Posts

গল্প

শুকনো গোলাপ দ্বিতীয় পর্ব

July 26, 2025

Mst Mukta

229
View

দ্বিতীয় পর্ব 

তানিশা প্রতিদিনের মতো আজোও বাড়ি ফিরেই  চলে গেলো বারান্দায় , কিন্তু আজ তো গোলাপ আর চিরকুট কেউ রেখে যায় নি... কি হলো বিষয় টা...? চিন্তিত আর মনমরা হয়ে ঘরে বসে রইলো। বিকেলে ছাদে গেল খোলা হাওয়ায় নিজেকে রিফ্রেশ করতে কিন্তু কিছুতেই মন থেকে এই বিষয় টা মুছতে পারছে না। কে ছিলো এই গোলাপ চিরকুট দাতা..?  কেন  বার বার অচেনা অজানা কারো জন্য মন খারাপ হচ্ছে..? ছেলে না মেয়ে এটাও জানা নেই তবুও মনের ভেতর টা হু হু করছে। অন্য দিনের চেয়ে কিছুটা গম্ভীর হয়ে ছাদ থেকে ঘরে চলে গেলো। সন্ধ্যার পর ছোট ভাইয়ের সাথে বিভিন্ন কথার মাঝে তানিশা জানতে পারে আজ যে দুর্ঘটনা ঘটেছে ঐ বাইকওয়ালা ছেলে টা দেখতে অনেক সুন্দর ছিলো। ইস কি বাজে ভাবে দুর্ঘটনা ঘটে গেলো। এখন  ছেলেটা বেঁচে ফিরলে হয়। তানিশা বিষয়টাকে খুব একটা গুরুত্ব দেয় না। ওর মন এখন বারান্দার না পাওয়া গোলাপ চিরকুটে আটকে আছে। যেন এক অজানা বিরহ মন কে বার বার আঘাত করছে। গত দুদিন মনমরা হয়েই বাড়িতে থাকলো। নতুন সপ্তাহ শুরু হয়ে গেলো। কলেজ বাসা এভাবেই শেষ হলো সপ্তাহ। আজ আবারো ফিরে এলো সেই কাঙ্ক্ষিত বৃহস্পতিবার। তানিশার খুব তাড়া বাড়ী ফেরার। রাস্তা যেনো কমছেই না। মাত্র তো বিশ মিনিটের পথ তবু্ও মনে হচ্ছে যেনো হাজার মাইল দূরে বাড়ীর পথ টা। যতো দূরত্ব কমছে ততোই যেন হৃদয়ের কম্পন বাড়ছে। বাড়ী ফিরে  বারান্দায় কি গোলাপ পাওয়া যাবে..?  নাকি...?  নাহ আর ভাবতে চাইলো না তানিশা। আগে তো বাড়ি ফেরা হোক তারপর দেখা যাক কি হয়..? অনেক তাড়াহুড়ো করেই ঘরে ঢুকলো তানিশা একবুক আশা নিয়ে ছুটে গেল বারান্দায়..  কিন্তু একরাশ হতাশা নিয়ে ঘরে ফিরতে হলো। আজও কেউ রেখে যায় নি গোলাপ আর চিরকুট। এভাবে কেটে গেলো এগারো সপ্তাহ। এখন আর বারা্ন্দায় খুব একটা যাওয়া-আসা করা হয় না। বারান্দায় আসলে মনের ভেতর কেমন একটা ব্যাথা অনুভব করে। এখন আর বৃহস্পতিবার আগ্রহ নিয়ে বাড়ী ফেরা হয় না। তানিশার কাছে থাকা একুশ টি  শুকনো গোলাপ আর চিরকুট গুলো এখন প্রায় প্রতিদিনই দেখে আর ভাবে..  কে ছিলো..?  কেন এলো আমার জীবনে ..?  আর কেন ই বা আবার হারিয়ে গেলো..?  এই প্রশ্ন গুলোর কোনো উত্তর নেই তবুও মনের অজান্তেই মুখে চলে আসে। বুকভরা একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। আজকে ওদের বাড়ীতে মেহমান এসেছে। খালা, মামা, কাজিন সহ আরো অনেকেই। তানিশা শুকনো গোলাপ রাখা ড্রয়ার টা তালাবদ্ধ করে রাখলো। এই অজানা সত্য সবার অজানাই থাকুক। জানাজানি হলে ঝামেলা আছে। মেহমান এসেছিলো সোমবার। অনেক হইচই আর আনন্দ উল্লাসে এ কদিন ভালোই কাটলো সবার আজ শুক্রবার। মেহমান চলে যাবে কিন্তু সাথে নিয়ে যাবে তানিশাকেও। সবাই জোর করায় আর না বললো না কিছুদিনের জন্য বেড়াতে চলে গেলো নানুবাড়ী। সেখান থেকে কলেজও করা যাবে। আজ নয় দিন পর তানিশা নিজের বাড়ী ফিরে এসেছে। ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া শেষ করে ঘুমিয়ে পড়ে। প্রতিদিনের মতো কলেজে থেকে ফিরে বারান্দায় টাওয়েল রাখতে গিয়ে হঠাৎ চোখে পড়ে গোলাপ আর চিরকুট!  যদিও  চার দিনে গোলাপ টা বারান্দার ফুল গাছের টবের পাশে শুকিয়ে পড়ে ছিলো তবুও গোলাপ তো পাওয়া গেছে। আর চিরকুটে সেই অচেনা মানুষের চেনা হাতের লেখা " এই যে নাম না মেয়ে আপনি কি আমাকে ভুলে গেছেন..?" তানিশা কি করবে বা কি বলবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। মনটা খুশীতে নাচানাচি করছে।  কাউকে কিছু বলতে পারছে না। এতোদিন পর আবার গোলাপ পেয়ে কি যে ভালো লাগছে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছে না। তাহলে কি এখন থেকে বৃহস্পতিবার গোলাপ আর চিরকুট পাবো...?  কিন্তু এতোদিন কোথায় ছিলো  এই গোলাপ কুমার বা যাই হোক। আনন্দের মাঝেও কিছুটা অভিমান হলো তার। একটা আইডিয়া মাথায় এলো। এই বৃহস্পতিবার তানিশা কলেজে যাবার আগে নিজেই একটা চিরকুট রেখে গেলো টবের পাশে। তাতে লেখা ছিলো ,  এতোদিন কোথায় ছিলেন আপনি...?
দুপুরে কলেজ থেকে ফিরে বারান্দায় এসে গোলাপ আর চিরকুট নয় চিঠি  পেলো । অনেক কৌতুহল নিয়ে চিঠি টা খুলে পড়া শেষ করে তানিশার মাথায় যেনো ঝিমঝিম করতে লাগলো। বিছানায় শুয়ে পড়লো। এটা কি পড়লো তানিশা!

Comments

    Please login to post comment. Login