Posts

গল্প

লালসা পর্ব- ৩

July 26, 2025

Fijon Qurayish

Original Author ফিজন কোরাইশ

58
View

পর্ব ৩: পাপ থেকে পালানো যায়? ( শেষ পর্ব )

রাতের ঢাকায় চারদিকে গাড়ির শব্দ, মানুষজনের চেঁচামেচি, আর ফ্ল্যাটবাড়িগুলোর জানালায় আলো জ্বলছে—কিন্তু হাশেমের চোখে এখন কিছুই নেই।
সে বসে আছে নিজের ফ্ল্যাটের ড্রইং রুমে, পাশে ছড়ানো কিছু খোলা ফাইল, রক্তমাখা একটা মোবাইল ফোন, আর টেবিলের ওপরে একটি ছোট রিভলভার।

গত রাতে সে এমন কিছু জেনে গেছে, যেটা তার আত্মাকে ভিতর থেকে ভেঙে দিয়েছে।

তার মাকে কাসেম ভাইয়ের লোকেরা ‘অসুস্থতার অভিনয় করে’ নিয়ে গেছে বিদেশি হাসপাতালে। বলা হয়েছে ভালো চিকিৎসা হবে। কিন্তু হাশেম জেনেছে, মা এখনো সেই হাসপাতালে পৌঁছায়নি—মা এখন কোথায় আছে, সেটা সে জানে না।

কাসেম ভাই তাকে ফাঁদে ফেলেছে।

হাশেম বুঝে গেছে, এখন সে শুধুই একটা মরার মতো জীবন্ত দেহ। আর পেছনে পালানোর কোনো রাস্তা নেই—শুধু সামনে অন্ধকার।

কিন্তু একটা ছোট আশার আলো তখনও বেঁচে ছিল।

তার বন্ধু নাহিদ, যে আগে তার দ্বারা ধরা পড়েছিল, সে জেল থেকে বের হয়ে যায় জামিনে। আর সেই নাহিদই হাশেমের কাছে গোপনে আসে।
সে বলে,
“তুই এখনো চাইলে পালাতে পারিস। আমি তোর জন্য একটা রাস্তা খুলে রেখেছি। শুধু সাহস করতে হবে।”

হাশেম অবাক হয়ে বলে,
“তুই এখনো আমাকে বিশ্বাস করিস?”
নাহিদ বলে,
“তোকে না, তোর ভেতরের সেই পুরনো হাশেমকে বিশ্বাস করি—যে কখনো মিথ্যা বলত না।”

এই কথাটা হাশেমের হৃদয়ে বাজে। সে ভাবে—
“আমি কি সত্যিই পালাতে পারি? আমি কি আবার নতুনভাবে শুরু করতে পারি?”

সে সিদ্ধান্ত নেয়, এবার পালাবে। একরাতেই সবকিছু গুটিয়ে চলে যাবে বিদেশে।
নাহিদের সাহায্যে সে পাসপোর্ট, টাকা, সব কিছু গোপনে জোগাড় করে।

কিন্তু দুনিয়া সহজ না।

যেদিন সে ফ্ল্যাট থেকে বেরোবে, সেদিনই তার ফ্ল্যাটের নিচে কালো গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে।
কাসেম ভাই ফোন দেয়:
“তুই ভাবছিস পালিয়ে যাবি? হাশেম, কেউ এই দুনিয়া থেকে পালায় না। যারা পালাতে চায়, তাদের আমরা সরিয়ে দিই।”

হাশেম তখন ভয় পায় না। সে এবার জানে—যদি আজ না পালায়, তাহলে আর কোনোদিন না।

সে নাহিদের গাড়িতে চড়ে এয়ারপোর্টের দিকে রওনা দেয়।

পেছনে কাসেম ভাইয়ের লোকজন তাড়া করে।

সেদিন শহরের রাস্তা ভরে যায় ধাওয়া আর গুলির শব্দে।

নাহিদের গাড়ি র‍্যাব চেকপোস্টে পৌঁছায়। র‍্যাব গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি করে।

হাশেম এবার আর লুকায় না।

সে বলে,
“আমি একটা আন্তর্জাতিক চক্রের সদস্য ছিলাম। আমি আত্মসমর্পণ করতে চাই। আমি সব বলব। শুধু আমার মাকে বাঁচান।”

এই স্বীকারোক্তির পর শুরু হয় নতুন অধ্যায়।

৬ মাস পর..

হাশেম এখন র‍্যাবের হেফাজতে, সাক্ষী হিসেবে রাখা হয়েছে। কাসেম ভাই ধরা পড়েছে, তার পুরো চক্র ধ্বংস হয়ে গেছে।

হাশেম মায়ের সন্ধান পেয়েছে। মা এখন সুস্থ, গ্রামের বাড়িতে থাকেন।

শেষ দৃশ্যে:
হাশেম এক মাদ্রাসায় শিশুদের পড়াচ্ছে—‘সততা’, ‘আত্মসম্মান’ আর ‘লোভ থেকে বাঁচা’র শিক্ষা।

একটি ছেলে প্রশ্ন করে,
“স্যার, আপনি আগে কী করতেন?”

হাশেম হেসে বলে,
“আমি একটা ভুল করেছিলাম। কিন্তু সেখান থেকে শিক্ষা নিয়েছি। জীবন সবসময় একটা দ্বিতীয় সুযোগ দেয়—যদি তুমি সত্যিই চাও পালাতে... পাপ থেকে।”

Comments

    Please login to post comment. Login