কোলাহলের মাঝে হাশেমের নতুন পরিচয় গড়ে উঠেছে—‘মোস্তফা ভাই’। এখন সে আর শুধু ডেলিভারি ম্যান নয়, পুরো একটি চেইনের দায়িত্বে আছে। তার অধীনে ৭-৮ জন লোক কাজ করে। সবাই তার কথায় চলে। সে এখন লিডার। অথচ কয়েক বছর আগেও সে ছিল এক দরিদ্র গ্রাম্য ছেলে।

সেই গ্রামের কথা এখন তার খুব কমই মনে পড়ে। বাবা মারা গেছেন অনেক আগেই, মা এখন তার বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন—কিন্তু আগের মতো হাশেমের চোখে শান্তি নেই।

একদিন কাসেম ভাই তাকে ডেকে বললেন,
“শোন হাশেম, এবার তোর জন্য একটা বড় কাজ আছে। মালটা এইবার শুধু সোনা না, একটু আলাদা। সাবধানে চলতে হবে।”

হাশেম জানতে চাইল,
“কী ধরনের মাল?”

কাসেম ভাই হেসে বললেন,
“তোর জানার দরকার নাই। তুই শুধু ডেলিভারির দেখাশোনা কর, বাকিটা আমি সামলাব।”

তবে হাশেম এবার একটু সন্দেহে পড়ে গেল।
সে খেয়াল করল—এইবার প্যাকেটগুলো আগের চেয়ে আলাদা। কিছু কিছু অনেক ভারী, আবার কিছু প্যাকেট কখনো কখনো পঁচা গন্ধ ছড়ায়।

সে ভয়ে পড়ে যায়। এক রাতে গোপনে এক প্যাকেট খুলে দেখে—ভেতরে কী আছে।

ভেতরে ছিল—
একটি প্যাকেটের মাঝে ভিজে কাপড়, রক্ত লেগে থাকা কিছু বস্তু। দেখে বোঝা যায় এটা কোনো মানবদেহের অঙ্গ!

হাশেম ভয়ে চিৎকার করছিল, কিন্তু গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোয় না।

সে বুঝতে পারে, সে এমন এক জগতে ঢুকে গেছে, যেখান থেকে বেরিয়ে আসা অসম্ভব। এখন শুধু সোনা না—মানব অঙ্গ পাচার, অবৈধ মাদক, এমনকি নারী পাচার—সব কিছুই চলছে এই চক্রে।

একদিন হঠাৎ তার দল থেকে একজন ধরা পড়ে। র‍্যাবের হাতে তার মোবাইল যায়। মোবাইলে পাওয়া যায় বেশ কিছু রেকর্ডিং, যার মধ্যে হাশেমের কণ্ঠও আছে।

কিছুদিন পরে হাশেমের কাছে আসে এক কালো গাড়ি। গাড়ি থেকে নামে দুজন। তারা বলে,
“তোমার কথা আমাদের কানে এসেছে। তুমি বেশি জানতে শুরু করেছো, সেটা ভালো না।”

তারা হাশেমকে ‘চুপ’ করে থাকতে বলে, না হলে মাকে ‘দূর্ঘটনায়’ মারা যাবে। হাশেম কাঁপতে থাকে।

তারপরের দিন থেকেই হাশেম পুরোপুরি কাসেম ভাইয়ের দাসে পরিণত হয়।

সে নিজেকে বলে,
“এখন আর ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। আমি অনেক দূর চলে এসেছি।”

কিন্তু তার ভেতরে আরেকটা কণ্ঠ বারবার বলে,
“তুই শয়তানের চাকর হয়েছিস! কিন্তু এখনো সময় আছে... পালিয়ে যা!”

এই দ্বন্দ্বের মাঝে সে জড়িয়ে পড়ে এক ভয়ংকর চক্রে, যেখানে সে বাধ্য হয়ে নিজের এক ছোটবেলার বন্ধুকেও ফাঁদে ফেলে দেয়। বন্ধু নাহিদ ছিল একমাত্র মানুষ যে হাশেমকে ‘ভাই’ বলে বিশ্বাস করত।

কিন্তু হাশেম নিজের প্রাণ বাঁচাতে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।

সে রাতে হাশেম আর ঘুমাতে পারে না। আয়নায় তাকিয়ে দেখে তার মুখটা আগের মতো নয়—চোখে লালসা, মুখে ক্লান্তি আর হাতে রক্ত।

সে ভাবে,
“এভাবেই চলবে? আমি কি আর কখনো মুক্তি পাবো না?”

Comments

    Please login to post comment. Login