Posts

নন ফিকশন

রাশিয়া ও ইরানের মাঝে নতুন কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি - ২০২৫

July 27, 2025

মো; আহসান-উজ-জামান

85
View
What does the Russia-Iran strategic partnership treaty encompass? - Tehran  Times

২০২৫ সালের ১৭ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মাসউদ পেজেশকিয়ান রাশিয়া ও ইরানের মাঝে একটি ‘কম্প্রিহেনসিভ স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ ট্রিটি’ (ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি) স্বাক্ষর করেন। উদ্দেশ্য, দুই দেশের সম্পর্কের গভীরতা বৃদ্ধি, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার চাপ এড়ানো এবং ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ সংরক্ষণ।

চুক্তির মূল বিষয়ঃ


১. সামরিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা:

সামরিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা - যার মধ্যে রয়েছে যৌথ মহড়া, প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্র স্থানান্তর। ২০২২ সালে ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকে ইরান রাশিয়াকে ৬,০০০ শাহেদ ড্রোন এবং ফাতেহ-১১০ ব্যালিস্টিক মিসাইল সরবরাহ করেছে। রাশিয়া ইরানকে সু-৩৫ যুদ্ধবিমান, মি-২৮ হেলিকপ্টার এবং ইয়াক-১৩০ প্রশিক্ষণ বিমান দিয়েছে। ২০২১ সালের সাইবার প্রতিরক্ষা চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়া আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং সাইবার নিরাপত্তায় সহযোগিতা বাড়িয়েছে। ২০১৫ সালে সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদকে সমর্থন করার জন্য রাশিয়া ইরানের সাথে সম্পর্ক জোরদার করে। তবে রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার ২০২৪ চুক্তির মত এই চুক্তিতে পারস্পরিক প্রতিরক্ষা প্রতিশ্রুতি নেই, যার অর্থ ইসরায়েল ও উপসাগরীয় দেশগুলির সাথে রাশিয়া ভারসাম্যমূলক সম্পর্ক বজায় রাখার কৌশল নিয়েছে।

২. অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতা:

চুক্তি অনুযায়ী বাণিজ্য, জ্বালানি সহযোগিতা এবং নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্য সমন্বিত পেমেন্ট সিস্টেম (রাশিয়ার মির এবং ইরানের শেতাব) এবং স্বর্ণ-ভিত্তিক লেনদেনকে উৎসাহিত করবে। ২০২৫ সালে রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন ইউরেশীয় ইকোনমিক ইউনিয়নের সাথে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি ৯০% পণ্যের উপর শুল্ক কমায়। মূল প্রকল্প ‘ইন্টারন্যাশনাল নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডর’ (INSTC) ভারত থেকে ইউরোপ পর্যন্ত ইরান ও রাশিয়ার মাধ্যমে বাণিজ্য বাড়ানোর লক্ষ্য রাখে যাতে বছরে ১৫ মিলিয়ন টন পণ্য পরিবহনের সম্ভাবনা রয়েছে। জ্বালানি সহযোগিতায় ইরানের তেল ও গ্যাস ক্ষেত্রে রাশিয়ার বিনিয়োগ এবং গ্যাজপ্রমের সাথে গ্যাস ট্রানজিট চুক্তি অন্তর্ভুক্ত। তবে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বছরে ৪-৫ বিলিয়ন ডলারের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, যা তুরস্ক বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে রাশিয়ার সম্পর্কের তুলনায় কম, যার মূল কারণ হচ্ছে ইরানের অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতা এবং প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা। যার জন্য ২০২৩ সালে বাণিজ্য লক্ষ্যের তুলনায় ১৭.৩% হ্রাস পায়, এবং অপরদিকে রাশিয়ার পূর্বের বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতিও (যেমন, ৪০ বিলিয়ন ডলার গ্যাসে) পূরণ করা সম্ভব হয়নি।

৩. রাজনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক সমন্বয়:

দুই দেশই পশ্চিমা “বৈশ্বিক আধিপত্যের” বিরোধিতা করে এবং বহুমুখী (মাল্টিপোলার) বিশ্ব ব্যবস্থার পক্ষে। চুক্তিটি সার্বভৌমত্ব, একতরফা নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা এবং BRICS ও শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার মতো ফোরামে সমন্বয়ের উপর জোর দেয়। ২০২২ সালের পর ইউক্রেন সংকট এবং আসাদের পতনের পর ইরানের প্রয়োজনীয়তা এই অংশীদারিত্বকে ত্বরান্বিত করে। ২০২৫ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের আগে চুক্তি স্বাক্ষরের সময় নির্ধারণ মার্কিন চাপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ইঙ্গিত দেয়।

রাশিয়া উক্ত চুক্তির অধীনে ইরানের তিনটি উপগ্রহ (কোসার, হোধোদ, নাহিদ-২) উৎক্ষেপণ করেছে। পরিবেশ পর্যবেক্ষণ ও দুর্গম এলাকায় যোগাযোগের জন্য কোসার ও হোধোদ (৫ নভেম্বর ২০২৪) ইরানের বেসরকারি *ওমিদ ফাজা কোম্পানি* দ্বারা নির্মিত। আর নাহিদ-২ (২৫ জুলাই ২০২৫) তৈরি করেছে ইরানের মহাকাশ সংস্থা, যার উদ্দেশ্য টেলিযোগাযোগ। ইরান দাবি করেছে উপগ্রহগুলো বেসামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হবে, তবে পশ্চিমা বিশ্লেষকরা আশংকা করছেন এর ফলে ইরানের মিসাইল টার্গেটিং সিস্টেমের সক্ষমতাও বাড়বে।

Iranian Satellite to Launch Friday Aboard Russian Soyuz - Space/Science  news - Tasnim News Agency

Comments

    Please login to post comment. Login